স্টাফ রিপোর্টারঃ
জটিল রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে ৬ শয্যার পূর্ণাঙ্গ এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেনসি ইউনিট) কর্নার উদ্বোধন করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। গতকাল (২৯ আগস্ট) বেলা এগারটায় এই কর্নারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ৬ শয্যার এই এইচডিইউ কর্নার স্থাপনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপ। শয্যা ও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল।
গণপূর্ত বিভাগও এই কর্নার স্থাপনে সহায়তা করেছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত এবং চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। এসময় অন্যান্যের মাঝে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. অজয় দাশ, হাসপাতালের আরএমও ডা. তানজিমুল ইসলাম, আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরে সার্বিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নওফেল বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালে পরিণত হচ্ছে। এই হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হলে একটা পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম পাওয়া যাবে। জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে জনবল থাকবে। শুধুমাত্র অবকাঠামোই কিন্তু হাসপাতাল নয়, হাসপাতালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। পূর্ণাঙ্গ অর্গানোগ্রাম পাওয়া গেলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া অনেকটাই সহজ হবে। উপমন্ত্রী বলেন, করোনার শুরুতে যখন এখানে এসেছি, তখন দেখেছি ভয়ে কেউ আশপাশেও আসতো না। তখন এই হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরা নিজের জীবন বাজি রেখে রোগীদের আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে গেছেন। রাজনীতিবিদদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘সাপ্ল্লাই ব্যবসা’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, রাজনীতিবিদ হয়ে আমার যদি অনেকগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকে, আমার মন-মানসিকতা যদি হয়- সব জায়গায় আমাকে ব্যবসা করতে হবে, মুরগি সাপ্লাই দিতে হবে, খাবার সাপ্লাই, মেশিন সাপ্লাই দিতে হবে, তাহলে কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার দায়বদ্ধতার জায়গাটি আর থাকে না। আমি কিন্তু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছি। ব্যক্তিস্বার্থ বা রাজনীতিবিদের ব্যবসায়িক স্বার্থ তখন জনস্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। আমার আয়-ইনকাম কমে যাবে, তাই আমি সরকারি স্থাপনার সক্ষমতা বাড়াবো না- এই মানসিকতা নিয়ে যদি আমরা রাজনীতি করি, তাহলে কিন্তু আমরা মানুষের সাথে প্রতারণা করছি।
এইচডিইউ সেবা চালুতে আর্থিক সহযোগিতাসহ ও বিভিন্নভাবে এগিয়ে আসায় শিল্প প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপ ও ফিল্ড হাসপাতালের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে নওফেল বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তশালীরা এভাবে এগিয়ে আসলে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা আরো উন্নত হবে। সাধারণ মানুষও উন্নত সেবা পাবে।
সরকারি হাসপাতালের সেবা বাড়াতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসআরএম-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেন গুপ্ত বলেন, বিএসআরএম সর্বদা সাধারণ মানুষের কল্যাণে কিছু করার চেষ্টা করে। এটি সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা। রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবায় এই এইচডিইউ কর্ণার স্থাপনে সহযোগিতা করতে পেরে আমরাও আনন্দিত। এ কাজে শামিল করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিও ধন্যবাদ জানান তিনি।
জনসাধারণের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল চালু করা হয়েছিল উল্লেখ করে হাসপাতালটির উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম আমরা এখানে দিতে পেরেছি, তা জনগণেরই সম্পদ। জনগণের সম্পদ এখন জনগণের চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত হবে। আমরাও এটা চেয়েছিলাম।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ১৭টি আইসিইউ শয্যা চালু রয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু হয় এ হাসপাতালে। এরপর রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় তা ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরে আরো বাড়িয়ে শয্যা সংখ্যা ১৮৫ করা হয়। এদিকে, রোববার উদ্বোধন হলেও এই এইচডিইউ কর্ণারে মঙ্গলবার থেকে রোগী ভর্তি দেয়া হবে বলে জানান হাসপাতালের আরএমও ডা. তানজিমুল ইসলাম। এইচডিইউ কর্ণার পরিচালনায় এরইমধ্যে নতুন করে ৮ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সিআরবি ইস্যুতে মন্তব্য নয় : এইচডিইউ কর্ণার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন ইস্যুতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসময় নওফেল বলেন, ‘এটা সরকারের একটা নির্বাহী সিদ্ধান্ত, আমি যেহেতু সরকারের একটা নির্বাহী দায়িত্বে আছি। এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করাটা সমীচীন হবে না। আন্ডার ওথ অফ এজ এ মিনিস্টার, আমাদের তো কনফিডেনশিয়ালি ওথ আছে…এবং কালেক্টিভ মিনিস্টেরিয়াল রেসপনসিবিলিটি। ইটস দ্যা রেসপনসিবিলিটি অফ দ্যা এনটায়ার কেবিনেট। সেকারণে আমি এ বিষয়ে মন্তব্য এই মুহূর্তে করতে পারছি না।