এম.এইচ মুরাদঃ
করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০ চিকিৎসক এবং একজন স্টোরকিপারকে চাকরিচ্যুত করেছে চসিক কতৃপক্ষ।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এই ১০ চিকিৎসকসহ ১১ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। তাঁদের জায়গায় আরও ১০ চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করেন।
কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে অবস্থিত একটি কমিউনিটি সেন্টারে ২৫০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার খোলে। গত রোববার বিকেলে এই সেন্টারের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র নাছির উদ্দীন ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই আইসোলেশন সেন্টারে কোভিড এবং উপসর্গ থাকা ২৫০ রোগী এক সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারবেন। কাল বুধবার থেকে সেখানে রোগী ভর্তি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে আইসোলেশন সেন্টারের জন্য ১৬ জন চিকিৎসক এবং নার্স ও ব্রাদারসহ আরও ২০ জন, মোট মোট ৩৬ জনকে বাছাই করা হয়। তাঁরা সবাই সিটি করপোরেশন পরিচালিত বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মী। আইসোলেশন সেন্টার চালুর আগে তাঁদের তিন দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সিটি করপোরেশন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মকর্তারা এই প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু রোববার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের প্রশিক্ষণে ১০ চিকিৎসক এবং একজন স্টোরকিপার অনুপস্থিত থাকেন। অবশ্য ৬ চিকিৎসক ও নার্সসহ বাকি ১৯ জন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। টানা তিন দিন অনুপস্থিত থাকায় সিটি মেয়র ক্ষুব্ধ হন। আজ বিকেলেই তিনি ১০ চিকিৎসক ও ১ স্টোরকিপারকে করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন।
তারা হলেন- মেডিক্যাল অফিসার ডা. সিদ্ধার্থ শংকর দেবনাথ, ডা. ফরিদুল আলম, ডা. আবদুল মজিদ সিকদার, ডা. সেলিনা আকতার, ডা. বিজয় তালুকদার, ডা. মোহন দাশ, ডা. ইফতেখারুল ইসলাম, ডা. সন্দীপন রুদ্র, ডা. হিমেল আচার্য্য, ডা. প্রসেনজিৎ মিত্র ও স্টোর কিপার মহসিন কবির।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ. জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। চট্টগ্রামেও রোগীর সংখ্যা আশংকারুপে বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রোগীর চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে নির্দেশ অমান্য করে সিটি করপোরেশনের ১০ চিকিৎসক প্রশিক্ষণে আসেননি। তারা জাতির সাথে এটা অমানবিক একটা কাজ করেছে বলে আমি মনে করছি।
মেয়র নাছির উদ্দীন আরও বলেন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আইসোলেশন সেন্টারে এক সঙ্গে ২৫০ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছি। রোগীদের ওষুধ ও খাবার করপোরেশন বহন করবে। কিন্তু যাঁরা চিকিৎসা দেবেন তাঁদের মধ্যে ১০ জনই অনুপস্থিত। এটা ব্যথিত করেছে। জনস্বার্থে অর্পিত ক্ষমতাবলে ১০ চিকিৎসক ও একজন স্টোরকিপারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। করপোরেশনের নতুন ১০ চিকিৎসককে আইসোলেশন সেন্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই আদেশ আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম নগরের মধ্যে সবচেয়ে বড়, যেখানে ২৫০রোগী চিকিৎসা নিতে পারবেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১৪০ রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ কোভিড রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে সম্প্রতি চালু হয়েছে করোনা ইউনিট। সেখানে ১০০ কোভিড রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন। এর বাইরে ফৌজদারহাট হাসপাতালে ৩০ জন, ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ জন এবং হলি ক্রিসেন্টে ৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন।
কোভিড রোগী শনাক্তের দিক থেকে চট্টগ্রাম বাংলাদেশে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৪০৬ কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১২৪ জন। ঢাকার পর চট্টগ্রামে কোভিড রোগের বিস্তার বেশি ঘটছে। কিন্তু চিকিৎসাব্যবস্থা এখানে দুর্বল এবং অক্সিজেনের সংকট আছে। আগ্রাবাদের আইসোলেশন সেন্টার চালু হলে আরও বেশি কিছু রোগী সুচিকিৎসা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।