মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনকে তিলে তিলে সাজাতে হয়, সুখ আর দুঃখের যোগফলই জীবন : আবদুচ সালাম


প্রকাশের সময় :১ অক্টোবর, ২০২০ ৩:৪৯ : অপরাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদঃ

জীবনকে তিলে তিলে সাজাতে হয়, সুখ আর দুঃখের যোগফলই জীবন, জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে উপভোগ করার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা, ভিক্ষা ছাড়া জীবনের প্রয়োজনে করা যেকোন কাজের মধ্যেই রয়েছে সফলতা- এখানে প্রতিটি কথার রয়েছে নিজস্ব অর্থ। আর এই সব কথা বলেছেন দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আবদুচ ছালাম। আড্ডাচ্ছলে একাত্তর বাংলা নিউজকে এই কথা বলছেন তিনি। শুনিয়েছেন তাঁর আত্মসংগ্রামের পথ বেয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার গল্প।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে ওয়েল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোটেল ওয়েল পার্কে বসে একাত্তর বাংলা নিউজের সাথে কথা বলছিলেন আবদুচ ছালাম।

আবদুচ ছালাম বলেন, ‘টিউশনি, ব্রোকারি, ফেরিওয়ালা, সেলসম্যান থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই, যা করিনি। ঘামজড়ানো পরিশ্রম করেছি, আরামকে হারাম করেছি, নিদ্রা ভুলেছি-সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য। আর এই প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিলো পরিবার-পরিজনের সুখ-শান্তি, সম্মান নিশ্চিতের পাশাপাশি সমাজ-উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া। দিনশেষে তাই হয়েছে। বিধাতা আমার স্বপ্ন-ইচ্ছে সবই পূরণ করেছেন। আমাদের একান্নবর্তী বিশাল পরিবারে আজ সুখ-শান্তিতে ভরপুর। অন্য পরিবারে একটি থাকলে আরেকটি থাকে না। সেদিক দিয়ে আমার পরিবার চলমান সমাজে অনন্য একটি পরিবার। আল্লাহ আমাদের ঢেলে দিয়েছেন। কমতি রাখেননি কোনো কিছুই।

গল্পে গল্পে ছালামের মুখ থেকে উঠে আসে তাঁর ইস্পাত-কঠিন সংগ্রামী জীবনের গল্পের খানিকটা। মূলত তার সংগ্রাম শুরু হয় পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়ার পর থেকে। অসম্ভব কষ্ট সয়ে, খেয়ে না খেয়ে শৈশবের দিনগুলো পার করেছেন ছালাম।

মোহরা এ কে খান স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। মোহরাতে তখন নিভৃত পল্লীর আচ্ছাদন। যাতায়াতের সুবিধার্থে ছালাম চলে এলেন চকবাজারের উর্দু গলিতে। থাকা-খাওয়া ও দৈনিক পঞ্চাশ পয়সা হাতখরচের বিনিময়ে এক বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাজ পান। এর বাইরে মাসিক ৫ টাকা বেতনে তিনটি প্যাকেজ টিউশনিতে যুক্ত হন তিনি। প্যাকেজ মানে একবাড়িতে ৫ ছেলেমেয়ে থাকলে সবাইকে পড়াতে হতো ৫ টাকার বিনিময়ে।

বাসে চকবাজার থেকে ২০ পয়সা দিয়ে নিউ মার্কেট নেমে সামান্য হাঁটলেই সিটি কলেজ। কিন্তু ১০ পয়সা বাঁচানোর জন্য ছালাম তা না করে চকবাজার থেকে ১০ পয়সা দিয়ে আন্দরকিল্লা নেমে যেতেন। এরপর কাঁটাপাহাড়, রাইফেল ক্লাব, নিউমার্কেট হয়ে পদব্রজে পৌঁছতেন সিটি কলেজ। ক্লাসশেষে ফের একই পথ ধরে হেঁটে আন্দরকিল্লা এসে ১০ পয়সা দিয়ে একটি বাকরকানি খেয়ে তাতিয়ে ওঠা ক্ষুধা নিবারণ করে ফের চড়তেন ১০ পয়সার বাসে।

লজিং বাড়িতে দুপুরে ভরপেট খেয়ে শুরু হতো টিউশনির দৌড়ঝাঁপ। সন্ধ্যার আগে শেষ করতে হতো একে একে তিন তিনটা টিউশনি। এরপর লজিং বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াতেন রাত ৯টা পর্যন্ত। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ছালাম এবার নিজের পড়াশোনায় সময় দিতেন। মধ্যরাতে ঘুমিয়ে খুব সকালবেলা ওঠে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াতেন সকাল ৯টা পর্যন্ত। গোসল সেরে শুরু হতো কলেজে যাওয়ার তাড়া।

