স্টাফ রিপোর্টার:
জব্বারের বলীখেলার জন্য প্রস্তুত লালদীঘি ময়দান
ঈদ উৎসবের শেষে আরেকটি উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে বৈশাখী মেলা। ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা (বলী খেলা) উপলক্ষে লালদীঘির মাঠ ঘিরে জমে উঠেছে তিন দিনের এই মেলা। ২৪ এপ্রিল সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলায় পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে শুরুতেই মেলা হয়ে উঠেছে সরগরম। তবে সবার আগ্রহ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে। কারণ প্রতীক্ষিত বলী খেলা যে শুরু হবে তখন। জব্বারের বলী খেলার এটি হচ্ছে ১১৪ তম আসর। বলী খেলাকে সামনে রেখে লালদীঘির ময়দানে প্রস্তুত সুউচ্চ মঞ্চ। ইতিমধ্যে বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলী খেলার মঞ্চ (রিং) তৈরি হয়েছে। খেলায় সারা দেশ থেকে কয়েক শ বলী অংশগ্রহণ করবেন।
জব্বারের বলী খেলাকে সামনে রেখে প্রতিবছরই জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজিত হয় মেলার। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার, সাথে ক্রেতারাও। করোনা মহামারীর কারণে দুবছরের বিরতি দিয়ে গত বছর মেলা অনেকটাই স্বরুপে ফিরে। যদিও বলী খেলা হয়েছিল মূল মাঠের বাইরে। এবার বলী খেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মূল মাঠেই।
২৪ এপ্রিল লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এবারের বৈশাখী মেলা শুরু হয়। ঈদের ছুটির মধ্যেই মেলাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য সাজিয়েছেন মেলাস্টলে। মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু–, হাতপাখা, শীতলপাটি, দা-খুন্তি, প্লাস্টিক সামগ্রী, ফুল, বিভিন্ন ধরণের মিঠাই, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাছের চারা, তামা-কাঁসা-পিতলের সামগ্রী, কাঠের ও বেতের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, দোলনা, মাছ ধরার জাল, মোড়া, পিঁড়ি, জলচৌকিসহ রকমারি পণ্যের সমাহার দেখা গেছে এবারের মেলায়। গৃহস্থালীর সব জিনিসপত্র পাওয়া যায় বলে নগরবাসী বিশেষ করে গৃহিনীরা অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার।
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কৃস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ ২৬ এপ্রিল চাঁটগাইয়া ঈদ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে যোগ করেন, বলী খেলা ছাড়া মেলা বসেছে মূল মাঠের বাইরে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। তিন দিনের বৈশাখী মেলায় সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটি শেষে নগরীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। মঙ্গলবার বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ।
আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এরই মধ্যে বলীখেলার ট্রফি, জার্সি ও থিম সংয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন তিনি। আয়োজক কমিটির সভাপতি চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন,‘মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় বলীখেলা ও পরদিন চাটগাঁইয়া উৎসবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে বক্সিরহাট এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা সময়ের পরিক্রমায় জব্বারের বলী খেলা নামে খ্যাতি অর্জন করে। পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখের ১২ তারিখে লালদীঘির ময়দানে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়।