মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারাগার কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বন্দী রুবেল পালাতে সক্ষম হয়েছে, কারও প্ররোচনার প্রশ্নই আসে না: তদন্ত কমিটি


প্রকাশের সময় :১১ মার্চ, ২০২১ ৫:৫৩ : অপরাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদঃ

কারও প্ররোচনা বা যোগসাজশে নয়, চট্টগ্রাম কারাগার কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বন্দী ফরহাদ হোসেন রুবেল পালাতে সক্ষম হয়েছেন- উক্ত ঘটনায় কারা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে এ তথ্যই উঠে এসেছে।

বন্দী পালানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) ছগীর মিয়া জানান, সেদিন (৬ মার্চ) কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কারারক্ষী নাজিম উদ্দিনের গাফিলতির কারণে জেল থেকে পালাতে সক্ষম হয় বন্দি রুবেল। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের আগে তিনি (নাজিম উদ্দিন) বিশেষ ওয়ার্ডের তালা খুলে দিয়েছেন। তবে এ দায় শুধু তার নয়, জেলার (প্রত্যাহার) রফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সকলের।

তদন্ত কমিটির প্রধান ছগীর মিয়া জানান, কারারক্ষী নাজিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের (সূর্য উদয়কালে) আগে বিশেষ ওয়ার্ডের তালা কেন খুলে দেওয়া হয়েছিল, প্রশ্ন করলে কারারক্ষী নাজিম জেলার রফিকুল ইসলামকে দায়ী করছেন। আর জেলার রফিকুল ইসলাম দায়ী করছেন কারারক্ষী নাজিম উদ্দিনকে।

যে ওয়ার্ড থেকে বন্দী রুবেল পালিয়ে যান সেটি তো ২৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকে। তাহলে কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন সেদিন কেন তালা খুলে দিয়েছিলেন, প্রশ্ন করলে ডিআইজি (প্রিজন) ছগীর মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়৷ ভোরের আলো ফুটলেই জেলারের নিদেশে ওই ওয়ার্ডের তালা খুলে দেন কারারক্ষী। বন্দীরা নিচে নেমে (কর্ণফুলী ভবনের নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে) যান। বিকাল পাঁচটার দিকে তাদের আবার লকআপে ঢুকানো হয়।’

তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে কারা অধিদপ্তরের অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলার রফিকুল ইসলাম ঢাকায় অবস্থান করছেন। আমরা কাল ঢাকায় যাব। জেলার রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেব।’

কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন তালা খুলে না দিলে বন্দী রুবেল পালানোর সুযোগ পেতেন না বলে মন্তব্য করে ডিআইজি ছগীর মিয়া জানান, সেদিন ভোর সোয়া পাঁচটায় কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড (দুর্ধর্ষ বন্দিদের বিশেষ সেল) থেকে বের হয়ে ফাঁসির মঞ্চের পাশে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনে যায় রুবেল। কিন্তু ওই ভবনে ওঠার সিঁড়ির মুখে কারারক্ষী পাহারায় থাকলে সেদিন পালাতে পারতেন না রুবেল।

তদন্ত শেষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার এবং মেট্রো এবং জেলা এলাকার বন্দিদের জন্য পৃথক কারাগার নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে বলে জানান ছগীর মিয়া।

সুপারিশগুলোর কারণ ব্যাখ্যা করে ডিআইজি ছগীর মিয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাত হাজার বন্দি আছে। অথচ এর ধারণক্ষমতা ১৮৫৩ বন্দির। অপরাধের মাত্রার বিচারে জেলা এলাকার বন্দিরা সাধারণত সহজ-সরল প্রকৃতির হয়। মেট্রো এলাকার বন্দিরা দুর্ধর্ষ টাইপের হয়। ফলে কারাবন্দী হওয়ার পর শহর এলাকার বন্দীরা গ্রামের বন্দীদের দীক্ষা দেয়। এ কারণে গ্রামের বন্দি চোর হয়ে ঢুকলে কারাগার থেকে ডাকাত হয়ে বের হয়।’

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ ভোর সোয়া পাঁচটায় কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন তালা খোলার পর বন্দী রুবেল কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের নিচে নেমেছিলেন। এরপর প্রায় ২০০ গজ দূরে সংস্কারাধীন ৩২ নম্বর সেল ভবনের কাছে যান। ওই ভবনটি দোতলা থেকে পাঁচতলা করা হচ্ছে। ৩২ নম্বর সেল ভবনের মূল দরজা বন্ধ থাকায় তিনি জানালার গ্রিল দিয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠেন। সেখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওঠেন চারতলার ছাদে।
এরপর লাফ দিয়ে ৬০ ফুট ওপর থেকে গিয়ে পড়েন কারাগারের সীমানার ১৮ ফুট উঁচু দেয়ালের (প্যারা মিটার ওয়াল) বাইরে। ভবন থেকে ২২ ফুট দূরে এই দেয়ালের অবস্থান। একটু দূরে পাঁচ ফুট উঁচু আরেকটি সীমানাপ্রাচীর পার হয়ে ফরহাদ কারাগারের বাইরে যান। সেখান থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যান সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। ওই দিন ট্রেনে প্রথমে ঢাকা, পরে নরসিংদীতে ফুফুর বাড়িতে চলে যান।

ঘটনার তিন দিন পর ৮ মার্চ রাতে বন্দী রুবেল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার রহস্যভেদ করে তদন্ত কমিটি। সোমবার রাত ৮টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি প্রিজন ছগীর মিয়া জানান, বন্দী রুবেল গত ৬ মার্চ ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে কারাগার থেকে পালিয়েছে। কারাগারে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পায় তদন্ত কমিটি। ৯ মার্চ ভোরে নরসিংদীর ফুফুর বাড়ি থেকে জেল পালানো রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এরপর হত্যা মামলার আসামি রুবেল পুলিশকে জানায়, তার ধারণা, বিচারে অবশ্যই তার মৃত্যুদণ্ড হবে। মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতেই রুবেল মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যান।

প্রসঙ্গত, বন্দী রুবেল নিখোঁজের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয় খুলনা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) ছগীর মিয়া। বাকি দুই সদস্য হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ইকবাল হোসেন এবং বান্দরবান জেলা কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদ। গত ৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে এসে কাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি।

এর আগে কারাগার থেকে পালানো বন্দি রুবেল গত ৯ ফেব্রুয়ারি একটি সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় কারাবন্দী হন। রুবেলের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। ২০১৮ সালে রুবেল কারাগারে গেলে সেসময় দুইবার কারাগারের ড্রেনে ও ছাদে আত্মগোপন করেন। সেসময় ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার করেছিল কারা কর্তৃপক্ষ।

ট্যাগ :