এম.এইচ মুরাদঃ
চট্টগ্রামে দিন দিন আইসিইউ সংকটের পাশাপাশি আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন আইসিইউতে ভর্তি শত শত করোনা এবং অন্য জটিল রোগের রোগীরা।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৬ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬ জন নগরের ও ১০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। করোনা আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যু হলো ১ হাজার ১০ জনের। যার মধ্যে মহানগরের ৫৯৭ জন আর বাকি ৪১৩ জন বিভিন্ন উপজেলার। অন্যদিকে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮৫ জন।
বুধবার (৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এন্টিজেন টেস্টসহ চট্টগ্রামের এগারটি ও কক্সবাজারের একটি ল্যাবে ৩ হাজার ৬৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ২৮৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরেরই ৮৪৪ জন ও ৪৪১ বিভিন্ন উপজেলার। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরেরই ৬৪,৪৫৯ জন এবং ২১৯৭০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, চট্টগ্রামের উপজেলা পর্যায়ে আবারও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা । ১৪ উপজেলার মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় ৮০ জন, রাউজান উপজেলায় ৭৮ জন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৫৩ জন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৫১ জন, বোয়ালখালী উপজেলায় ৪২ জন, পটিয়া উপজেলায় ৩০ জন,লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলায় ২০ জন, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৮ জন, ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৫ জন, মিরশ্বরাই উপজেলায় ১৪ জন, সাতকানিয়া উপজেলায় ১০ জন, আনোয়ারা উপজেলায় ৮ জন এবং চন্দনাইশ উপজেলায় ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
করোনায় যখন মানুষ দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলেছে, তখন নতুন করে আইসিইউ শয্যার পাশাপাশি আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ সংকট দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট বা আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৭১টি। এর মধ্যে সরকারি ৪৩টি আর বেসরকারিতে ১২৮টি। রোগীর চাপ বাড়ায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বাড়াচ্ছে আইসিইউ শয্যা। কিন্তু সংকট তৈরি হয়েছে অ্যানেসথেটিস্ট (যাঁরা আইসিইউতে রোগী দেখাশোনা করেন) চিকিৎসকের। একমাত্র নগরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত পার্কভিউ হাসপাতাল ব্যতীত অন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যানেসথেটিস্ট নেই বলে জানা গেছে।
বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যা রয়েছে এ রকম সরকারি হাসপাতালে আরও তিন থেকে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি। সব শয্যায় রোগী ভর্তি। রোগীদের দেখাশোনা করছেন ১২ জন চিকিৎসক। চার ঘণ্টা করে শিফটে দুজন চিকিৎসক সব সময় থাকছেন। এখানে আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানান চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ১৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এখানে ১১ জন চিকিৎসক শিফটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আরও সাতটি বেড বাড়বে হাসপাতালে। এখন কোনোমতে চালানো গেলেও শয্যা বাড়ানোর পর চিকিৎসক না পেলে সংকট তৈরি হবে।
শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালেও তৈরি হয়েছে অ্যানেসথেটিস্ট চিকিৎসকের সংকট। করোনা রোগীর চাপ বাড়ায় কয়েকটি হাসপাতালে ইতিমধ্যে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। যদিও সেই তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাড়েনি ।