স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক এলাকায় সঙ্গীত ভবনে ঘণ্টাব্যাপী হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রায় ৪০-৫০ জনের একটি দল ঘন্টাব্যাপী এই হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে দা-খুন্তি নিয়ে কারো কথা না শুনে হঠাৎ করে ৪০-৫০জনের একটি দল ভাঙচুর করেছে বলে জানা যায়।
এই সময় সন্ত্রাসীরা সঙ্গীত ভবনের ভেতরে ডুকে হারমোনিয়াম তবলাসহ আসবাবপত্র ভাংচুর সহ ভবনের সামনের গাছপালা পেলে দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রবর্তক সংঘের কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের ইন্ধনে এই হামলা চালিয়েছে। তারা ৪০-৫০ জনের একটি দল দা-খুন্তি নিয়ে ঘন্টাব্যাপী ভাংচুর চালায়। এসময় তাদের নিবৃত্ত করতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
সঙ্গীত ভবন প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্ত এর ছেলে বিভাষ সেনগুপ্ত বলেন, ৫৪ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটা ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিয়েছে ওরা। নিয়ে গেছে হারমোনিয়াম, তবলা আর তানপুরা। ওরা এখানে সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চায় না,জায়গা বিক্রি করে টাকা আয় করতে চায়।’
জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্ত ও বনবীথি সেনগুপ্তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় সঙ্গীত ভবন। প্রতিষ্ঠানটি শাস্ত্রীয়সহ সংগীতের নানান ক্ষেত্রে তৈরি করেছে অসংখ্য গুণী শিল্পী।
১৯৬৮ সালে সঙ্গীত ভবনের স্থান হয় প্রবর্তক পাহাড়ের পাদদেশে। মেহেদীবাগে থাকাকালীন সময়ে প্রবর্তক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বীরেন্দ্র লাল চৌধুরীর অনুরোধে ওস্তাদ প্রিয়দারঞ্জন এখানে এসে শুরু করেন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও ২০১৬ সালে ভবনটির ভাড়া পরিশোধ নিয়ে প্রবর্তক সংঘের সঙ্গে শুরু হয় ঝামেলা।
সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ কাবেরী সেনগুপ্তা বলেন, প্রায় আট গণ্ডা জমিতে স্থাপিত ‘সঙ্গীত ভবন’ এখন তার অস্তিত্ব হারানোর আশংকায় ভুগছে। প্রবর্তক সংঘের কাছে প্রথমে সরাসরি ভাড়া পরিশোধ করা হতো। পরবর্তীতে তারা এভাবে ভাড়া নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ডাক বিভাগের মাধ্যমে দুই মাস ও পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ভবনের সংস্কার কাজ করার সময় বাধা দেওয়া হয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়। এরপর সেখানে পুলিশ পাহারাও দেওয়া হয়। শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে হঠাৎ পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
‘অশুভ শক্তির দাপটে গত তিন বছর ধরে পরিচিতি ফলকটিও স্থাপন করা যায় নি। জীর্ণ ভবনের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পড়া পানিতে নষ্ট হয়ে যায় বাদ্যযন্ত্রসহ আসবাবপত্র। সবকিছু নিজেরাই সংস্কার করেছি। যে সংগীত আমাদের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য উজ্জীবিত করেছিল, যে প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছে অনেক গুণী শিল্পীর, সেই সঙ্গীত ভবন রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি’ বলেন কাবেরী সেনগুপ্তা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রবর্তক সংঘ (বাংলাদেশ)-এর সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেন, সঙ্গীত ভবন ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে কাবেরী সেনগুপ্তার বাবা প্রিয়দারঞ্জন সেনগুপ্ত’র সঙ্গে প্রবর্তক সঙ্গের চুক্তি হয়েছিল। তিনি মৃত্যুবরণ করার পর তার পরিবারের সদস্যদের আমাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেনি। উল্টো জোরপূর্বক জায়গা দখলে রেখেছে। তারা ভবনটি সংস্কার করতে চাইলে আদালতের কোনও আদেশ দেখাতে পারেনি। এ অবস্থায় শুক্রবার আবারও ভবনের দরজা-জানালা মেরামত করতে গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই সাদেকা আফরোজা বলেন, প্রবর্তক পাহাড়ের সঙ্গীত ভবন সংস্কার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। শুক্রবার সকালে ওই ভবনে ভাংচুরের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।