স্টাফ রিপোর্টারঃ
কনটেইনার জট এড়াতে দ্রুত ইয়ার্ড খালি করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ। বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা পণ্যগুলো প্রতিমাসে নিলামে তোলার বিধান থাকায় এক মাসের ব্যবধানে আবারও নিলামে উঠছে পণ্য। এতে একদিকে বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে নতুন করে পণ্য রাখার সুযোগ তৈরি হবে, অন্যদিকে বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনায় গতি আসবে বলে জানিয়েছে বন্দর। তাই এবার ছয়টি জাপানি গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যভর্তি ৭৮ লট পণ্য উঠছে নিলামে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রাখার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও পণ্য ডেলিভারির কাজ গতিশীল থাকায় বর্তমানে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৩৬ থেকে ৩৭ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। তবুও বন্দরের চলমান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে বন্দরে পড়ে থাকা আমদানিকৃত পণ্যগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নিলামে পাঁচটি জাপানি টয়োটা গাড়ি, একটি আ্যাম্বুলেন্সসহ ৮৫৫ কনটেইনার প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, ৫৩ কার্টন আইসক্রিম কাপ, ৪৭৮ রোল ফেব্রিক্স পণ্য, ৭২ প্লেট রাবার প্রোটেক্টর, ৩৩ কনটেইনার ক্যাবল, ১৭ কনটেইনার রেইনকোর্ট, ২ হাজার ৯৭০ পিস সোয়েটার, ৪৪ হাজার ৬শ’ পিস প্লাস্টিক পণ্য, দেড় কোটি টাকা মূল্য মানের প্লাস্টিকের দরজা-জানালা, ৬ ড্রাম ওষুধের কাঁচামাল, ৫৬ রোল আয়রন শীট, ১৪৭ কনটেইনার লাইট, ১২ কনটেইনার ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি, ৩২০ ড্রাম মদ, ৪ কনটেইনার মেটাল বাটন, ২৭০ কেজি হাউড্রোলিক এসিড, ১ কনটেইনার ব্যাটারি, ৭ কেস ওয়াশিং ক্যামিকেল, ৪০ ড্রাম রাসায়নিক পদার্থ, ৪০২ কনটেইনার ভুট্টা রয়েছে।
সরকারি নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে এম করপোরেশন বরাবরের মতোই এই নিলাম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির নিলাম শাখায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। নিলামে অংশ নিতে হলে আগামী ৯ জুন দুপুর ২টার মধ্যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও হালনাগাদ টিন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হালনাগাদ করা ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সনদ ও টিন সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। কাস্টম হাউসের নিলাম শাখা থেকেও নিলামের দরপত্র ও ক্যাটালগ সংগ্রহ করা যাবে। ওইদিন (৯ জুন) দুপুর আড়াইটায় এই নিলাম কার্যক্রম শুরু হবে। এবারের নিলামটিও প্রথাগত নিয়মেই অনুষ্ঠিত হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বারবার নোটিশ পাঠানোর পরও যেসব আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসের উদ্যোগ নেয় না ওই সব পণ্যই মূলত নিলামে তুলতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। পণ্য ভর্তি কনটেইনার দ্রুত ছাড় করা হলে যেমন নতুন পণ্য রাখার সুযোগ তৈরি হয় তেমনি নিলামযোগ্য কনটেইনার নিয়ম অনুযায়ী নিলামে তুললে বন্দর পরিচালনা কার্যক্রমেও গতি আসে।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ফয়সাল বিন রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতি মাসে নিলামের আয়োজন করে থাকে। এবার ছয়টি জাপানি গাড়িসহ ৭৮ লট আমদানিকৃত পণ্য নিলামে তোলা হবে। চলতি মাসের ৩ জুন থেকে নিলামে অংশ নেয়ার জন্য দরপত্র ও ক্যাটালগ বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ৯ জুন বেলা ২টা পর্যন্ত নিলামে অংশগ্রহণকারীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারবেন এবং একই দিন দুপুর আড়াইটায় এই নিলাম কার্যক্রম শুরু হবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য নানা কারণে খালাস করেন না আমদানিকারকরা। পাশাপাশি অনেকে শুল্ক ফাঁকি দিতে ঘোষণা বহির্ভূত বিভিন্ন চালান নিয়ে এলে কায়িক পরীক্ষায় সে সব পণ্যের চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। নিয়ম অনুযায়ী, বন্দর দিয়ে আমদানি করা জাহাজের পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে আমদানিকারককে নোটিশ পাঠায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নোটিশ দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই পণ্য খালাস না করলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টম হাউস। পাশাপাশি নিলামে যেসব পণ্য বিক্রি হয় না সেগুলো ধ্বংস করা হয়।