এম.এইচ মুরাদ:
চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট হিলের প্রবেশ মুখের সরকারি খাস জমি দখল করে ১৯৯০ সালে অবৈধভাবে গড়ে উঠা হোটেল ব্রীজ ও হোটেল জামান, চেয়ারম্যান হোটেলসহ ১৭ স্থাপনা মালিককে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থাপনাগুলো অপসারণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আজ বা কালকের মধ্যে সব স্থাপনা অপসারণের কাজ শেষ হবে। এরপর থেকে কোর্ট হিলে উঠানামায় দীর্ঘদিনের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা আর থাকবে না। দখলমুক্ত ভূমির পরিমাণ ০.১৪৩৬ একর। অপসারণ কাজ শেষে সেখানে গড়ে তোলা হবে ওয়াশ ব্লক ও করা হবে সাধারণের বসার ব্যবস্থা। গতকাল বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে উক্ত উচ্ছেদ ও অপসারণ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। সাথে ছিলেন বাকলিয়া সার্কেলের এসি ল্যান্ড এ এফ এম শামীম।
কোর্ট হিলে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ প্রায় ৩০টি সরকারি অফিস এবং আদালত রয়েছে। উক্ত আদালত ও অফিসগুলোতে প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী ও বিচারক, আট হাজার আইনজীবী এবং পাঁচ হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবী দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কোর্ট হিলের প্রবেশ মুখ হয়ে উক্ত অফিস ও আদালতগুলোতে প্রতিদিন যাতায়াত করেন প্রায় ২০ হাজার বিচারপ্রার্থী ও সেবাপ্রার্থী। জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, বিপুল পরিমাণ লোকজনের যাতায়াতে কোর্ট হিলের প্রবেশ মুখের ছোট্ট রাস্তাটিতে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে আসছে। অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে সেটিও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ সেবা প্রত্যাশীকে বিশ্রমাগার, টয়লেট, সুপেয় পানি কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মতো উন্মুক্ত কোনো স্থান নেই অত্র এলাকায়। উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এখন সেখানে সেবাপ্রার্থীদের নির্বিঘ্নে সেবা গ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কোতোয়ালী থানার আন্দরকিল্লা মৌজার বিএস ১ নং খাস খতিয়ানের বিএস ৩০২৪ ও ৩০৩০ দাগের ০.১৪৩৬ একর জায়গার অবস্থান কোর্ট হিলের প্রবেশ মুখ। যা এখন অপসারণ করা হচ্ছে। এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৭ জন দখলদার অবৈধভাবে দখল ধরে রেখেছিলেন। সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা ছাড়েননি। পরবর্তীতে উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয়া হলে তারা হাইকোর্ট ডিভিশনে দুটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ফলে উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এরমধ্যে গত ২৩ ও ২৭ নভেম্বর উভয় রীট পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। যার প্রেক্ষিতে ১৭ অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে পরীর পাহাড়ে (কোর্ট হিল) তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। অবৈধ স্থাপনাগুলো পরীর পাহাড়ের রাস্তাকে খুবই সরু করে ফেলেছে। কোনো ধরনের অগ্নিকণ্ডের ঘটনা ঘটলে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া জেলা পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত রাস্তা ব্যবহার করে শত শত আসামি/কয়েদীদের প্রতিনিয়ত আদালতে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও আদালতের স্থগিতাদেশ খারিজ হওয়ায় অবৈধ দখলদারদের পরীর পাহাড়ের প্রবেশ মুখ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাদের স্থাপনাগুলোর অপসারণের কাজও চলছে। আজ, কালকের মধ্যে অপসারণ কার্যক্রম শেষ করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, অপসারণ কাজ শেষ হলে দখলমুক্ত করা জায়গায় সাধারণের জন্য ওয়াশ ব্লক, বসার স্থানার নির্মাণ করা হবে। বিচারপ্রার্থীদের চলাচলে দীর্ঘদিন যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে সেটি থেকে মুক্তি মিলবে বলেও জেলা প্রশাসক জানান।
জেলা প্রশাসনসূত্র জানায়, উচ্ছেদ অভিযানে সিএমপির ৩০ জন পুলিশ সদস্য, পিডিবির প্রকৗশলী ও টেকনিশিয়ান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম হাজির ছিলেন।