এম.এইচ মুরাদঃ
খোরশেদ আলম সুজনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম একথা জানান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এক প্রতিক্রিয়ায় একাত্তর বাংলা নিউজকে বলেন, এই পদে আসার জন্য আমি কোনো চেষ্টা-তদবির করিনি। ৫০ বছর ধরে মাঠে আছি। দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় পথ চলেছি। এটা চট্টগ্রামবাসী যেমন জানে, তেমনি জানেন জাতির জনকের কন্যা, আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন আস্থা রেখেছেন, সেই আস্থার মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। সমস্ত মেধা, মনন দিয়ে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে যাবো।
খোরশেদ আলম সুজন ১৯৭০ সালে কাট্টলী স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ছাত্র রাজনীতির প্রথম অবস্থায় ১৯৭০ সালেই পাকিস্তান সরকার তথা আইয়ুব খান ‘‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” নামক একটি বই ছাত্র সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বইটির বিরুদ্ধে তৎকালীন সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ উম্মাতাল আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে কনিষ্ট ছাত্র হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন সুজন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত বাঙালি সৈন্যদের সেবা শুশ্রুষার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে ছোট অংশগ্রহণ ছল খোরশেদ আলম সুজনের। সেই অংশগ্রহণে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিহারীরা তাকে দুই দুইবার ধরে নিয়ে গিয়েছিল হত্যা করার জন্য। পরবর্তীতে এলাকাবাসী গিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।
১৯৭২ সালে কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সুজন। ১৯৭৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর কাট্টলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ অবিভক্ত ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (বর্তমানে মহসিন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন সুজন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ছাত্র ছিলেন সুজন। ১৫ আগস্টের সেই দিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রথম একটি প্রতিবাদী মিছিল বের হয় আন্দরকিল্লা থেকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয় মাঠে প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন একুশে উদযাপন পরিষদ নাম দিয়ে।
১৯৭৬ সালে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুজন। ভর্তি হয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্টা করেন। মাত্র ১৩ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু। ১৯৭৬-৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সুজন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৮২-৮৪ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৬-৮৮ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন খোরশেদ আলম সুজন।
এর পর মজুরী কমিশন আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সুজন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ২ বার জেল খাটেন তিনি। ১৯৮৮-৯০ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিবিএ ননসিবিএ সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সংগঠনের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন সফল করেন সুজন।
২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগ নামক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নাগরিক সমস্যা এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেন সুজন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী পর্ষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। এই হিসাবে বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল (৫ আগস্ট)।
নিয়মানুযায়ী মেয়াদপূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসাবে ২৯ মার্চ ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোটের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করেন ইসি।
স্থগিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি দলটির নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তার বদলে নৌকার মনোনয়ন পান নগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান দলটির নগর কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন।