এম.এইচ মুরাদঃ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে হবে।
শনিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পোর্ট কানেক্টিং সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
চসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্বাচনগুলো পরিচালনা করছে, জনগণের দৃষ্টিতে তারা অত্যন্ত সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। সুতরাং প্রযুক্তিনির্ভর অন্যান্য নির্বাচনগুলো যেমন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হচ্ছে, এখানেও সেভাবে নির্বাচন হবে ‘
‘যেকোনো নির্বাচন আসলে বিএনপি অভিযোগের বাক্স খুলে বসে, এটা তাদের চিরাচরিত নিয়ম। অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছে। জয়লাভ করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত নানা অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু যেইমাত্র জয়লাভ করেছে তাদের মুখটা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং নির্বাচন আসলে অভিযোগের বাক্স খুলে বসা বিএনপির অভ্যাসগত স্বভাব’-বলেন তথ্যমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা আজ সারা পৃথিবী করছে। পাকিস্তান আমাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পাকিস্তানের টেলিভিশনের টকশোতে আলোচনা হয় আমাদের দয়া করে একজন শেখ হাসিনা দাও, আমাদের দেশকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আর ভারতের বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে ব্যাপক আলোচনা হয়, বাংলাদেশ জিডিপি গ্রোথ রেট এবং মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব এবং একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হলেও বাংলাদেশের একটি পক্ষ কখনো প্রশংসা করতে পারে না। প্রতিদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের দলের নেতারা এবং কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করতে পারেন না। এসব বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধি আছে, কিন্তু আমাদের সরকার সম্পর্কে বলার সময় তাদের বুদ্ধি কেন লোপ পায় সেটা বুঝতে পারি না। তারা যেভাবে কথা বলেন, দেশে যে এত উন্নয়ন হয়েছে সেটি তারা দেখতে পান না, চোখ থাকতেও তারা অন্ধ। নতুন বছরে আমার প্রত্যাশা থাকবে, তাদের চোখটা অন্ধের মতো কাজ করবে না, চোখ খুলে তারা এসব বিষয় দেখবে।’
পোর্ট কানেক্টিং সড়ক পরিদর্শনের পর তথ্যমন্ত্রী নগরীর পাহাড়তলীতে হর্স শোর লেক পরিদর্শন করেন। এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আউটার রিং রোড হয়েছে, এই আউটার রিং রোডের সঙ্গে কানেক্টিং কিছু রোডের প্রয়োজন। বিদ্যমান প্রকল্পের পাশাপাশি সিডিএ নতুন প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে, যাতে আউটার রিং রোডের সঙ্গে অন্ততঃ তিনটি রাস্তা দিয়ে মূল শহরের সংযোগটা হয়। কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি আগামী বছর কর্ণফুলী টানেল আমরা চালু করতে পারবো। এটি উপমহাদেশে প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল-রোড। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান কিংবা নেপালে এরকম টানেল নেই। প্রধানমন্ত্রী যে চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দেন এসব কাজ তারই বহিঃপ্রকাশ।’
‘চট্টগ্রামে বে-টার্মিনালের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে, সেটি নির্মিত হলে প্রকৃতপক্ষে আরেকটি নতুন চট্টগ্রাম বন্দর হবে। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অনেক বড় বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবে গত ১২ বছরে পুরো দেশের চিত্র বদলে গেছে’-বলেন তথ্যমন্ত্রী।
প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনের কর্মকাণ্ডের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসক সাহেব অল্পসময়ের মধ্যে যেসব কাজ অসমাপ্ত ছিল, সেগুলো তিনি ঠিকাদারদের তাগাদা দিয়ে, প্রশাসনিক নানা ব্যবস্থা নিয়ে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছেন। পোর্ট কানেক্টিং রোডসহ আরো কয়েকটি রাস্তা তার অন্যতম উদাহরণ।’
এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম পোর্ট কানেক্টিং রোড নিয়ে গত তিনটি বছর এলাকার মানুষ অনেক কষ্টে ছিল। গত ছয় মাসে আমরা অনেক যুদ্ধ করেছি, এটা হচ্ছে চট্টগ্রামের লাইফ লাইন, চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে বাকি বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকার মধ্যে এটি অন্যতম। এটা নিয়ে গোটা দেশ উদ্বিগ্ন ছিল, এখন এটি দৃশ্যমান হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে আর কোন ভাঙা রাস্তাঘাট খুঁজে পাবেন না, ভাঙা রাস্তাঘাট এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।’