এম.এইচ মুরাদঃ
চট্টগ্রামের পটিয়া ও আনোয়ারায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাগামহীন ভুতুরে বিল দেখে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। করোনা দুর্যোগের কারণে দুই মাস যাবৎ কর্মহীন ও ঘরবন্দী থাকায় প্রায় লোকজনের আয় নেই। সেখানে ভুতুড়ে বিলের কারণে গুণতে হচ্ছে প্রকৃত বিলের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ অতিরিক্ত টাকা। বিশেষ করে গত এপ্রিল মাসের তৈরি ভুতুরে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন উপজেলার হাজার হাজার গ্রাহক।
অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ইচ্ছে মতো রিডিং বসানোর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে করে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ গুণতে হচ্ছে।
বিগত কয়েক মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে পটিয়া ও আনোয়ারা পল্লীবিদ্যুৎ অফিস গত এপ্রিল মাসে হাজার হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে “আপনার গত বছরের একই সময়ে /একই মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ভিত্তিতে গড় বিল প্রণয়ন করা হলো। কোন অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তীতে তা সংশোধন/সমন্বয় করা হবে” এমন সীল দিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেন। বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে গ্রাহকরা অভিযোগ জানালে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস আগামীমাসে সমন্বয় করা হবে বললেও এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের মতে পল্লীবিদ্যুৎ একবার যে বিলের বোঝা গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় তা বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে আদায় করেই ছাড়ে। গ্রাহকরা এই গড়মিল বিলের ব্যাপারে অফিসে গিয়ে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিলেও তার কোন প্রতিকার পায়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভৌতিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আনোয়ারার সালাহ্উদ্দীন লিপু নামে এক এডভোকেট তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির বিরুদ্ধে আনোয়ারাবাসী রুখে দাঁড়ান লিখে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলে সেখানে অসংখ্যা ভুক্তভোগী গ্রাহকরা পল্লীবিদ্যুৎ এর বিরুদ্ধে কমেন্ট করে তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।
পটিয়ার হুলাইন গ্রামের আরেক বিদ্যুৎ গ্রাহক জাবেদুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎতের মনগড়া বিল এবং হয়রানির ব্যাপারে একাধিক জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলেও ঘাপটি মেরে বসে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন ধরণের শাস্তি বা সচেতনতা না হওয়ায় কোন ধরণের সুফল পাচ্ছে না সাধারন গ্রাহকরা। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আনোয়ারার এক পোল্ট্রি ফার্মের মালিক থেকে জানা যাই , তার ফার্মটি গত বছরের অক্টোবর থেকে গড়ে উঠেছে করোনা এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা কারণে এপ্রিল , মে মাসে ফার্ম বন্ধ ছিলো অথচ তাঁর বিদ্যুৎ বিলের কপিতে এপ্রিলের বিলের কাগজে আট হাজার টাকা দেওয়া হয় ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত এক ইলেট্রিশিয়ান বলেন , এই ভাবে চলতে থাকে এই অনিয়ম গুলো সরকারী অফিস হওয়াতে এই অভিযোগ গুলোর কোন সমাধান অতীতেও হয়নি ।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল নুর চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” স্লোগানকে সামনে রেখে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৯ সালে আনোয়ারাকে শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয়। কিন্তুু গ্রাহকদের উপর নানাভাবে হয়রানি ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এবং গ্রাহকদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তিনি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে আনোয়ারা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে আমাদের এক প্রতিনিধি গেলে আনোয়ারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বেলায়েত হোসেনকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মু্ঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের জিএম মোবারক উল্লাহ বলেন, লকডাউনের কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডার লেখা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতবছরের ওই মাসের বিদ্যুৎ বিলের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। এটা দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। পরবর্তীতে যোগাযোগ করে গ্রাহকরা সমন্বয় করতে পারবেন।