এম.এইচ মুরাদঃ
নগর যুবলীগের সম্মেলন ও কমিটিকে আ জ ম নাসির -নওফেল অনুসারীদের ঐক্য প্রতিষ্ঠার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কেন্দ্রীয় নেতারা। নগর যুবলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিখিলের বক্তব্যে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব এখন ওপেন সিক্রেট। কমিটি থেকে শুরু করে রাজপথের রাজনীতি, সবখানেই নগর আওয়ামী লীগের এই দুই অংশের বিভাজন নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন সময়। দুই গ্রুপে কিছুদিন পর-পরই সংঘর্ষ হয়, কেন্দ্রে নালিশ কিংবা কমিটি-পাল্টা কমিটি গঠনের নজিরও কম নয়।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের বক্তব্যে দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্ব ঘুঁছাতে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যের ডাক দেন যুবলীগের এই শীর্ষ নেতা। সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, এখানে মঞ্চস্থ নেতারা সবাই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এরপরও আমার চেয়ারম্যান লজ্জা পান, আমরা লজ্জা পাই, কষ্ট পাই। কেন জানেন? আমরা দেখতে পাই, এখানে নাছির ভাইয়ের নাম নিলে এক পাশ থেকে স্লোগান হয়, মহিবুল ভাইয়ের নাম নিলে অন্য পাশ থেকে স্লোগান হয়। নেতাদের মধ্যে ঐক্য না আসলে কর্মীদের মধ্যে একতা আসবে না। আপনারাই বলেন, এই নাছির ভাই ও মহিবুল ভাই কার আদর্শ ধারণ করেছেন? আপনারা কি শেখ হাসিনার আদর্শ ধারণ করেন নাই?
সোমবার (৩০ মে) নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকার কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে আয়োজিত নগর যুবলীগের সম্মেলনে দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি নাছির-নওফেল গ্রুপের রাজনীতি না করে শেখ হাসিনার আদর্শে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, বিএনপি আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, হুংকার দিতে চায়। নাছির ভাই, মহিবুল ভাই, আপনারা কি এসব দেখেন না? আমার কথায় হয়তো আপনারা মনে কষ্ট পাবেন। তবু বলছি, আপনারা এক হন। আমিতো এই চট্টগ্রামের খবর রাখি। চট্টগ্রামে রাজনীতি করলে নাছির গ্রুপ করতে হবে। না হলে চট্টগ্রামে থাকা যাবে না। চট্টগ্রামের রাজনীতি করলে মহিবুল গ্রুপ করতে হবে। না হলে চট্টগ্রামে থাকা যাবে না। এসব বন্ধ করেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা কি দেখেন নাই, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা-মাকে হারিয়ে, পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু আমরা এখানে গ্রুপিং করে সুন্দর একটি আদর্শকে, রাজনৈতিক দলকে গ্রুপিংয়ে বিভক্ত করছি। আমি দেখতে চাই, এই বীর চট্টলার মাটিতে যেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে মিছিলে নামে। যদি নাছির ভাই ও মহিবুল ভাইকে নিয়ে স্লোগান দিতে চান, তাহলে শুধু ওই দুইজনকে বসিয়ে স্লোগান দিবেন।
বাস্তবিক অর্থেই চট্টগ্রাম নগর যুবলীগকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করেছে। বোট ক্লাবের পাশে হওয়া সেই নির্যাতনের খবর আমরা সবাই জানি। কিন্তু তখন এ মহানগর যুবলীগ কোথায় ছিল? এই যুবলীগ যদি তখন এক থাকত, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। তাই সব নেতারা এক হতে বলে গেছেন। আমি সবাইকে বাস্তবিক অর্থেই এক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
কমিটি বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে কমিটি বাণিজ্যের কথা উঠেছে। আমি সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আমাদের চেয়ারম্যান মানবিক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলে শামস্ পরশ থাকা অবস্থায় কমিটিতে যোগ্য মানুষরাই আসবেন। এ যুবলীগ মাদক ও জুয়ার যুবলীগ না। তাই এখানে কমিটি বাণিজ্য হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। যদি কারও কাছ থেকে শোনা যায়, তাকে সঙ্গে সঙ্গে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে। নওফেল -নাসিরের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব ঘুঁছানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।