স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রার্থিতা বৈধতা পেয়েছিল বিভিন্ন দলের ১২৯ প্রার্থী। রবিবার শেষদিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন ৬টি আসনের বিভিন্ন দলের ৯ জন। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠে রয়ে গেলো আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন মোট ১২০ প্রার্থী। এদের মধ্যে অনেকে ‘অপ্রত্যাশিত ভুলের’ কারণে প্রথমে প্রার্থিতা হারালেও পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানিতে ফিরে পান। অন্যবারের তুলনায় চট্টগ্রামের বেশকিছু আসনে লড়ছেন ‘শক্তিশালী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাই এসব আসনে আভাস মিলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকা সব প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যাবে নির্বাচনী প্রচারণা।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল আসেনি। তবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে থাকবেন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে ৭ জন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ৬ জন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ৭ জন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ৫ জন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে ৬ জন, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে ১০ জন, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ৭ জন, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং) আসনে ৯ জন, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ৭ জন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ৭ জন, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ৮ জন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ৭ জন এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ১০ জন।
সূত্র আরও জানায়, শেষ দিনে রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন ৯ জন। তারা হলেন— চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন এবং বিকল্পধারার মজহারুল হক শাহ, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে আওয়ামী লীগের এম এ সালাম ও কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে জাসদের জসিম উদ্দিন হায়দার এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাসদের কামাল মোস্তফা চৌধুরী ও স্বতন্ত্র এমরানুল হক। ওই ৯ জনের মধ্যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে দলের আসন সমঝোতায় ‘বলি’ হয়েছেন চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের নৌকা প্রার্থী এম এ সালাম এবং চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ।
আসনভিত্তিক প্রার্থীরা হলেন—
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) :
এ আসনে ভোটযুদ্ধে মাঠে থাকবেন ৭ প্রার্থী। এরা হলেন— মাহবুব উর রহমান রুহেল (আওয়ামী লীগ), গিয়াস উদ্দিন (স্বতন্ত্র), মো. ইউসুফ বাংলাদেশ (ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট–বিএনএফ), এমদাদ হোসাইন চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (মুসলিম লীগ – বিএমএল), নুরুল করিম আফছার (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি) এবং আব্দুল মন্নান (ইসলামিক ফ্রন্ট)। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনকে প্রথমে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিলের মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পান।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) :
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে এবার দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই আসন থেকে নৌকার মাঝি হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনিসহ এবার সেই আসনে ভোটের মাঠে লড়বেন ৮ প্রার্থী। এরা হলেন— খাদিজাতুল আনোয়ার সনি (আওয়ামী লীগ), সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (তরীকত ফেডারেশন), শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি), মীর মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (স্বতন্ত্র), মো. শফিউল আজম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মোহাম্মদ শাহজাহান (স্বতন্ত্র) এবং মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ (ইসলামী ফ্রন্ট)।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) :
সন্দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৩ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। এবারও এ আসনে আওয়ামী লীগের মিতাসহ লড়বেন ৮ জন। এরা হলেন— মাহফুজুর রহমান মিতা (আওয়ামী লীগ), নুরুল আনোয়ার (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি), নুরুল আক্তার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), এমএ ছালাম (জাতীয় পার্টি), মুহাম্মদ উল্লাহ খাঁন (ইসলামী ফ্রন্ট), আব্দুর রহীম (ইসলামিক ফ্রন্ট), জামাল উদ্দিন চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং মোকতাদের আজাদ খান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি –এনপিপি)।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) :
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এস এম আল মামুন। প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া এ প্রার্থীসহ সীতাকুণ্ড লড়বেন ৬ জন প্রার্থী। এরা হলেন— এসএম আল মামুন (আওয়ামী লীগ), দিদারুল কবির (জাতীয় পার্টি), খোকন চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি), শহীদুল ইসলাম চৌধুরী (বাংলাদেশ কংগ্রেস), মোহাম্মদ আকতার হোসেন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট – বিএনএফ) এবং ইসলামিক ফ্রন্টের মো. মোজাম্মেল।
