আজিজুল হক সৌরভ:
১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার
হাইদগাঁও গ্রামের পাহাড়ী এলাকার শ্রীমাই
বুদবুদিছড়া নামক স্থানে প্রথমে এই
গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। ওই বছর থেকেই
পর্যায়ক্রমে কয়েক দফা প্রাথমিক জরিপ ও খনন
কাজ চালানো হয় এবং গ্যাস প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে
এসে ১৯৫৩ সালের দিকে খননকৃত গ্যাস কূপের
নাভিপথে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সীসা ঢালাই করে
দেয় সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্রিটিশ কোম্পানিটি। ১৯৫৫
সালের আগস্ট মাসে হাইদগাঁও বুদবুদি ছড়া এলাকায়
আবার গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। বার্মা অয়েল
কোম্পানি সে গ্যাস উত্তোলনের জন্য কূপ
খনন করে। পরবর্তীতে পেট্রোবাংলা ও
বাপেক্সের অবহেলায় প্রাপ্ত গ্যাস খনি
থেকে গ্যাস উত্তোলন আর সম্ভব হয়নি।
এখনো বুদবুদি ছড়া ও পাহাড়ী ১০ কিলোমিটার
এলাকাজুড়ে নির্গত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস।
বুদবুদিছড়া গ্যাসক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যায়,
পাহাড়বেষ্টিত গ্যাসক্ষেত্রে পূর্বে খননকৃত
স্থান থেকে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে এবং
ঝলছে। পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার
পানিতে বুদবুদ করে গ্যাস বের হতে দেখা
গেছে। দীর্ঘ ৬০ বছর পর আবারো একই
স্থানের ৫ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় বসত
বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে মিলে
গ্যাসের সন্ধান। সরকারী নজরদারী ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে
পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামের গহীন
অরণ্যে অবস্থিত ‘বুদবুদি ছড়া’ হতে পারে
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম বিচরণ
ক্ষেত্র।
দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি
এবং পৃষ্ঠপোষকতা। পাহাড়ী ঝর্ণা, ছোট লেক,
বন্য প্রাণী এবং জ্বলন্ত গ্যাসের ‘বুদবুদ’
উদগীরণ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের
জন্য হতে পারে মনোমুগ্ধকর
প্রাকৃতিক নান্দনিকতার শ্রেষ্ঠ মেলবন্ধন।
স্থানীয় ভাষায় এ অঞ্চল ‘বুদবুদি ছড়া’ নামে খ্যাত।
পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামের শেষপ্রান্তে
এর অবস্থান।
যথাযথ প্রচার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত
উন্নয়নের অভাবে এ প্রাকৃতিক
স্বর্গরাজ্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে
এক প্রকার অজানা-ই রয়ে গেছে। শুধুমাত্র
পটিয়ার মানুষজনের কাছে কিছুটা পরিচিতি
থাকলেও চট্টগ্রামের মানুষজন এ সর্ম্পকে
তেমন জানেন না। এ যেন এক কল্পনার রাজ্য। পাহাড়ের মাঝে
মাঝে বিশাল গিরিখাত, তার মাঝে বয়ে যাওয়া বহমান
লেক আর পাহাড়ি ছড়া। পানির ছড়া পেরিয়ে বনের
গহীনে আবিষ্কার করতে পারবেন
পাহাড়ী চায়ের দোকান আর সেখানেই
পেয়ে যাবেন এক কাপ চায়ের মজা। একে
একে পাড়ি দিতে পারবেন সব পাহাড় পর্বত।
লোকালয় ফেলে গহীন থেকে গহীনে,
পানির ছড়া বেয়ে হেঁটে যাওয়া। হঠাৎ
তীব্র গরম। বুঝতে পারবেন পৌঁছে
গেছেন সেই কাঙ্খিত জায়গায়।
এদেশে নাকি প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাব নেই!
ব্রিটিশরা দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে
যেই কয়েকটি বিশাল তেলের খনিকে সীসা
ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল তার একটি এই
বুদবুদি ছড়া। প্রায়ই এখানে গ্যাসের দাবানল ছড়িয়ে
পড়ে। যেন স্বর্গের মাঝে এক বিশাল নরক!
আপনি চাইলে মাটি খুঁড়ে দিয়াশলাই দিয়ে
জ্বালাতে পারবেন আগুনও! আপনি পাবেন
এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
একদিকে গহীন অরণ্য দাবিয়ে বেড়ানো বনজ
প্রাণীর সাথে ফ্রি গ্যাস সাপ্লাইয়ে তরতাজা
রান্নার সুযোগ বাংলাদেশের অন্য কোন পর্যটন
স্পটে পাওয়া দুষ্কর। ১০-১২ মাইল গহীন অরণ্য
আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বুনো পেয়ারা, লেবু
এবং বুনো হাতির মিতালী মন ভালো করার এ
যাদুকরী উপাদান মিলবে এখানে।
যাতায়াত ব্যাবস্হা:
চট্টগ্রাম শাহ আমানত ব্রীজ (কর্ণফুলী ৩য়
সেতু) সংলগ্ন বাস স্ট্যান্ড হতে পটিয়াগামী
যেকোন বাসে/বিআরটিসি বাসে করে পটিয়া
ডাকবাংলোর মোড় নামবেন। এরপর পটিয়া
ডাকবাংলো মোড় হয়ে টেম্পু, টেক্সী-
সিএনজি করে যাওয়া যায় এ স্পটে। রয়েছে
স্থানীয়দের বিভিন্ন খাবারের দোকান।
রাত্রি যাপনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ফিরতে
হবে সন্ধ্যার আগেই। কারণ, সন্ধ্যা নামার আগে
না ফিরলে বন্য হাতি, মোরগ কিংবা
শেয়ালের দৌরাত্ম উপভোগ করা
গেলেও অনেক সময় তা সুখকর নাও
হতে পারে। সমস্যা থেকে উত্তরণে
প্রয়োজন প্রশাসনের নজরদারী এবং নিরাপত্তা
ব্যবস্থা জোরদার করা। পর্যটক টানতে আবাসন
সমস্যার সমাধান জরুরী সবার আগে।