স্টাফ রিপোর্টারঃ
নগরের সড়কগুলোর ওপর দিয়ে সারা দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করায় সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরের ওপরও বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
রোববার (২৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রশাসক এ মন্তব্য করেন।
সুজন বলেন, বন্দরের সড়কে বিশালাকৃতির গাড়িগুলো অলস পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজট থেকে মুক্ত রাখতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে আমি সাবেক মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে ছিলাম। এ বন্দরের সঙ্গে নগরবাসীর স্বার্থ জড়িত।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম যেহেতু বন্দরনগরী।
এ বন্দরকেই নগরের লালন এবং উন্নতমানের শহরে রূপান্তর করতে ভূমিকা রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
এটা অনস্বীকার্য যে একটা দেশের কাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের জন্য সমুদ্রবন্দর পূবশর্ত। যার মাধ্যমেই দেশের মূলতঃ সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটে। যে দেশের কোনো সমুদ্রবন্দর নেই সেই দেশকে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হতে হয় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। বেশিরভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য তারা পুরোপুরি অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকে। প্রকৃতপক্ষে, একটি দেশের সুষম ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সমুদ্রবন্দরের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ সমুদ্রবন্দরকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমান সরকার প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের মতো অর্থনৈতিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। তাই বর্তমান সময়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে ত্বরান্বিত হচ্ছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং এর মধ্য দিয়েই সঞ্চালিত হয় দেশের অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি। দেশের মোট রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৭৫ ভাগ সংঘটিত হয় চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে।
তিনি বলেন, আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষের বসবাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে একটি মাতৃসদন কিংবা জেনারেল হাসপাতাল নেই। আমাদের এ অঞ্চলের মায়েদের কথা চিন্তা করে এখানে একটি মাতৃসদন হাসপাতাল করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
বন্দর চেয়ারম্যান চসিক প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জাতির অস্তিত্বের মতো। বন্দরের সক্ষমতাবৃদ্ধি বে-টর্মিনাল বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং অব্যাহত রাখা, পতেঙ্গা ও লালদিয়ার চরের টার্মিনাল নির্মাণ, পোর্ট লেবার কলোনিতে টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রাজাখাল ও মহেষখাল ড্রেজিং করা, মহেষখালে পাম্প হাউসসহ স্লুইচগেট নির্মাণ করার বিষয়টিও এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, আনোয়ারা, ফেনী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন চালু হলে এবং কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মিত হলে বন্দরের বহুমাত্রিক ব্যবহার বাড়বে। সে বিষয়টিকে আমলে এনে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।
পরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চসিক প্রশাসকের হাতে বন্দরের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট তুলে দেন। সাক্ষাৎকালে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, প্রকৌশলী কমডোর নিয়ামুল হাসান, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান, উপ-ব্যবস্থাপক(ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ সভাপতি আবুল মনছুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।