এম.এইচ মুরাদঃ
পুরো পৃথিবীকে এখন শাসন করছে ছোট্ট একটি ভাইরাস যার নাম নভেল করোনা। নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে থমকে আছে জনজীবন। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট ও যান চলাচল। এ অবস্থায় কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন গরীব অসহায় দিনমজুরেরা এবং কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৩নং লেলাং ইউনিয়নের অসহায় দুস্থ, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, বিশিষ্ট দানবীর এবং অত্র ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহিন।
করোনাভাইরাসের পাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই তিনি বিভিন্নভাবে সচেতন করে চলেছেন তার এলাকার মানুষদের। মাইকিংয়ের মাধ্যমে তিনি তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াড, পাড়া, মহল্লা, হাটবাজার সহ মসজিদের ইমাম এবং মন্দিরের পুরোহিতদের দিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ আজ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ স্তব্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক যুগে প্রিয় মাতৃভূমির এমন পরিস্থিতি আর কেউ কখনো দেখেনি৷ ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে প্রায় ৬ কোটির মত মানুষ রয়েছে যারা অসহায়, গরীব দুঃস্থ। দিনে ১ বেলা খাবার জোটাতে যাদের হিমশিম খেতে হয়। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তারাই আজ সবচাইতে বেশি বিপদে। নেই কোনো আয়, রোজগার, তাই পেটেও নেই খাবার। এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। তারই অংশ হিসেবে অসহায় দুস্থ ও গরীব লোকদের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
তিনি নিজের অর্থায়নে এবং সরকারি ও লেলাং ইউনিয়নের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং বিশেষ করে প্রবাসীদের আন্তরিক ও আর্থিক সহযোগিতায় ইতিমধ্যে প্রায় ৮০০০ পরিবারকে এাণ সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। মোট দুই ধাপে যথাক্রমে ৫০০০ ব্যাগ এবং ৩০০০ ব্যাগ করে মোট ৮০০০ ব্যাগ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিটি ত্রাণ সামগ্রীর ব্যাগে ছিলো চাল, তেল, চিনি, আলু, চনার ডাল, পেঁয়াজ, লব, সাবান সহ বিভিন্ন সামগ্রী। এছাড়া নতুন করে আরও ১৫০০ ব্যাগ ত্রাণ সামগ্রী ১৫০০ পরিবারকে প্রদান করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যা দুয়েকদিনের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী প্রতিটা ওর্য়াডের ঘরে ঘরে পাঠানো হবে। সব হিসাব করলে ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫০০ পরিবার এই ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীর আওতায় এসেছে। এবং ইতিমধ্যেই প্রায় ৫৫ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি নিজস্ব অর্থায়নে এবং তহবিলে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আরও খাদ্য সামগ্রী অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিবেন বলে জানিয়েছেন।
শুধু তাই নয় তিনি তার ইউনিয়নের সামর্থ্যবান মানুষদের নিয়ে করোনা দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। যেটি ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া অর্জন করেছে এবং এক অন্যন্য নজির সৃষ্টির অপেক্ষায় আছে। এই সংগঠনে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন লেলাং ইউনিয়নেরই একদল সাহসী, সুশিক্ষিত ও উদ্যমী তরুণ প্রজন্ম। এবং আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ১৩নং লেলাং ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। লেলাং ইউনিয়নের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে। আর সবচেয়ে যারা বেশি অবদান রাখছে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং কিছু বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা। যে যেভাবে পারছে অনুদান দিয়ে চলেছেন।
তিনি এলাকায় যে সব ডাক্তার এবং সাস্হ্যকর্মী রয়েছে তাদের জন্য পিপিই, মাক্স, গ্লাবস সহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাবস্হা করেছেন। কৃষকরা শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিল না। তিনি প্রতিটি ওর্য়াডে তরুণ ও ছাত্রদের সমন্নয়ে কমিটি করে দিয়ে কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগিতা করে চলেছেন। যা ইতিমধ্যে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছে।
যখনই এই বাংলায় কোন দূর্যোগ আসে ঠিক তখনই সরোয়ার উদ্দিন শাহিন মানুষের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দিন রাত ঘুরে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌছে দেন। ঝর বন্যায় ঘর ভেঙ্গে গেলে ঘর বানিয়ে দেন। শীতে বস্ত্র দেন শীত নিবারণের জন্য। খাবার বিতরণ করেন প্রতি বছর পুরো
রোজার মাস জুড়ে। ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ- উল-আযহায় জাকাত প্রদান, দরিদ্রদের
মাঝে নতুন কাপড় বিতরণ এবং কুরবানী পশু মাংস কোন কিছুতেই বাদ রাখেননা দরিদ্র
অসহায় মানুষদের সেবায় এই প্রচার বিমূক সরোয়ার উদ্দিন শাহিন। অত্যন্ত মার্জিত এবং শান্ত স্বভাবের অনেকটা নিভৃতচারি সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরী শাহিন তার ভালবাসা দিয়েই জয় করেছেন লেলাংবাসীর মানুষের মন।
