স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন আরফিন নগর বাজারে বাইপাস রোডের দক্ষিণ-পশ্চিম কন্যারে সানমার গ্রুপে পাহাড় কেটে পাঁচটি বহুতল ২৬তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায় আরফিন নগর স্যানমার গ্রুপের যে ২৬ তলা টাওয়ারটি নির্মাণ কাজ চলছে তার দক্ষিণ পাশে পাহাড় কেটে করা হচ্ছে বহুতল ভবন। বাহির থেকে যেন জনসাধারণ না দেখতে পারে সেজন্য করা হয়েছে উচু টিনশেডের বাউন্ডারি এবং যেখানে পাহাড় কাটা হয়েছে সেখানের নিচে ওয়াল দিয়ে ওয়াল এর উপরে টিন দিয়ে কিছু প্লাস্টিক তেলপার দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
হঠাৎ নগরীতে ভাড়ি বৃষ্টি হওয়াই আরফিন নগর স্থানীয় মানুষের নজরে আসেন পাহাড় কাটার দৃশ্যটি গত শুক্রবার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
বহুদিন ধরে নামিদামি কোম্পানি স্যননমার গ্রুপ এই ধরণের কাজ করবেন তা সত্যিই অবিশ্বাস। ভারী বর্ষায় যেকোনো মুহূর্তে সানমার গ্রুপের আরপিন নগর যে পাঁচটি ভবনটি নির্মাণ কাজ চলিতেছে তার দক্ষিণ পাশের ওয়ালগুলো ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন আরফিন নগর বাজারের পশ্চিম দক্ষিণ কন্যারে বাইপাস রোডের পাশে সানমার গ্রুপের একটি প্রজেক্ট বহুতল পাঁচটি টাওয়ার ২৬ তলা ওই ভবনটির দক্ষিণ পাশে কিছু পাহাড় কেটেছে আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিদর্শনে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি স্যানমার গ্রুপকে নোটিশ দিয়ে তাদেরকে আগামী চার নভেম্বর তারিখ শুনানীর জন্য ডাকা হয়েছে। তাছাড়া তাদের বহুতল ভবন নির্মাণের পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
অপর দিকে নগরীর ষোলশহরে আস্ত পাহাড় কেটে ২৫ তলা বিশিষ্ট দুটি টাওয়ার বানাচ্ছে আবাসন প্রতিষ্ঠান স্যানমার প্রপার্টিজ। ষোলশহর বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডানকান হিল কেটে এই টাওয়ার দুটি তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য ইতিমধ্যে শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সামনে কাটা হবে আরও গাছ।
এই সবকিছুই হচ্ছে কোনো অনুমোদন ছাড়াই। বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, এমনকি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো অনুমোদন।
ষোলশহর বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডানকান হিলের পাদদেশে মাটি কেটে চলছে স্যানমার প্রপার্টিজের টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ। সেই পাহাড় এখন পরিণত হয়েছে প্রায় বিরানভূমিতে। অথচ গাছ কাটার জন্য বনবিভাগের কাছ থেকে কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি। পাহাড়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো ছাড়পত্র।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে ষোলশহরের ডানকান হিলে ২৫ তলা বিশিষ্ট দুটি টাওয়ার বানানোর অনুমোদন দেওয়া হয় স্যানমার প্রপার্টিজকে। কিন্তু অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে কাজ শুরু না করায় অন্তত চার বছর আগে সেই অনুমোদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে।
এর আগে পাহাড়চূড়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী এরকম বহুতল ভবনের অনুমোদনও স্যানমার প্রপার্টিজ সিডিএর তৎকালীন কর্তাব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করে নিয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকার ২৪ জন বাসিন্দা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে স্যানমারের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ আনে। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ওই এলাকা ঘুরে স্যানমারের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা ও গণহারে গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও স্যানমারের কর্তাব্যাক্তিরা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।