স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৩৭ একর জমিরওপর গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের অন্যতমপর্যটন কেন্দ্র ফয়’স লেক, যা কনকর্ডগ্রুপকে ইজারা দিয়েছে সংস্থাটি।
চুক্তিঅনুযায়ী, ইজারা বাবদ কনকর্ডের কাছেবছরে ২৫ লাখ টাকা পায় রেলওয়ে।২ঃ১অনুপাতে ইজারার এ টাকায় আবার ভাগবসায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ফলে এ জমি ইজারা দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েরআয় সাকুল্যে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা।অথচ এজমির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রতিবছর ১ কোটি ৯৮ হাজার টাকার করপরিশোধ করতে হচ্ছে।বছর বছর লোকসানহওয়ায় কনকর্ডের সঙ্গে ইজারা চুক্তিবাতিলও করেছিল রেলওয়ে।
এর বিরুদ্ধেরিট পিটিশন করে ফয়’স লেকের দখলএখনো নিজেদের হাতেই ধরে রেখেছেকনকর্ড।
কর বাবদ একদিকে প্রতি বছর মোটাঅংকের টাকা গচ্চা যাচ্ছে রেলের।
অন্যদিকেযেসব শর্তে রেলওয়ের কাছ থেকে জমিইজারা নিয়েছিল কনকর্ড, তার বেশির ভাগইমানা হয়নি।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশিনানাধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলেচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে কনকর্ড।
বিপরীতে ধারাবাহিক লোকসান থেকে বের হতেকনকর্ডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চেয়েওমামলা জটিলতায় ব্যর্থ হয়েছে রেলওয়ে।
এখন রেলের শীর্ষ কর্মকর্তা চুক্তি বাতিলনয়, বরং কীভাবে কনকর্ডের সঙ্গে করাচুক্তিকে লাভজনক করা যায়, সেই পথখোঁজার চেষ্টা করছেন।
কনকর্ডের সঙ্গে করাচুক্তির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গতসপ্তাহে (১৭ নভেম্বর) একটি কমিটি করেদিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়, যার সভাপতিকরা হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
ফয়’স লেকে কনকর্ড গ্রুপের বাণিজ্যিকস্থাপনার বিষয়ে ২০১৫ সালে নিরীক্ষাকরেছে রেলওয়ে অডিট অধিদপ্তর।
লেকেরপ্রবেশমুখের ডান পাশে সে সময় দোকান,হোটেল, রেস্ট হাউজের মতো ১২০টিস্থাপনার সন্ধান পেয়েছিল নিরীক্ষা দল।এসব স্থাপনার প্রতিটি থেকে প্রতি মাসেসর্বনিম্ন ৪ হাজার ও সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকাভাড়া আয় করে আসছে কনকর্ড গ্রুপ, যাচুক্তির শর্ত এবং ২০০৬ সালের রেলওয়েরভূমি বরাদ্দ নীতিমালার পরিপন্থি।
একই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কনকর্ডএন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড চুক্তিঅনুযায়ী ইজারার টাকাও ঠিকমতোপরিশোধ করছে না বলে উল্লেখ করা হয়।ফয়’স লেক কনকর্ডকে বুঝিয়ে দেয়াহয়েছিল ২০০৪ সালের মার্চে।
মার্চ ২০০৪থেকে মার্চ ২০১৪ সাল পর্যন্ত নথিপর্যালোচনা করে রেলওয়ে অডিটঅধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেখতে পান, চুক্তিরশর্ত অনুযায়ী ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকারেলওয়েকে কম দিয়েছে কনকর্ড।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তিকর্মকর্তার (পূর্ব) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,কনকর্ডের সঙ্গে করা চুক্তির অনুচ্ছেদ-৬(এফ)-এর শর্ত ছিল, প্রকল্প এলাকায়রেলওয়ের জন্য ২০০ বর্গফুটের ওবাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের জন্য১০০ বর্গফুটের অফিস ঘর নির্মাণ করেদেবে প্রতিষ্ঠানটি, যা এখন পর্যন্ত হয়নি।
একইভাবে লেকে যন্ত্রচালিত নৌকা চালিয়েপানি দূষণ না করার জন্য রেলওয়ের সঙ্গেচুক্তিবদ্ধ হলেও তা মানছেনা কনকর্ড ।
চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, রেলের অনুমোদনব্যতীত ইজারা নেয়া জমির আকার পরিবর্তনকরা যাবে না। আয় -ব্যয়ের হিসাব রাখতেআন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে।
চুক্তিতে থাকা এসব বিষয়ের কোনোটিইকনকর্ড গ্রুপ মানছে না বলে অভিযোগপূর্বাঞ্চল রেলওয়ের।
কনকর্ড গ্রুপকে রেলের জমি ইজারা দিয়েবছর বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান এবংচুক্তির একাধিক শর্ত লঙ্ঘনের কারণেইজারা চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করেছিলদশম জাতীয় সংসদের রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
এ সুপারিশের আলোকে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ইজারাচুক্তি বাতিলও করেছিল বাংলাদেশরেলওয়ে।
চুক্তি বাতিলের আদেশের পরপরই উচ্চ আদালতে এর বিরুদ্ধে দুটি রিটপিটিশন দায়ের করেন কনকর্ডএন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডেরব্যবস্থাপনা পরিচালকশাহরিয়ার কামাল।
রিট পিটিশন দুটি বর্তমানে শুনানির জন্যঅপেক্ষমাণ অবস্থায় আছে।
কনকর্ডের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করলেওএখন রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা কনকর্ডেরসঙ্গে আপসে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য গঠিত কমিটিএ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে বলে জানাগেছে। কমিটির সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজার সঙ্গেএকাধিকবার যোগাযোগ করেও এ বিষয়েকোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশরেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানবণিক বার্তাকে বলেন, ফয়’স লেক ইজারানিয়ে ইজারাদারের সঙ্গে রেলওয়েরজটিলতা দীর্ঘদিনের।
বছরের পর বছরথেকে ফয়’স লেক ইজারা দিয়ে রেলওয়েকেলোকসান গুনতে হচ্ছে। সমস্যাটি নিরসনেসম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে একটিকমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটিইপরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
ফয়’স লেকের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি বাতিলকরা হবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,ইজারাদার যদি আমাদের সঙ্গে করা চুক্তিরশর্তগুলো প্রতিপালন করে, তাহলে তো তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কোনো প্রশ্নই আসে না।