স্টাফ রিপোর্টার:
‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার আর নেই। সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
খ্যাতনামা এই কথাসাহিত্যিকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসাধীন ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে। সেখানেই তিনি সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল কলকাতার এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সমরেশ মজুমদার। আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন সমরেশ মজুমদার। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অবস্থা আরও জটিল হয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা সমরেশ বসুদের পরবর্তী সময়ের লেখক সমরেশ মজুমদারের প্রথম গল্প ‘দৌড়’ ১৯৭৫ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর পরের দশকে সমরেশ মজুমদার একের পর এক স্মরণীয় ছোটগল্প, বড় গল্প, উপন্যাসের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাতকাহন, তেরো পার্বণ, উনিশ-বিশ, টাকা পয়সা, গর্ভধারিণী, অর্জুন মেজরের অ্যাডভেঞ্চার, এই আমি রেণু, অবশ, স্মরণাগত, দিন যায় রাত যায়, ফেরারি, তীর্থযাত্রী, বন্দি নিবাস, বুনো হাঁস, নিকট কথা, শ্রদ্ধাঞ্জলি, অনুপ্রবেশ, ওরা এবং ওদের মায়েরা, দাউ দাউ আগুন, হারামির হাতবাক্স, বিলে পালায়নি প্রমুখ।
তবে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে বেড়ে ওঠা সমরেশকে সম্ভবত বাঙালি পাঠক বেশি মনে রাখবে পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ এর জন্য। তাঁর সাহিত্যিক জীবনের একেবারে গোড়ার দিকে লেখা এই তিন উপন্যাস তাঁকে রাতারাতি পশ্চিমবঙ্গের একজন তারকা লেখকে পরিণত করে। পরবর্তী সময়ে এর চতুর্থ পর্ব ‘মৌষলকাল’ লেখেন সমরেশ।
শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে সমরেশ মজুমদারের লেখায়। যে কারণে তাঁকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এরই পাশাপাশি নিজের শৈশব–কৈশোরের চা–বাগানের জীবন, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতা থেকে ছোট ছোট চরিত্র ঘুরেফিরে এসেছে শুধু তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলোতেই নয়, ছোটগল্পেও। ঘরোয়া আড্ডার সময়ও খুব মনোযোগ দিয়ে কৈশোরের এই চরিত্রগুলোকে তুলে ধরতেন তিনি।
সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায়। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা–বাগানে। স্কুলজীবন কেটেছে জলপাইগুড়িতে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। সমরেশ মজুমদারের লেখালেখির শুরু গ্রুপ থিয়েটার ও নাটক লেখার মধ্য দিয়ে। তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে।
সমরেশ মজুমদারের উপন্যাসের বিষয়, গল্প ও গঠনশৈলী ছিল গতানুগতিক ধারার বাইরে। সহজেই তিনি দুই বাংলার পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক জানিয়েছেন।
‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান সমরেশ মজুমদার। এ ছাড়া আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ (বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড) পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।