স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের চকরিয়ায় মালিকের পনেরো লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য নিজের হাত কেটে আর চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে বন্ধুদের নিয়ে একটি ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে শেষমেষ রক্ষা পায়নি এক কর্মচারী। এক মাস আগে সংঘটিত ওই ঘটনাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি উদঘাটনের পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িত ওই কর্মচারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত মাসের ৪ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি তার কর্মচারী আবু বক্করকে চট্টগ্রামের বন্ধু জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য বলেন। পথিমথ্যে কোতোয়ালী এলাকায় একদল দুষ্কৃতকারী সেই টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় বলে আবু বক্কর পরে তার মালিককে জানায়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের হওয়ার পর প্রথমে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করলেও পরে সিআইডি’র নিকট তদন্তভারটি ন্যস্ত হয়।
জানতে চাইলে সিআইডি চট্টগ্রামের পরিদর্শক মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ঘটনাটি একটি ছিনতাইয়ের নাটক ছিল বলে সিআইডি’র তদন্তে উঠে এসেছে। আবু বক্কর আগেই জানতে পারে যে তার মালিক জয়নাল তার বন্ধুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে পাঠাবে। এতে বক্কর আগে থেকে ওই টাকা আত্মসাতের একটি পরিকল্পনা করে। পরে রাসেল নামে তার এক বন্ধুর সাথে বিষয়টি শেয়ার করে। পরিকল্পনা মতো আবু বক্কর তার বন্ধু রাসেলসহ অন্যদের নিয়ে ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করার পর একটি ছিনতাইয়ের নাটক সাজায়। সিআইডি পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি টাকাগুলো উদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি।
সিআইডি কর্মকর্তা শরীফ বলেছেন, ঘটনার দিন জয়নালের বন্ধু জাহাঙ্গীর তার এক কর্মচারীর মাধ্যমে আবু বক্করের কাছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকার একটি প্যাকেট হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই টাকা বক্কর নেওয়ার পর সোহেলের হাতে তুলে দেয়। সোহেল টাকা নিয়ে চকরিয়া চলে আসে। পরে আবু বক্কর নিজের হাত কেটে রক্ত বের করার পাশাপাশি নিজের চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে রাস্তায় পড়েছিল। পরে সে তার মালিক জয়নালকে জানায় টাকাগুলো ছিনতাই হয়েছে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এস আই মো. শাহাদাৎ বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাসেলের বড় ভাই সোহেল আগেই চট্টগ্রামে পৌঁছে। আবু বক্করের হাতে টাকা আসার পরে তা সোহেলকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। সে টাকাগুলো নিয়ে চকরিয়ার বাড়িতে চলে আসে। সেখানে রুবেল নামে তার এক ভাইয়ের হাতে কিছু টাকা ব্যবসা করার জন্য তুলে দেয়া হয়েছিল। পরে সিআইডি রুবেলের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা উদ্ধার করে। বাকী টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য সিআইডি আরও তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকে। সিআইডি উপ পরিদর্শক শাহাদাৎ জানান, গতকাল (শনিবার) রাতে পলাতক সোহেলকে ডবলমুরিং থানাধীন মনছুরাবাদে একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই সময় সোহেলের ঘরে বালিশের ভেতর লুকিয়ে রাখা ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, টাকাগুলো নিয়ে সোহেল চকরিয়া থেকে পালিয়ে মনছুরাবাদে স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপনে ছিল। বাকী টাকাগুলো সে খরচ করে ফেলেছে বলে সিআইডিকে জানিয়েছে।
সিআইডি’র হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হল- কর্মচারী আবু বক্কর(২৪), রাসেল ও তার দুই ভাই সোহেল (৩৫) ও রুবেল (২৬) এবং লিটন (২৫) নামে তাদের আরেক আত্মীয়। সবার বাড়ি চকরিয়া উপজেলায়।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রুবেল স্থানীয়ভাবে ডিলার ব্যবসার পাশাপাশি অনলাইন জুয়াসহ ক্যাসিনোর সাথে জড়িত।