স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব কমে এলেও চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলা এবারও হচ্ছে না।
বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলী খেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দেয় আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি।
তারা জানান, কোভিডের কারণে গত দুই বছর মেলার আসর বসেনি; এবার মাঠের সংস্কার কাজের জন্য খেলার আয়োজন করা যাচ্ছে না।
মেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লালদীঘি মাঠে ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার টেরাকোটা ও মাঠ সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তা উদ্বোধন না হওয়ায় বলী খেলার জন্য মাঠ পাচ্ছে না কমিটি। তাই এবার খেলা ও মেলার আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১১০ বছর ধরে এই বলী খেলা লালদীঘির মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মাঠটি শত বছর ধরে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার সাক্ষী।
“এসব স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার মাঠের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মাঠটি উন্মুক্ত নয়।”
মেলা কমিটির সভাপতি আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষই মাঠটি সংস্কার ও ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছিলেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মাঠের প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায়। মাঠ উন্মুক্ত না থাকায় এবারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আমরা স্থগিত করছি।”
সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাঠ পাচ্ছি না। মাঠ খোলা থাকলে খেলা ও মেলা হতো। মাঠ না পাওয়ায় খেলা হবে না। তাই এবার মেলার আয়োজনও করতে পারছি না।”
এক প্রশ্নের জবাবে জামাল হোসেন বলেন, “১৯০৯ সাল থেকে সবসময় ১২ বৈশাখ জব্বাবের বলী খেলা হয়েছে। এমনকি একবার ঈদের দিনও হয়েছে। আমরা এখনও আশাবাদী… যদি এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মাঠটি উদ্বোধন করেন।” সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরে যা আব্দুল জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়। এর জনপ্রিয়তা এখনও রয়েছে।
বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত লালদিঘীর মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এ মেলার ১১০তম আসর বসেছিল।
লাল দীঘির মাঠটি অবৈধভাবে দখল ও সংস্কারের অভাবে জৌলুস হারিয়েছিল। একাংশে গড়ে উঠেছিল অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। এখন এ মাঠে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহাসিক ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ম্যুরাল স্থাপন, কিডস কর্ণার, ঘাস লাগানো, সীমানা প্রাচীর, ফটক নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
প্রায় আড়াই বছর আগে যখন এ কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই মূল ফটকে তালা লাগানো। ইতোমধ্যে মাঠের চারপাশে দেয়াল উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। উদ্বোধনের পর মাঠ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কখন উদ্বোধন করা হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।
“উদ্বোধন হলে পরবর্তীতে মাঠের ক্ষয়ক্ষতি না করে বলী খেলা আয়োজন করা যাবে। তবে মাঠের ভেতর কোনো মেলা আয়োজনের আর সুযোগ থাকবে না। মেলা হবে বাইরে।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, “যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে গেছে, তাই শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য মাঠটি খুলে দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় শিগগিরই উদ্যোগ নেবে। তবে শৃঙ্খলা আনতে অন্য কার্যক্রমের বিষয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে। যাতে অবৈধ কোনো স্ট্যান্ড গড়ে না ওঠে। যখন-তখন যেকোনো কিছু করে মাঠের ক্ষতি করা যেন না হয়।”