স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আইনশৃঙ্খলা সভায় বরণ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলমকে প্রকাশ্যে বেয়াদব ডেকেছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
এসময় প্রতিবাদ করায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের সাথেও বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন সাংসদ আবু রেজা নদভী।
আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সাতকানিয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা চলাকালে এসব ঘটনা ঘটে।
তবে আইনশৃঙ্খলা সভায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সাতকানিয়া উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভার পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিল। সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলমের সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় আইনশৃঙ্খলা সভা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাস্টার ফরিদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী ও সাইফুদ্দিন শাহী ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত হন।
সভাস্থলে প্রবেশের সাথে সাথে সাংসদ আবু রেজা নদভী তাকে বাহির থেকে কেন বরণ করা হয়নি তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানতে চান। এ সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ‘তোমাকে কে ইউএনও বানিয়েছে, তুমি কীসের ইউএনও, এখনো আদব-কায়দা জানো না, বেয়াদব কোথাকার’ এসব বলে বকুনি দেন।
তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম সাংসদ আবু রেজা নদভীকে বরণ করতে না পারার জন্য তার কাছে বার বার দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে উপস্থিত সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা সভা সমাপ্ত হয়।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা সভা শেষ হওয়ার সাথে সাথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপির সভাপতিত্বে সমন্বয় সভা শুরু হয়।
সভার শুরুতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আসার বিষয়টি ইউএনও হয়তো বুঝতে পারেননি। এ কারণে আপনাকে বরণ করতে পারেননি।’ এ কথা বলার সাথে সাথে সাংসদ আবু রেজা নদভী দাঁড়িয়ে গিয়ে এম এ মোতালেবকে তার বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য বলেন।
এক পর্যায়ে সাংসদ আবু রেজা নদভী ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় সাংসদ আবু রেজা নদভী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবকে বলেন, ‘আমাকে রাজনীতি শেখাতে আসবেন না। আমার সাথে যুদ্ধে লাগবেন না।’
তখন উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব বলেন, ‘আমিও রাজনীতি করতে করতে এ পর্যায়ে এসেছি। ছাত্রাবস্থা থেকে রাজনীতি করে আসছি। আপনাকে শেখানোর চেষ্টা করছি না। প্রকৃত জিনিসটা বুঝাতে চেয়েছি।‘
এসব তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে উপস্থিত অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান। পরে আবারো সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে দুইজনকে শান্ত করা হয়। দুই দফায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় সামান্য কিছুক্ষণ আলোচনা শেষে সমন্বয় সভা শেষ হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী জানান, শুধু বরণ না করার অপরাধে একজন ইউএনও’র সাথে সাংসদের এমন আচরণ মোটেও ঠিক হয়নি। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সাংসদের এমন আচরণের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং নৌকার সম্মান রক্ষার জন্য হলেও সাংসদের আরেকটু সহনশীল হওয়া দরকার ছিল। এছাড়া একেবারে বিনা কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়েছেন তিনি।
সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এমপি সাহেব একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করতে চাই না। বরণ না করার বিষয়টি শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের দলীয় কোন্দলের কারণে ঝামেলা হয়েছে। আমরা এসব কোন্দলের মধ্যে ঢুকতে চাই না।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, ‘আমরা ৩টার দিকে সভা শুরু করি। সাড়ে ৪টার দিকে অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি স্যার সভাস্থলে প্রবেশ করেন। তখন উনাকে রিসিভ না করা নিয়ে কয়েকটি কথা বলেছেন। পরে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি স্যার পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব আমরা মিটিংয়ে থাকাতে যে এমপি স্যারকে রিসিভ করতে পারিনি তা বুঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুইজনের মধ্যে উল্টো বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। পরে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি স্যারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি বলেন, ‘সাংসদ আবু রেজা নদভীকে বাহির থেকে বরণ না করায় তিনি ইউএনও’র ওপর ক্ষিপ্ত আচরণ করেছেন। মূলত তিনি আসার বিষয়টি ইউএনও প্রথমে বুঝতে পারেননি। আমি বক্তব্যের শুরুতে সাংসদ আবু রেজা নদভীকে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া সাংসদের আচরণের কারণে ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তাগণ যাতে মনে কষ্ট না পান সেজন্য আমি বাস্তব ঘটনাটি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু সাংসদ নদভী তা বুঝার চেষ্টা করেননি। উল্টো আমার ওপর ক্ষেপে যান।’
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।