মোঃ সাইফুল ইসলামঃ
প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্ম শেষে বর্ষার আগমন। চারদিকে চলছে ফল উৎসব। ফল ব্যবসায়ীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়, বেড়েছে বেচাকেনা। সে সাথে চলছে ফল বিক্রির উৎসবও।
তবে গত বছর করোনায় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ বেচাকেনা সারতে পেরেছে চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা। যেখানে বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ লেনদেন হয় শুধু মাত্র মৌসুমী ফল বিক্রির মাধ্যমে। প্রতিবছর এই বাজারে ক্ষুদে ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা থাকে প্রায় ৪ থেকে ৭ কোটি টাকা এবং বড় ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ কোটি টাকা। করোনায় লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ ঘাটতি থাকায় ২০২১ সালে মৌসুমী ফল বিক্রির উৎসবে সে ঘাটতি পূরণ করতে চান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারী আড়ৎটির অবস্থান কোতোয়ালী থানাধীন বিআরটিসি মোড়ের ঠিক বিপরীতে যেটি বিশাল দুটি বাজার নিয়ে ফলমন্ডি নামে সমাদৃত। এখানে নতুন পুরাতন মিলে রয়েছ প্রায় ৫’শতেরও বেশী দোকান এবং আড়ৎ। মৌসুমী ফলের আগমনে আগের চেয়ে আরও বেশী ব্যস্ত সময় পার করেছেন এখানকার দোকনীরা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী সহ নানা প্রান্ত থেকে আসা পাইকারী ক্রেতাদের বেশ আগ্রহের জায়গা দখল করে আছে হিমসাগর আম। এছাড়া চাহিদা রয়েছে অন্যান্য মৌসুমী ফল গুলোরও।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুঁটছে ক্যারেট ভর্তি আম নিয়ে ক্রেতাদের যানবাহনে পৌঁছে দিতে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এবং রোববার ফলমন্ডিতে বাজার বসলেও মৌসুমী ফলকে ঘিরে প্রতিনিয়ত সরব রয়েছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই ফলের বাজার। সপ্তাহের এই দুই দিন লেনদেন হয় ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার এবং রোববার ফলমন্ডির প্রতিটি দোকানে লেনদেন হয় ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা।
তবে আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, আনারস সহ আরো নানাবিধ মৌসুমী ফলের প্রভাবে বর্তমানে নিয়মিত লেনদেন বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
শুধু মাত্র দেশের নানা প্রান্ত থেকে নয়, প্রতিবশেী ভারত, চীন, আফগানিস্থান, সাউথ আফ্রিকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ফল এই বাজারে। এই বাজার থেকে ফল সরবারহ করা হয় চট্টগ্রামসহ আরো বেশ কয়েকটি জেলা এবং উপজেলাগুলোতে। যার মাধ্যমে প্রায় দেশের এক কোটি মানুষের ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
ফলমন্ডিকে কেন্দ্র করে ৪টি স্তরে প্রায় ১২০০ কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন। মৌসুমী ফলের চাহিদা থাকায় নিয়মিত ১০০ ট্রাক দেশীয় ফল প্রবেশ করছে ফলমন্ডিতে। যেখানে ১২০০ থেকে ১৪০০ টন ফল থাকে যেগুলোর মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
করোনা এবং মেীসুমী ফলের প্রভাবে কমেছে বিদেশী ফলের চাহিদা। আগে যেখানে ৫০ কন্টেইনার বিদেশী ফল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হতো এখন সেখানে আমদানি হচ্ছে মাত্র ৫ কন্টেইনার।
ফলমন্ডিতে খুচরা বিক্রেতাদের পাশাপাশি অনেক মানুষকেও মৌসুমী ফল কিনতে দেখা গেছে। ফল কিনতে আসা জিইসি এলাকার তানিম জানান, হিমসাগর আমের প্রতি আলাদা ভালোলাগা থাকার কারণে এক ক্যারেট হিমসাগর আম কিনেছি। তিনি আরো জানান, ফলমন্ডিতে যথেষ্ট পরিমাণ মৌসুমী ফল রয়েছে এবং দাম অনেকটা নাগালের মধ্যে আছে।
তবে হিমসাগর আমের পাশাপাশি ফলমন্ডিতে আসতে শুরু করেছে অম্রপালী যেগুলো রুপালী আম নামে পরিচিত।
চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ব্যবসায়ী ও আড়তদার মোঃ ফোরকান একাত্তর বাংলা নিউজকে জানান, মৌসুমী ফলের একটা প্রভাব রয়েছে ফলমন্ডি বাজারে। তবে তুলনামূলক ভাবে দাম অনেকটা কম। অন্যদিকে বৈদেশিক ফলের প্রভাব অনেকটা কম হওয়ায় সেগুলোর দাম অনেকটা বেশী।
তিনি আরো বলেন, করোনার প্রভাবে ফল ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ততা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে যদি মৌসুমী ফল ব্যবসায় লোকসান না হয়।