মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এত বেশি মশা, বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়


প্রকাশের সময় :৩০ মার্চ, ২০২০ ৫:৩৭ : পূর্বাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদঃ

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ‘এডালটিসাইড’ ছিটানো বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অবশ্য নালা-নর্দমায় মশার ডিম বা লার্ভা ধ্বংসকারী ‘লার্ভিসাইড’ ছিটানো অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা। যদিও সাধারণ মানুষ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার ওষুধ ছিটাতেই দেখছেন না তারা। তাদের ভাষায়, পুরো মশক নিধন কার্যক্রমই যেন স্থবির হয়ে আছে। এতে নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে ঘনিয়ে আসা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।

শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন নালা-নর্দমায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা এবং পূর্ণাঙ্গ মশা। এখানে মশার উপদ্রব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বেশ কয়েকটি খালের মুখ বন্ধ আছে। এতে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় স্থির হয়ে আছে। এবং এসব স্থির বা আবদ্ধ পানিতেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও চলমান নালা-নর্দমার সংস্কার কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে সেখানেও স্থির পানির কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব।

এদিকে কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লেও মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্র্পোরেশনকে তিন কোটি টাকা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২৫ মার্চ ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম’ উপ-খাত থেকে ১ম-৪র্থ কিস্তি বাবদ এ অর্থ ছাড় করা হয়। অবশ্য এক মাস আগে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় মন্ত্রণালয়ে ২০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা চেয়েছিল চসিক। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া বরাদ্দের বাইরেও মশক নিধনে চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০১০) নিজেদের বাজেটে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে চসিক। এর মধ্যে ওষুধ সংগ্রহে তিন কোটি টাকা, ফগার ও স্প্রে মেশিন সংগ্রহে দুই কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে বাকি এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশক নিধনে ‘এডালটিসাইড’ (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) এবং ‘লার্ভিসাইড’ (ডিম ধ্বংসকারী) নামে দুই ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ‘এডালটিসাইড’ ছিটানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। এডালটিসাইড ছিটানো হয় ফগার মেশিন দিয়ে। এতে এক ধরনের ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ওষুধ ছিটানোর ফলে মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে এবং এতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এমন ধারণা থেকেই ওষুধটি ছিটানো বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘এডালটিসাইড আমরা ছিটাতে চাচ্ছি না। কারণ এতে আক্রান্তদের শ্বাসকষ্টে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে লার্ভি সাইড ছিটানো বন্ধ নেই। সেটা নালা-নর্দমায় ছিটানো হচ্ছে।’ মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ওষুধ কেনা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম বলেন, নালা-নর্দমায় আমরা প্রতিদিন লার্ভিসাইড ছিটাচ্ছি। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জীবণুনাশক ওষুধ ছিটাচ্ছি।

এদিকে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মশার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নালা-নর্দমায় জমাট হয়ে আছে পানি। সেখানে ডিম ছাড়ছে ‘ফাইলেরিয়া’সহ বিভিন্ন রোগের জীবণুবাহী মশা। বর্ষায় অতি বৃষ্টির ফলে এসব ডিম বা লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকায় ধ্বংস হয় না। তাই এসময়টাতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দিতে হবে।

নগরবাসীর সাথে আলাপকালে তারা মশা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। মোঃ ফোরকান নামের চকবাজার ছৈয়দশাহ্ রোড এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সরকার ছুটি দিয়েছে। রাতদিন এখন বাসায় আছি। কিন্তুু শান্তিতে নাই। মশার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে দিন যাচ্ছে। ফ্যান ছাড়লেও মশা যায় না। জন্মের পর এই প্রথম মশার এত উৎপাত দেখছি। দেওয়ান বাজার এলাকার বাসিন্দা রাজীব রাহুল বলেন, মশার জ্বালায় বাসায় ছুটির দিনগুলো অসহ্য হয়ে উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘মশা কেবল নালায় নয়। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত কোথাও মশার অত্যাচারে শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না।’ মুরাদপুরস্থ মোহাম্মপুর এলাকার বাসিন্দা মুনিয়া ইসলাম বলেন, বাসার একদম নিকটেই নালা। তাই এ এলাকায় মশার উপদ্রব একটু বেশিই। বর্তমানে এ উপদ্রব আগের চেয়ে হাজার গুণ বেড়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোশেনের লোকজনকে এখানে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখি না।

উল্লেখ্য, গতবছর সারাদেশে প্রকোপ বাড়ে ডেঙ্গুর। চট্টগ্রামেও আড়াই হাজারের অধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এর মধ্যে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৬৯৯ জন। চট্টগ্রামে মারা যান সাতজন। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ২০১৯ সালে এক লক্ষ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ২৪১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে ‘হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ ও কন্ট্রোল রুম এর বরাতে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ফলে করোনা আতংকের মধ্যেও ডেঙ্গুর প্রকোপ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই।

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ‘এডালটিসাইড’ এবং প্রায় ৮০ লিটার ‘লার্ভিসাইড’ মজুদ আছে চসিকে। ‘লার্ভিসাইড’ প্রতি ১০ লিটার পানিতে মাত্র ১০ মিলিলিটার মিশিয়ে ছিটানোর নিয়ম। ফলে পরিমাণে কম থাকলেও সেটা আশংকাজন নয়। তবে নতুন করে পাঁচ হাজার লিটার ‘লার্ভিসাইড’ এবং ২৫ হাজার লিটার ‘এডালটিসাইড’ সংগ্রহে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে।

ট্যাগ :