।
।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) :
এ আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। তবে এই আসনটি আওয়ামী লীগ এবারও ছেড়ে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। আর এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ফলে তিনিসহ এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন মোট ৭ জন। এরা হলেন— আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (জাতীয় পার্টি), নাজিম উদ্দিন (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম), কাজী মহসীন চৌধুরী (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি), সৈয়দ মুক্তার আহমেদ (ইসলামী ফ্রন্ট), আবু মোহাম্মদ শামশুদ্দীন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট – বিএনএফ), মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং ছৈয়দ মুহাম্মদ হাফেজ আহমদ (ইসলামিক ফ্রন্ট)।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) :
রাউজান উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৬ আসন। আসনটিতে নৌকার মাঝি হয়ে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এ বি এম. ফজলে করিম চৌধুরী। এ আসনে চারবার এমপি এ বি এম. ফজলে করিম চৌধুরীসহ লড়বেন মাত্র ৫ জন। এরা হলেন— এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), স ম জাফরউল্লাহ (ইসলামী ফ্রন্ট), শফিউল আজম (স্বতন্ত্র), ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি) এবং সফিকুল আলম চৌধুরী (জাতীয় পার্টি)।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী আংশিক) :
রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী আংশিক নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের তিনবারের এমপি ড. হাছান মাহমুদ। এবারও নৌকার মাঝি হয়েছেন তিনি। এ নৌকার মাঝিসহ ছয়জন থাকবেন ভোটের লড়াইয়ে। এরা হলেন— হাছান মাহমুদ (আওয়ামী লীগ), আহমদ রেজা (ইসলামিক ফ্রন্ট), মুছা আহমেদ রানা (জাতীয় পার্টি), মুহাম্মদ ইকবাল হাছান (ইসলামী ফ্রন্ট), মোরশেদ আলম (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি) এবং খোরশেদ আলম (তৃণমূল বিএনপি)।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) :
চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে সংসদে পৌঁছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এবারও এ আসনে মনোনয়ন দিয়ে নৌকার বহরে যুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যাচাই-বাছাইয়েও টিকে যান। তবে সমঝোতার ‘বলি’ হয়ে তাকে সরতে হয়েছে নির্বাচন থেকে। এই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়বেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠ। তবে, খুব সহজেই ‘ভোটযুদ্ধে’ জয়ের স্বাদ জুটবে না এই প্রার্থীর কপালে। কারণ, এই আসনে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ‘ভোটযুদ্ধে’ নেমেছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। তিনিও এই আসনের একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে তারা দুইজনসহ ভোটের মাঠে থাকবেন মোট ১০ জন।
এরা হলেন— আবদুচ ছালাম (স্বতন্ত্র), এসএম আবুল কালাম আজাদ (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট – বিএনএফ), সন্তোষ শর্মা (তৃণমূল বিএনপি), মোহাম্মদ ইলিয়াস (কল্যাণ পার্টি), সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (ইসলামিক ফ্রন্ট), কামাল পাশা (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি – এনপিপি), সোলায়মান আলম শেঠ (জাতীয় পার্টি), আবদুল নবী (স্বতন্ত্র), বিজয় কুমার চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং মোহাম্মদ মহিবুর রহমান বুলবুল (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) :
কোতোয়ালী-বাকলিয়া নিয়ে গঠিত এ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ আসনে তিনিসহ ভোটের মাঠে থাকবেন ৭ জন। এরা হলেন— মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (আওয়ামী লীগ), ওয়াহেদ মুরাদ (ইসলামিক ফ্রন্ট), মিটল দাশ গুপ্ত (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ন্যাপ), আবু আজম (ইসলামী ফ্রন্ট), মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন (কল্যাণ পার্টি), সুজিত সাহা (তৃণমূল বিএনপি) এবং সানজীদ রশীদ চৌধুরী (জাতীয় পার্টি)।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর) :
এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন বাচ্চু। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ ৯ জন ভোটের মাঠে লড়বেন। এরা হলেন— মনজুর আলম (স্বতন্ত্র), মহিউদ্দিন বাচ্চু (আওয়ামী লীগ), ফরিদ মাহমুদ (স্বতন্ত্র) ফেরদাউস বশির (তৃণমূল বিএনপি), আলমগীর ইসলাম বঈদী (ইসলামী ফ্রন্ট), আবুল বাশার মো. জয়নুল আবেদীন (ইসলামী ফ্রন্ট), মিজানুর রহমান (সুপ্রিম পার্টি –বিএসপি), জহুরুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি), মো. আনিসুর রহমান (জাসদ)।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) :