চেয়ারম্যান সরোয়ার শুধু খেটে খাওয়া দিন মজুরই নয় এবার তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন সে সব মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে যারা সরকারি ত্রাণের জন্য চক্ষু লজ্জায় দাঁড়াতে পারেন না কারো কাছে বা কোন সরকারি ত্রাণের লাইনে। মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেন না তাদের অভাব অনটনের কথা। তাই চেয়ারম্যান সরোয়ার শাহিন রাতের আঁধারে নিজে সে সব মানুষের খোঁজ খবর নিয়ে এসে পরে লোক চক্ষুর আড়ালে সে সব মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী বা কখনো নগদ অর্থ বিতরণ করে যাচ্ছেন। তার এই মহান কর্মযজ্ঞের পরেও কোথাও নেই তাঁর ত্রাণ বিতরণ কালে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো কোন ফটোসেশান এর ছবি। নেই কোন পত্রিকা অথবা টিভি মিডায়ার সামনে নিজেকে দানবীর সাজানোর নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা। অত্যন্ত নিভৃতে থেকে কি করে সত্যিকারের জনসেবা করতে হয় চেয়ারম্যান সরোয়ার শাহিন যেন তারই জীবন্ত উদাহরণ। মধ্য মার্চ থেকে চলছে তার নিরব ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শ্রমহীন এবং শ্রমজীবী কর্মহীন মানুষের জন্য। গত কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করেছেন নিন্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে তাঁর ত্রাণ বিতরণের এক মহতি কার্যক্রম। শুধু তাই নয় তিনি মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, হিন্দু সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের জন্যও ইতিমধ্যে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন। এবং তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে,তার এই ত্রাণ কার্যক্রম চলতেই থাকবে যতো দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীল পর্যায় না পৌঁছায়। তিনি বলেন, আমার এই সাহায্য সহযোগিতা থাকবে সবার জন্য উমুক্ত। কোন দল, গোষ্ঠী নয় মানুষের জন্যই আমার এই সামান্য প্রচেষ্টা। যদি মানুষের সেবা করার মাধ্যমে তাদের মূখে একটু হাসি ফোটাতে পারি এটাই হবে আমার পাওনা। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।
চেয়ারম্যান সরোয়ার শাহিন বলেন, এই সব কর্মযজ্ঞের সফলতার পিছনে আমার কোন অবদান আছে বলে আমি মনে করি না, মহান আল্লাহতালার করুনা এবং আমার এলাকার আপামর জনগণ এই সব কিছুর প্রথম দাবিদার। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না আমি শুধু বলবো আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী। অদূর ভবিষ্যৎতেও সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, যে তিনটি মানুষের কথা না বললেই নয়, যাদেরকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সবসময় কাছে পাচ্ছি তারা হলেন আমাদের সংসদীয় আসনে বার বার নির্বাচিত মাননীয় এমপি জনাব আলহাজ্ব নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি যিনি আমাকে বার বার ফোন করে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং যখন যা বলছি তখন তা সাথে সাথে ব্যবস্হা করে দিয়েছেন। আরেকজন হলো আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব হুসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আবু তৈয়ব মহোদয়, যাকে আমি সার্বক্ষনিক কাছে পেয়েছি যে কোন পরামর্শ এবং বিশেষ সহযোগীতায়। সর্বশেষ যার কথা বলব ওনি আমাদের এলাকার কেউ নন, কিন্তু তিনি আবার সবকিছু। তিনি আমাদের এই ফটিকছড়িকে নিজের ঘরের চেয়ে বেশি ভালবেসে ফেলেছেন। আমি যার কথা বলছিলাম তিনি আমাদের সবার প্রিয় ইউএনও সায়েদুল আরেফিন মহোদয়। আমাদের এই ফটিকছড়ি উপজেলায় এর আগে অনেক ইউএনও মহোদয়রা কাজ করে গেছেন কিন্তু আমার চোখে বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের মতো এত সফল এবং মানবতাবাদী সরকারি কর্মকর্তা আর দেখি নাই। রাতদিন এক করে তিনি ফটিকছড়িবাসীর জন্য এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমি ওনাকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এবং আমার এলাকার সর্বস্হরের জনগণের পক্ষ হতে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন ওনাকে সুস্থ রেখে সেবা করার তৌফিক দেন এই দোয়াই করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া ৩নং ওর্য়াডের এক বাসিন্দা চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন শাহিন সম্পর্কে বলেন, যেখানে সারা বাংলাদেশের সরকারি ত্রাণ চুরি করছে সরকারি ভাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত ত্রাণ কর্মসূচির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা, ঠিক সেখানেই আমাদের চেয়ারম্যান সরোয়ার শাহিনের মতো মানুষগুলো ব্যক্তিগতভাবে, সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণ এবং তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ত্রাণ সামগ্রী সঠিক এবং সততার সাথে পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে এবং চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সত্যিকারের সেবা দান কর্মকান্ড। তাও আবার কোন রকম প্রচার প্রচারণা ছাড়া। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এইসকল দানবীর এবং সৎ জনপ্রতিনিধিদেরকে এবং যারা এই কর্মযজ্ঞের সাথে সংযুক্ত আছে তাদের সবাইকে কবুল করে আরও বেশী বেশী অসহায়দের পাশে থাকতে পারে মতো তওফীক দান করুক এই প্রার্থনাই করি।