কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা চার দিনের ভারী বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢলে আজ বুধবার (২৮ জুলাই) কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে পাহাড় ধস।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও বন্যায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। জেলার অধিকাংশ গ্রামই এখন বন্যার পানিতে ভাসছে।
বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া আরো ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঈদগাঁও এলাকা থেকে ৩ যুবকের মৃতদেহ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগাহ পাড়ার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে ওমর ফারুক (২৩) ও মোহাম্মদ মোরশেদ (১৫) এবং নিহত দুই ভাইয়ের ভাগিনা দেলোয়ার হোসেন (১৬)। নিহত দেলোয়ারের বাবা একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার।
স্থানীয়দের বরাতে রামু ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা সৌমেন বলেন, “সকালে ঈদগাঁও দরগাহ পাড়া এলাকার স্থানীয় পাঁচ যুবক মিলে প্রবল বৃষ্টিতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে ঈদগাঁও খালের পানিতে নামে। এসময় তাদের মধ্যে দুইজন কূলে উঠতে সক্ষম হলেও বাকি তিনজন ভেসে যায়। পরে এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।”
তিনি বলেন, “খবর পেয়ে রামু ফায়ার স্টেশনের একটি দল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত নিখোঁজ তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সহায়তা চাওয়া হয়। পরে বিকাল ৪টায় রামু ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ‘প্রদীপ ডুবুরি দলের’ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে নামে এবং তাদের দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কিছুদূর এলাকা থেকে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।”
এছাড়া বন্যায় ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উখিয়া থেকে ৩ জন এবং মহেশখালী থেকে আরো ১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আজ বুধবার।
টেকনাফে পাহাড় ধসে বুধবার একই পরিবারের ৫ জন মারা যায়। পরে দমকলকর্মীরা পাহাড় চাপা মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুধবার বিকালে জানান, টানা বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজার জেলার ৪৪টি ইউনিয়নের ৪২৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার ৩শটি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, কক্সবাজার জেলার দুই প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহ সাগরে জোয়ার চলাকালে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।