এম.এইচ মুরাদ:
চট্টগ্রামের পটিয়া শিকলবাহা খালের ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মাণাধীন কালারপোল সেতুটি (আখতারুজ্জামান বাবু সেতু) দু’বার বর্ধিত সময়ের মধ্যেও ধীরগতির কারণে শেষ হচ্ছে না । ফলে এ সেতু দিয়ে চলাচলকারী পটিয়ার ৫ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতু নির্মাণে জনবল বাড়িয়ে যথাসময়ে কাজ শেষ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে শিকলবাহা খালের ওপর কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সে থেকেই আজ অবধি দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ সেতুটি কয়েকবছর পূর্বে শিকলবাহা খালে জাহাজের ধাক্কায় সেতুটির মাঝামাঝি অর্ধেক অংশ ভেঙে খালে বিলীন হয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে সেই বিলীন হওয়া অর্ধেক অংশে সড়ক বিভাগের অধীনে স্টিলের বেইলি সেতু নির্মাণ করে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের জন্য উপযোগী করেন। পরবর্তীতে হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর এমপির সার্বিক সহযোগিতায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে ২০১৭ সালে কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। আর এতে রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কালারপুল সেতু নির্মাণে টেন্ডার গ্রহণ করে। সে হিসেবে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করতে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এতে ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অদৃশ্য কারণে কাজের ধীরগতির আর যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দিন-মাস-বছর পেরিয়ে গেলেও আজ ও শেষ হয়নি নির্মান কাজ। যদিও সড়ক বিভাগ এই কাজের মেয়াদ দু’বার বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের ৩০ জুন বর্ধিত করে। বর্তমানে সেতু নির্মাণকাজে প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হলেও কাজে ধীরগতির কারণে দু’মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ার স্হানীয়দের মাঝে ক্রমশ ক্ষোভের সঞার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে আজ দুপুরে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নি কোন নির্মান শ্রমিককে কাজ করতে। তবে সেতুর পশ্চিম পাশের পিলারের উপর বসানো হয়েছে গার্ডার। আর পূর্ব পাশের পিলারের উপর গার্ডার বসানো হলেও সংযোগ সড়কটি মুল সেতু হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে মাঝ খানের অংশে সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
এসময় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, টিকাদার প্রতিষ্টানটি সবাইকে বৃদ্ধাআঙুলি দেখিয়ে তাদের খেয়াল খুশি মতো কাজ করছে। মাঝে মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ দেখা যায় আর মাঝে মধ্যে কাউকে দেখা যায় না।
খাল পারাপারের ঠিকাদার কর্তৃক দেয়া ২টি বোট ছিল । বোটের মাঝিদের সমসময় মতো বেতন না দেয়ায় বিগত ৫ মাস ধরে ১টি বোট বন্ধ রয়েছে। এ কারণে একটিমাত্র বোট দিয়ে পারাপার করতে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ জনসাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতা এম এ রহিম জানান, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে যথাসময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাচ্ছে না। যেখানে দৈনিক ৫০/৬০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা সেখানে শুধুমাত্র ৮/১০ জন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে তাতে আগামী ২০২০ সালেও কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
ইতিমধ্যে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী সেতুর নির্মান কাজ পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করে যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য সড়ক বিভাগের প্রতি নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও ঠিকাদার কতৃপক্ষের বা সড়ক বিভাগের টনক নড়েছে বলে মনে করছে না ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, ইতিমধ্যে এ সেতুর নির্মাণকাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি যথাসময়ে সেতু নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।