পান-সিগারেট খাওয়া কিংবা অন্য কোনো বদভ্যাস ছিল না ছালামের। ফলে গৃহশিক্ষকতায় পাওয়া ৫০ পয়সা থেকে কলেজে আসা যাওয়ার ভাড়া, বাকরকানি খাওয়ার পর ছালামের হাতে থাকতো আরও ২০ পয়সা। মাসশেষে ৬ টাকা। টিউশনি থেকে পাওয়া ১৫ টাকা মিলিয়ে মাসশেষে ছালামের হাতে জমা থাকতো ২১ টাকা। ৩-৪ টাকার শিক্ষাউপকরণ কিনে বাকি টাকা পরিবারের জন্য খরচ করতেন তিনি। ছুটির দিনগুলোতে বাড়ি যাওয়ার সময় বিস্কুট, মোলা-মুড়ি, ফলমুল কিনে নিয়ে যেতেন। অবশিষ্ট টাকা তুলে দিয়ে আসতেন মা-র হাতে। বক্সিরহাটে ইনকাম ট্যাক্সের খাতা (লাল কাপড়ে বাঁধা) লিখে বাবার পাওয়া স্বল্প টাকা আর ছালামের টিউশনি থেকে বাঁচানো টাকা বিশাল পরিবারে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতো।

এসএসসি পাশ করার পর বাবা চেয়েছিলেন ছেলেকে সহসা উপার্জনমুখী করে তুলতে। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন মেকানিক বানাবেন। এজন্য পলিটেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকটাক। তখনই বেঁকে বসেন মা। বললেন, আমার ছেলে মেকানিক নয়, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। প্রয়োজনে না খেয়ে ছেলেকে পড়াবেন তিনি। মায়ের অনড় অবস্থানে শেষপর্যন্ত পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হলেন না ছালাম। সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেন। ডিগ্রি পাশ করলেন মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এম কম এ। ভর্তি হয়েই বেরিয়ে পড়েন ভাগ্যান্বষণে। ভাগ্যবদল করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ নেই তিনি করেননি।

দোহাজারি থেকে কালুরঘাট, নাজিরহাট থেকে অক্সিজেন, সীতাকুণ্ড থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত দোকানে দোকানে সুঁতা ফেরি করেছেন। মূলত সেই সুঁতার ফেরিওয়ালা থেকে তিনি আজ দেশের শীর্ষ শিল্পপতি। সুঁতা ফেরি করতে করতে গড়ে তুললেন সুঁতার ফ্যাক্টরি। সেই ফ্যাক্টরি থেকে তিল তিল গড়ে ওঠা ওয়েল গ্রুপ আজ মহীরূহ। ১০ হাজার মানুষ কাজ করেন ওয়েল গ্রুপ পরিচালনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

স্বপ্নবুননের পথে দিনরাত হাঁটতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা মাড়ানোর কথা। দুই বছর আগে ভর্তি হয়ে আসা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান পরীক্ষার মাত্র একমাস আগে, উঠেছিলেন এফ রহমান হলে। তখনকার দিনে ফটোকপির আধিক্য ছিল না। সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নোট লিখে পরীক্ষায় অংশ নিতে বিনিদ্র রজনী থেকেছেন ছালাম।

সেই শ্রম, আত্মত্যাগের ফল সেকেন্ড ক্লাশ, অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণীতে এম কম পাশ করেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেকেন্ড ক্লাশ সেকেন্ড হওয়ার খবরটি ছালাম জেনেছিলেন আরও পরে অর্থাৎ ৩৫ বছর পর, ২০০৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তির পর একাডেমিক সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। ছালামের সহপাঠী প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফই (পরে ভিসি) বললেন, একদিনও ক্লাস না করে তুমি সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড, ক্লাস করলে কী হতো!

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোনোর পর বিধাতার কাছে ছালামের একটাই চাওয়া ছিল, তাঁর বাকি ভাইরাও (৫ ভাই) যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। বিধাতা ছালামের প্রার্থনা কবুল করেছিলেন সেদিন। আর করেছিলেন বলেই তার সব ভাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ছালাম বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন শুধু নয়, শিক্ষিত করেছেন, সমাজে সম্মান দিয়েছেন। আমার হাত দিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়ন করিয়েছেন। আমার পরিবারে সুখশান্তি ঢেলে দিয়েছেন।

জনাব ছালাম বলেন, ‘আমার মা সেদিনের মেকানিক হওয়ার পথ রুদ্ধ না করলে আজ আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের এতদূর আসা কখনো সম্ভব হতো না। আমার মা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে এসিয়েছিলেন বলেই আমার হাত ধরে দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক কর্মীকে সিডিএ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হয়ে আসার সুযোগ দিয়েছেন। সেই পদে টানা ১০ বছর থেকে চট্টগ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নযজ্ঞ-সবই আমার মা’র দোয়া, আল্লাহর ইচ্ছা সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার অকুণ্ঠ সমর্থন ও সাহসী পরামর্শের ওপর ভর করেই আমার সকল সফলতা। কখনোই ভাবিনী আমাকে দিয়ে চট্টগ্রামের এত কাজ হবে।’

ট্যাগ :