২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এম এ লতিফ। যদিও তার বিরুদ্ধে জামায়াত-প্রীতি এবং দলের নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয়হীনতাসহ অনেক অভিযোগ চাউর হয়েছিলো একাধিকবার। এবারও অনেকটা সবাইকে তাক লাগিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এ আসনে তাকে ঠেকাতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন কাউন্সিলর থেকে সদ্য পদত্যাগ গ্রহণ করা জিয়াউল হক সুমন। এ দুই প্রার্থীসহ ভোটের মাঠে লড়বেন ৭ জন। এরা হলেন— এম আবদুল লতিফ (আওয়ামী লীগ), আবুল বাশার মো. জয়নুল আবেদীন (ইসলামী ফ্রন্ট), মহি উদ্দিন (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি), জিয়াউল হক সুমন (স্বতন্ত্র), দীপক কুমার পালিত (তৃণমূল বিএনপি), নারায়ন রক্ষিত (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি – এনপিপি) এবং উজ্জ্বল ভৌমিক (গণফোরাম)।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) :
এ আসনে পরপর তিনবার নৌকার টিকিট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সামশুল হক চৌধুরী এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়েছেন পটিয়া উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে সামশুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ওই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এ দুইজনের ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে’ যুক্ত হয়েছেন আরও ৬ জন। তাই এ আসনে ভোটের মাঠে দেখা যাবে মোট ৮ প্রার্থীকে।
এরা হলেন— মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), সামশুল হক চৌধুরী (স্বতন্ত্র), এমএ মতিন (ইসলামী ফ্রন্ট), এম এয়াকুব আলী (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন), নুরুচ্ছফা সরকার (জাতীয় পার্টি), কাজী মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন (ইসলামিক ফ্রন্ট), রাজীব চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি) এবং ছৈয়দ জয়নুল আবেদীন জেহাদী (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) :
আনোয়ারা-কর্ণফুলী নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে টানা চারবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তবে এ আসনে ‘স্বস্তিতে’ থাকলেও ভোটের লড়বেন তিনিসহ ৭ জন। এরা হলেন— সাইফুজ্জামান চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন (ইসলামিক ফ্রন্ট), আবদুর রব চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মকবুল আহম্মদ চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি), আরিফ মঈন উদ্দীন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), মৌলভী রশিদুল হক (খেলাফত আন্দোলন) এবং আবুল হোসেন (ইসলামী ফ্রন্ট)।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) :
চন্দনাইশ আসন থেকে হ্যাট্রিকের পথে মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও দল ভরসা করেছে তার ওপর। তবে তিনিসহ এ আসনে ভোটের মাঠে থাকবেন ৮ জন। এরা হলেন— নজরুল ইসলাম চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ (ইসলামী ফ্রন্ট), গোলাম ইসহাক খান (ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট –বিএনএফ), মোহাম্মদ আয়ুব (সুপ্রিম পার্টি – বিএসপি), আবু জাফর মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ (জাতীয় পার্টি), মোহাম্মদ আলী ফারুকী (তরীকত ফেডারেশন – বিটিএফ), আবদুল জব্বার চৌধুরী (স্বতন্ত্র), এবং আবুল হোছাইন (ইসলামিক ফ্রন্ট)।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) :
২০১৪ সালে প্রথম বারের মত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালেও ফের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন তিনি। আবারও টানা তৃতীয় বারের মত আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। ‘ত্রুটিযুক্ত’ ভোটার তালিকায় প্রার্থী তালিকা থেকে ছিটকে পড়লেও পরে আপিলে টিকে যায় এম এ মোতালেবের মনোনয়নপত্র। এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীসহ ভোটের মাঠে লড়বেন ৭ জন। এরা হলেন— আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী (আওয়ামী লীগ), এম এ মোতালেব (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ ছালেম (জাতীয় পার্টি), আলী হোসাইন (ইসলামী ফ্রন্ট), সোলাইমান কাসেমী (কল্যাণ পার্টি), মোহাম্মদ হারুন (ইসলামী ঐক্যজোট – আইওজে) এবং জসিম উদ্দিন (মুক্তিজোট)।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) :
কখনো মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা, কখনো নির্বাচনী কর্মকর্তাকে মারধর, কখনো অস্ত্র প্রদর্শন, কখনো দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আবার কখনো সাংবাদিক পিটিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বাঁশখালী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। ‘বিতর্কিত’ এই এমপিকে ঠেকাতে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি। এ আসনে তাঁরাসহ মোট ১০ জনকে ভোটের মাঠে দেখা যাবে। এরা হলেন— মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগ), মুজিবুর রহমান (স্বতন্ত্র), আবদুল্লাহ কবির লিটন (স্বতন্ত্র), খালেকুজ্জামান (স্বতন্ত্র), মামুন আবছার চৌধুরী (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি – এনপিপি), মহিউল আলম চৌধুরী (ইসলামী ফ্রন্ট), জিল্লুল করিম শরীফি (বাংলাদেশ কংগ্রেস), আশীষ কুমার শীল (বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি— ন্যাপ), আব্দুল মালেক (ইসলামিক ফ্রন্ট) এবং মো. শওকত হোসেন (ইসলামী ঐক্যজোট)।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী, রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল। চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে আজ সোমবার ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রতীক নিয়েই প্রার্থীরা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।