পটিয়া প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন সেচ প্রকল্পের আওতায় খাল পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী বলেছে, খাল খনন করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিনা নোটিশে মানুষের কৃষিজমি, গাছপালা ও বসতঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি পটিয়ার বড়লিয়া ইউনিয়নের বেলখাইন এলাকায় গরুলুটা খাল পুনঃখননের সময় স্থানীয়দের গাছপালা কেটে জমি নিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষে দিদারুল আলম, পুলক বিশ্বাস, আবদুল সালাম, অর্পণ বিশ্বাস, আহমদ ছফা, তাপস বড়ুয়া ও জসিম উদ্দিন লিখিত অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে।
এরপর এলাকাবাসীর পক্ষে দিদারুল আলম ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। ওই দিনই শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত বেঞ্চ ৩০ দিনের মধ্যে সরকারি বিধি মেনে পিটিশন নিষ্পত্তি করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতে রিটকারী বেলখাইন এলাকার বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতে পিটিশনের পরও আমরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে বেলখাইন গ্রামে গরুলুটা খাল প্রকল্প পরিদর্শনে যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী।
তিনি আমাদের জমির গাছপালা না কাটায় বিষোদগার করেন। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাছপালা নিজ খরচে কেটে না নিলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান। এ অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করে জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে স্থানীয়রা একটি লিখিত আবেদন দেয়।
গরুলুটা খালপারে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন বিলকিস আকতার। তিনি বলেন, এক মেয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খালপারে বসবাস করে আসছি। বিনা নোটিশে খাল খননের কথা বলে আমার বসতঘরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি খুব কষ্টে আছি।
জানতে চাইলে ধীমান চৌধুরী বলেন, দিদারুল ইসলামসহ স্থানীয় যারা অভিযোগ করেছেন, গত শনিবার তাঁদের আমাদের পটিয়া অফিসে ডাকা হয়। তাঁদের বক্তব্য শুনে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি স্থানীয়দের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি পটিয়ার কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিণখাইন গ্রামের লোকজন বিক্ষোভ করে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাউবোর আওতায় উপজেলার গরুলুটা খাল, কেরিনজা খাল, চৌধুরী আহলা খাল ও জঙ্গলখাইন খালসহ প্রায় ৯ হাজার মিটার খাল পুনঃখননের কাজ চলছে প্রায় দুই মাস ধরে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাবর-জামান (জেভি) কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বাবর-জামানের মালিক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বেলখাইন এলাকার গরুলুটা খালের রিটকারীদের জমিতে কাজ বন্ধ আছে। তবে অন্য অংশে কাজ চলছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামালের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
মাসুদ কামাল বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশের কপি আমরা এখনো অফিশিয়ালি হাতে পাইনি। তবে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে স্থানীয় কৃষকরা খালের উভয় পাশে তাঁদের ২০-৩০ ফুট জায়গা জবরদখল করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। জমি অধিগ্রহণ ছাড়া এভাবে প্রকল্পে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যখন অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ করবে তখন আমাদের সার্ভেয়ার পাঠিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। উচ্চ আদালতের আদেশের এক মাসের সময় শেষ হচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের কপিটা আমরা যখন হাতে পাব তখন থেকেই সময় গণনা শুরু হবে। আমরা অবশ্যই এক মাসের মধ্যে পিটিশনের নিষ্পত্তির জবাব দেব। কোনো ধরনের অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া এক ইঞ্চি জমিও নেওয়ার কারো কোনো সুযোগ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, আমি সবেমাত্র চলতি সপ্তাহে যোগদান করেছি। সব কিছু আমি দেখেশুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, আজ (গতকাল) স্থানীয়রা আমাকে ফোনে জানিয়েছে তাদের রিট পিটিশনের জায়গায় খাল খনন করছেন ঠিকাদারের লোকজন। আমি এ বিষয়ে অফিস থেকে সার্ভেয়ারসহ কয়েকজনকে ঘটনাস্থলে পাঠাব কাল (আজ বুধবার)। তাঁরা বিষয়টি সরেজমিনে দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
গত ৩০ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। সে সময় প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রকল্পের কোনো কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।
পাউবো সূত্রে আরো জানা যায়, পটিয়া জলাবদ্ধতারোধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় পাস হয়। ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২৪ সালের জুন মাস।
সুত্র: স.স, কেকে।