স্টাফ রিপোর্টার:
নগরীর পাথরঘাটায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি জবরদখল ও আত্মসাতের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগে জানিয়েছেন এডভোকেট শফিক আহমদ এর সন্তানরা। বর্তমানে বসতভিটিতে প্রবেশ করতেও দেওয়া হচ্ছেনা তাদের। সুপ্রীম কোর্টের এ বিজ্ঞ আইনজীবী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় সন্তান রফিক আকবর ওরফে বাচাইয়া তার অপর ভাইবোনদের বসতভিটি জবরদখলে নিতে প্রবেশে বাঁধা, নানা নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সহোদর আবদুল হাই ওরফে শাহীন।
এডভোকেট শফিক আহমদ এর ৭ ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সর্বশেষ ছোট মেয়ের বয়স ৮বছর। ২০১৫ সালে শফিক আহমদ মারা যাওয়ার পর ছোট ছেলে শাহীন এর বসতঘর সন্ত্রাসী কায়দায় জবরদখল করে রাখা হয়। শাহীন এনিয়ে স্থানীয় মহল্লা কমিটির কাছে বিচার প্রার্থী হন। বর্তমানে সেটি ঝুলিয়ে রাখার পর অপর ভাই শামীম আহমদ এর ভাড়া বাসা জবরদখল করে রাখা হয়েছে। রফিক এভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে অন্তত ২০ কোটি টাকার পুরো বাড়িটি জবরদখল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানান শফিক আহমদ এর বড় মেয়ে মোশফিকা আহমদ।
তিনি জানান, আমার মরহুম বাবার ওয়ারিশ হিসেবে আমাদেরকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এনিয়ে বিচার বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এদিকে ছোট ভাই শামীম আহমেদ এর ভাড়া বাসা দখলে নেওয়ার পর পৈত্রিক ছোট্ট বসতঘরটিও কেড়ে নেয়ার নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গত ২০নভেম্বর শুক্রবার বাড়ির সামনে হঠাৎ অবৈধভাবে সিসি ক্যামরা বসানো হয়েছে। ঘরের সামনে দরজা বরাবর বিদ্যুত খুটিতে সিসি ক্যামরাটি রফিক লাগিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শামীম আহমেদ।
রফিক তার জবর দখলকৃত বাড়ি কিংবা গেটের সামনে ক্যামরাটি না লাগিয়ে কেন শামীমের ঘরের সামনে লাগিয়েছেন এর সদুত্তর দিতে পারেনি।
রফিক বলেছেন, কোতোয়ালী থানার অনুমতি নিয়েই সিসি ক্যামেরাটি লাগিয়েছে। এর পেছনে ভাই বোনরা দেখছেন বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। এজন্য সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে রফিক। তথ্য প্রযুক্তি আইনের লংঘন বলে ও জানান বিজ্ঞজনেরা। এডভোকেট শফিক আহমদ জীবিত থাকাবস্থায়ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ভাইবোনদের উপর নির্যাতন করে আসছিল রফিক। এবার স্বভাব পাল্টিয়ে পুরো ভিটাটি দখলে নিতে সহোদরদের নির্যাতন ও সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ওই বাড়িতে অচেনা লোকদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সুত্রটি জানায়, এডভোকেট শফিক আহমদ ৬৬/৬৭ সালে তৎকালিন সরকারের আমলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ৩২৪৭ শতাংশ জমি লিজ নেয়। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাশ্ববর্তি একটি প্রভাবশালী মহল তার লিজকৃত সম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে নেয়। পরে সেই জবরদখলকৃত সম্পত্তি লিজ নিয়েছে বলে দাবী করে আসছে তারা। সর্বশেষ তার দখলে থাকা ১৩৩১ শতাংশ বসতভিটিতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করে আসার পর ২০১৫ সালে ৪ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারনে মারা যান এডভোকেট শফিক আহমদ। তাছাড়া তিনি চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে সুপ্রীম কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন তিনি।
শফিক আহমদ এর ছেলে মেয়েরা অভিযোগে জানায়, মরহুম শ্রদ্ধেয় বাবা এডভোকেট শফিক আহমদ মারা যাওয়ার পর তাদেরই ভাই রফিক আকবর নানা ভাবে নানা কায়দায় কোটি টাকার বসতভিটি জবরদখলে নিতে আমাদের উপর নির্যাতন শুরু করে। সর্বশেষ এই ভিটি একাই লিজ নিতে প্রশাসনে বিশেষ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এজন্য তাদের উপর অকত্য নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি নারী নির্যাতনসহ নানা মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলজুলুম কাটাইবেন বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বহিরাগত সন্ত্রাসী জড়ো করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে রফিক অভিযোগ করেন শাহীন। বর্তমানে তাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শাহীন। এজন্য তিনি মানবাধিকার সংস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এডভোকেট শফিক আহমদ এর সন্তানদের অভিযোগ, বখাটে রফিক এখন সন্ত্রাসীদের গডফাদার সাজতে চাচ্ছে। এজন্য রীতি মতো বাড়িতে আসর বসিয়েছে। সন্ত্রাসী জড়ো করে নানা জনকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ২০ কোটি টাকার পুরো বাড়ি দখল করতে সফল হলে অন্য জায়গাও হাত দিবে আশংকা স্থানীয়দের। কতিপয় পুলিশের শেল্টার পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। সুবিচারের আশায় বর্তমানে আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানান তারা।