স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। ১০ নভেম্বর চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন সেই আলোচনা আরও বেড়ে গেছে। ফলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অতীতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নানামুখী কর্মকাণ্ডের কথা চলে আসতে শুরু করেছে এসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। যার ফলে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক ইউনিয়নে পুরোনোতেই ভরসা খুঁজছেন আর অনেক ইউনিয়নে পরিবর্তনের বিকল্প খুঁজছেন ভোটাররা। আবার অনেক ইউনিয়নে আসতে পারে কিছু নতুন মুখ।
আশিয়া ইউনিয়ন: এই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন ছয়জন। এর মধ্যে গেল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী চেয়ারম্যান এম এ হাসেম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। গেল নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাঁর এলাকায় তেমন কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড কিংবা উন্নয়নমূলক কোনো কাজ চোখে পরার মতো ছিল না। সে ক্ষেত্রে কোনো কারণে এম এ হাসেম দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়লে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান উদ্দিন বশির দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়াও রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলামুর রহমান মন্জু, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী, এম সাইফুদ্দিন ও অ্যাডভোকেট বেলাল উদ্দিন।
কাশিয়াইশ: আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির আহমেদ চৌধুরী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ কাসেম, যদিও তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। তিনি গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে ৫ম বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ইউনিয়নে যদি কোন ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে তাহলে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন জহির আহমেদ চৌধুরী। এছাড়াও সাবেক ছাত্র নেতা গাজী আজগরসহ এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তিনজন।
জিরি: এই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আর হারুন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিমুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম টিপু এবং ফরিদুল আলম।
কুসুমপুরা: দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এজাজ চৌধুরী, বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহিম বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া ডালিম, মোহাম্মদ এমরান মনা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসাইন রানা ও আবু সুফিয়ান টিপু। তবে এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এজাজ চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এটি এক প্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়।
কোলাগাঁও: এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আহম্মদ নুর, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা এবং বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ কাসেম রাসেলের নাম জোরে শোরে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হারুন ও আবু তাহেরের নামও রয়েছে। তবে যুবলীগ নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী অথবা মোহাম্মদ রাসেলের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে তারা দুজন ইউনিয়নের বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয়, উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রেখে কাজ করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের হওয়া সত্ত্বেও গেল নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া আহম্মদ নুরকে বেগ পেতে হতে পারে। কোন কারণে সে যদি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয় সে ক্ষেত্রে আহম্মদ নুরের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হাবিলাসদ্বীপ: এই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ফৌজুল কবির কুমার। তিনি গতবারও এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এই ইউনিয়নে জনসমর্থন ও জনমত জরিপেও অন্যান্য প্রার্থীর চাইতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন ফৌজুল কবির কুমার। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবে বলে জানা গেছে। তবে কুমার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ নেতা মৃদুল নন্দী, আজগর আলী বাহদুর ও দিদারুল হক জসিমও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে।
জঙ্গলখাইন: ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ ইদ্রিচ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অসিত কুমার বড়ুয়া। আরও আছেন সাবেক চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন ফরিদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরতুজা কামাল মুন্সি, আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির মধ্য থেকে দু’জনের একজন দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।
ছনহরা: দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা সামশুল আলম দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও ওসমান আলমদার সরোয়ার উদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় এখনো পর্যন্ত ওসমান আলমদারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
ভাটিখাইন: জেলা যুবলীগ নেতা আবু সালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার শাহরু ও বর্তমান চেয়ারম্যান বখতিয়ার উদ্দিনের মধ্য থেকেই একজন পাবেন দলীয় মনোনয়ন। এ ক্ষেত্রে শাহরুকে ঘিরে ব্যক্তিগত নানা বিতর্ক উঠলেও দলের আনুগত্য, আবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নিজের ভোটকেন্দ্রে একচ্ছত্র আধিপত্য ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রেও তাঁর অবস্থান অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়ায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নিজস্ব বলয়ের কোন ভোটকেন্দ্র না থাকাসহ রাজনৈতিক নানা কারণ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনও।
কচুয়াই: এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্র নেতা ও উপজেলা আওয়ামীগ নেতা ইনজামুল হক জসিম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল খালেক রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে। তবে কোন ঘটনা না ঘটলে জসিমের মনোনয়ন বলাচলে নিশ্চিত। যদিও উপজেলা যুবলীগ নেতা এনামুল হক মজুমদার মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সাজেদা বেগম ও ঋষি বিশ্বাসের নাম ও শোনা যাচ্ছে।
খরনা: সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম কারা পরির্দশক আবদুল হান্নান লিটন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হওয়ায় দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মনজুরুল আলমও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
ধলঘাট: মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী আবুল বশর ও বর্তমান চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ। তবে দলীয় ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় উপযুক্ত প্রার্থীর সংকটে মন্দের ভালো হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এটি একপ্রকার নিশ্চিত। এছাড়াও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রুবেল ও আবদুল আজিজ রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশায়।
শোভনদণ্ডী: এই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এহসানুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খালেদ দুজন মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে মনোনয়ন তালিকায় এক নম্বরে আছেন আলমগীর খালেদ। যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান এহসানুল হকের ওপর নানা সময়ে এলাকায় নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। তা ছাড়াও আছেন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দীনের নামও।
দক্ষিণ ভূর্ষি: ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিমের বিকল্প কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই তিনি আছেন মনোনয়ন দৌড়ে আরও এগিয়ে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছৈয়দের নাম শোনা যাচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম কোনো কারণে যদি বাদ পড়েন তাহলে মোহাম্মদ ছৈয়দের ভাগ্য বদলে যাবেন এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাইদগাঁও: মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা বি এম জসিম। এছাড়াও আছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম জুলু ও জিতেন গুহ।
কেলিশহর: বিকল্প কাউকে খুঁজে পাওয়া না গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান সরোজ সেন নান্টুর হাতে উঠতে পারে আবারও নৌকা প্রতীক। তবে যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বাচা, সুমন চক্রবর্তীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বড়লিয়া: বর্তমান চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম সানু ও নুরুল আবছারের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও আছেন ইউনুস তালুকদার।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো দলের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম হলে হতেও পারে।
উল্লেখিত প্রার্থীদের বিপরীতে যারা রয়েছেন, তাদের অনেকে মাঠে তুলনামূলক জনপ্রিয় বা শক্তিশালী প্রার্থী হলেও বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কারও ক্ষেত্রে দুর্বল কেউ বা বিতর্কিত হওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আবার কাউকে নিয়ে জনপ্রিয়তার সংকট থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নে বিশ্বস্ত ও আনুগত্য হওয়ায় এগিয়ে রয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৫ নভেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ২৯ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ৬ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর।