স্টাফ রিপোর্টারঃ
‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃতি থাকলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে ছিলো চট্টগ্রাম। তবে টানা একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে ভোল পাল্টে দিয়েছে চট্টগ্রামের। ফ্লাইওভার, রিং রোড, সৈকতের আধুনিকায়ন, টানেল, সড়ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ভোল পাল্টে দিয়েছেন। চট্টগ্রামবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগানো জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে বাঁচাতে নিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। তাছাড়া চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে বে-টার্মিনাল, মিরসরাই ইকোনমিক জোনের মত বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামে মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজও প্রক্রিয়াধীন। আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা থেকে আরও ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবায়িত প্রকল্পের মধ্যে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, বায়েজিদ-মুরাদপুর-লালখান বাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, স্টেশন রোড-দেওয়ান হাট ওভারপাস, পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ আউটার সিটি রিং রোড, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস রোড অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রামকেই প্রধান্যের তালিকায় রেখেছে সরকার।
চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী
সরকারের সফলতার মধ্যে অন্যতম হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। ফলে প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, বন্দর, বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেশের যেকোনো প্রান্তে অনায়াসে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরও কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও চট্টগ্রামে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান।
চট্টগ্রামে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, বায়েজিদ-মুরাদপুর-লালখান বাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, স্টেশন রোড-দেওয়ান হাট ওভারপাস, পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ আউটার সিটি রিং রোড, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন, বায়েজীদ-ফৌজদারহাট বাইপাস রোড অন্যতম।
কিছুদিন আগে দেশে শত সেতু উদ্বোধন হয়। এরমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫টি যার ৪২টি খাগড়াছড়িতে। কর্ণফুলীর তলদেশে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে দুই টিউব বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু টানেল। যার একটি টিউব গত ২৬ নভেম্বর ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ।
এছাড়াও চট্টগ্রামে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। যার মধ্যে বিমান বন্দর হতে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার খাল খনন, সংস্কার ও পুনরুদ্ধার করে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প, চাক্তাই হতে কালুরঘাট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রিভার ড্রাইভ রিং রোড, ১২টি খালের মুখে শক্তিশালী পাম্পসহ অটোমেটিক টাইডাল রেগুলেটর স্লুইস গেইট নির্মাণ কাজ অন্যতম। তাছাড়া কক্সবাজারে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর।
এদিকে দৃশ্যায়িত হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের বেশি রেল লাইনের কাজ। ইতোমধ্যে এই মেগা প্রকল্পের ৭৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৪ শতাংশ কাজ দ্রুত শেষ করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ চালু হলে শুধু পর্যটন খাতে সম্ভাবনা বাড়বে তা নয় লবণ, মৎস্য, কৃষিসহ অন্যান্য খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
সরকারের মেগাপ্রকল্পে বাড়ছে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক গুরুত্ব
চট্টগ্রাম হল দেশের অর্থনৈতিক সঞ্চালনের জীবনী শক্তি। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি ও ৮৫ শতাংশ রপ্তানি কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে চলছে বে-টার্মিনালের কাজ। চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্প্রসারণ করছে সরকার। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে মানসম্মত পর্যায়ে আনতে দফায় দফায় কেনা হয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বাঁশখালীর ও মাতারবাড়িতে হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে হচ্ছে দুটি ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো কর্ণফুলী নদীপাড়ের চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের বৃহত্তম এই বন্দর গড়ে উঠেছে প্রায় সাড়ে ৪০০ একর জমিতে। প্রতিবছর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে হিমশিম খেতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। তাই চট্টগ্রাম ইপিজেডের ঠিক পেছনেই আউটার রিং রোডসংলগ্ন সাগরপাড়ে প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এটি হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের আদলে এক আধুনিক বন্দর। বে-টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৪ মিটার ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ৫-৬ গুণ বড় হবে এই বে-টার্মিনাল। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। বে-টার্মিনাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশাসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের অবদান বিশাল। এই শিল্পে শ্রমিক অধিকার, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মানসহ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। করোনার সময় সংকটে পড়েছিল পোশাক খাত। ওই সময় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য তিন কিস্তিতে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। রফতানি আয়ের ওপর ৫% ভাগ শুল্ক রেয়াত পাচ্ছে রফতানিকারকরা। ফলে এত সংকটসময় সময়ের মধ্যেও পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি পেয়েছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ডের ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা শিল্পনগরীর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। বন্দর জেটি সুবিধা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ট্যুরিজম পার্কসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকছে এ মহাকর্মযজ্ঞে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষভাবে গড়ে তোলা এ অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২০ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৭ হাজার ৭১৬ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই চট্টগ্রামকে ঘিরে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তা সময়মত সম্পন্ন করা হলে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে যা এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে।
বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক উন্নয়নে সব সময় আন্তরিক। আমররা ব্যবসায়ীরা সব সময় যে সমস্যা নিয়ে গেছি, তিনি সমাধান করে দিয়েছেন। চট্টগ্রামে এখন বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলো আমাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে অনেক বেশি সহায়ক হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।
তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া হতে চাক্তাই খাল খনন প্রকল্প। ওয়াসার মাধ্যমে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার, রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামে মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর ই-গেট উদ্বোধন করা হয়েছে। ই-ভিসা চালু করার কথাও ভাবছে সরকার। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ, ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সীমান্তে যোগাযোগ সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় আরও ৩০ প্রকল্প
আগামীকাল রবিবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে—পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে তিনটি প্রকল্প। সেগুলো হলো— জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২নং পোল্ডারের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প (২য় সংশোধিত), কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ মোট ৩০ প্রকল্পর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের নেত্রী আগামীকাল চট্টগ্রামে আসছেন। এটা আমাদের জন্য পরম আনন্দের। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ হচ্ছে পলোগ্রাউন্ডে। এখানে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উজ্জীবিত। আমরা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সবাই মিলে এই আয়োজন করছি। এই সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সমাগম হবে।