মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামের টেরিবাজারে মারধরের শিকার হয়ে এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু! অভিযোগ পুলিশের দিকে, পুলিশ বলছে হার্টঅ্যাট্যাক


প্রকাশের সময় :৩০ এপ্রিল, ২০২০ ১২:১৬ : পূর্বাহ্ণ

আজিজুল হক সৌরভঃ

বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজারের এক বস্ত্রকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম গিরিদারি চৌধুরী (৬০)। তিনি মোহাদ্দেছ মার্কেটের নিচতলায় প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের স্টাফ।

প্রত্যক্ষদর্শী টেরীবাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রার্থনা বস্ত্রালয় নামের দোকানের অংশবিশেষ খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন গিরিদারি। এরই মধ্যে বকশিরহাট বিটের সহকারী উপ-পরিদর্শক কামরুল এবং সমিতির নিয়োগ দেওয়া কর্মী কফিল উদ্দিনসহ কয়েকজন ওই দোকানের সামনে যান। একটু পরই দেখি গিরিদারি নামের বয়স্ক লোকটিকে নিয়ে যাচ্ছেন এএসআই কামরুল এবং কফিল উদ্দিন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভীতসন্ত্রস্থ গিরিদারি চৌধুরী হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন। তবে পুলিশ বলছে, কেউ তাকে একটি টোকাও দেয়নি। কাপড় চুরি করে পালানোর সময় স্থানীয়দের সহায়তায় হাতেনাতে ধরে তাকে বকশিরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে আনার পর ভয়ে তিনি হার্টঅ্যাটাক করেন। এরপর চমেক হাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই কথা বলেন টেরিবাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মাসুদ আলম। বুধবার (২৯ এপ্রিল) রাতে একাত্তর বাংলা নিউজকে মাসুদ বলেন, করোনার কারণে টেরিবাজারের সমস্ত দোকান বন্ধ। এ অবস্থায় ইফতারের মিনিট পনের আগে দেখতে পাই দুইজন লোক রিক্সায় দুটি কাপড়ের বস্তা তুলছেন। আরো দুই বস্তা কাপড় নিচে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের জিজ্ঞেস করলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তারা। এক পর্যায়ে টহল পুলিশ এলে একজন পালিয়ে যায়। অপরজনকে কাপড়ের বস্তাগুলোসহ পাশের ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। আমিও যাই তাদের সাথে। এসময় আমার আরেক সহকর্মী কফিল উদ্দিনও ছিলো।

মাসুদ জানান, পুলিশকে গিরিদারি চৌধুরী, প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের কর্মচারী বলে তিনি পরিচয় দিলেও কাপড়গুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেননি। এক পর্যায়ে পুলিশ দোকান-মালিককে ফোন দেওয়ার জন্য বলে তাকে। মোবাইল ফোন নিয়ে টিপাটিপি করার সময় নামাজ পড়ার স্থানে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি।

মাসুদ বলেন, আমি নিজেই তাকে সেখান থেকে উঠাই এবং কিছুক্ষণ পর তিনি আবারও পড়ে যান। এ অবস্থায় পুলিশ আমাকে বলেন, লোকটি হয়তো ভয় পেয়েছেন, তাকে রিক্সায় তুলে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। রিক্সায় তোলার সময় দেখি তিনি আবার পড়ে যান। এরপর পুলিশ এবং জড়ো হওয়া লোকজনের সহযোগিতায় আমি নিজেই তাকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে ভর্তি করি। চলে আসার পর জানতে পারি লোকটি মারা গেছেন।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন মারধরের বিষয়টি সঠিক নয় জানিয়ে বলেন, কর্মচারীকে সেখানকার লোকেরাই আটক করে। পরে টহল পুলিশ গেলে তাদের অবহিত করা হয়। এছাড়া পুলিশ তাকে ফাঁড়িতে আনে নি। বক্সিবিটেরই খোলা এক স্থানে ৪ গাইট কাপড় রাখা হয়। গিরিদারী চৌধুরীর বয়স প্রায় ৬০ বছর, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী তাকে পুলিশ বা কেউ মারধর করেছেন এমন সাক্ষ্য প্রদান করেননি এখন পর্যন্ত। তদন্তের পর সব কিছু জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ওসি মহসীন বলেন, সেখানে তাকে তার মালিককে ফোন দিতে বলা হলে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। সাথে সাথেই তাকে প্রথমে রিকশা, পরে এম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি এর আগেও তিনবার স্ট্রোক করেছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে চিকিৎসা করে এসেছেন।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন,  লোকটির মৃত্যুর ঘটনায় ভিন্নধর্মী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছে কাপড় চুরি করে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ তাকে মারধর করেছে। আবার নিরাপত্তাকর্মী মাসুদসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পুলিশ তাকে কিছুই করেনি। আমি যেহেতু দেখিনি, তাই পুলিশের মারধরে মারা গেছে সেই কথা আমি বলতে পারি না। – যোগ করেন ব্যবসায়ী নেতা মান্নান।

এদিকে, টেলিফোনে ঘটনার বিবরণ দেওয়ার এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ জানান, একদল লোক তাকে এসে হুমকি দিচ্ছে, বলছে তাকে মেরে ফেলবে। আপনাকে কেন মারবে-এই প্রশ্নে তিনি জানান, তারা বলছেন আমি নাকি পুলিশ মেরেছে সেকথা বলতাম।

অন্যদিকে, প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের আরেক কর্মচারী নিখিল দাশ সাংবাদিকদের বলেন, টহল পুলিশের প্রধান এএসআই কামরুল ইসলাম গিরিদারিকে চড় মারেন। এসময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে।

সিকিউরিটি গার্ড মাসুদ আলম বলেন, গিরিদারি চৌধুরীর সাথে রিক্সায় কাপড়ের বস্তাগুলোর তোলার সময় পুলিশ দেখে পালিয়ে যাওয়া লোকটির নাম নিখিল দাশ বলে পরে তিনি জানতে পেরেছেন।

মৃত গিরিদারি চৌধুরীর বাসা নগরের টেরীবাজার এলাকায়। গ্রামের বাড়ি পটিয়ার চক্রশালায়। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। এক মেয়ে ও জামাতাও পুলিশের কনস্টেবল। জামাতা বর্তমানে র‌্যাবে কর্মরত বলে জানা গেছে।

একটি সূত্র জানায়, আজ গিরিদারি চৌধুরীর ছেলের ঘরের নাতির ষষ্ঠী ছিল। ষষ্ঠীর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সন্ধ্যার দিকে দোকান খুলতে যান তিনি। দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। সেখানে চড়-থাপ্পড়ের এক পর্য়ায়ে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, ঘটনা তদন্তে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসি কোতোয়ালী নোবেল চাকমা ও ওসি মহসীনকে সেই কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। কমিটিকে একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ট্যাগ :