স্টাফ রিপোর্টারঃ
নাম জ্যোতির্ময় ধর, একজন প্রতিষ্ঠিত প্রকৌশলী, থাকেন জার্মানিতে, উনিশ বছর পর স্বদেশে আসলেন। বাংলাদেশে পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে জার্মান ইন্সিটিউট অফ অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হয়ে। কিন্ত ভাগ্য তার প্রসুন্ন হয়নি। আসার এক মাসের মধ্যেই পড়ে গেলেন মহামারী করোনার লকডাউনে। সমগ্রদেশ লগডাউন। শহরের রাস্তাঘাট গাড়িশূন্য, চারদিক সুনসান নিরবতা। এ যেন এক অন্যরকম জীবন যাপন। একাকী ঘরে বসে থাকা দায়। এত কিছুর মাঝেও মন ছুটে যেতে চায় বাহিরপ্রানে।
কিন্তু বাহিরের চিত্র আবার ভিন্ন। রাস্তাঘাটে নিম্ন, অসহায় মানুষের হাহাকার, মধ্যবিত্তদের বুকফাটা চাঁপা ক্রন্দন। ভুখা কুকুরদের করুনসুর। এমন দৃশ্য দেখে চারপাশের প্রকৃতিও যেন থমকে আছে। এমন প্রতিচ্ছবি তাকে করে উত্থেলিত। হঠাৎ তার ব্যতিত মন ঘুমরে কেঁদে উঠে। দেশ ও দশের এমন সংকটাপন্ন মুহুর্তে মানুষ হিসেবে কি ঘরে বসে থাকা যায়? নিশ্চয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বের হয়ে আসলেন ঘরের বাহিরে। নিজের কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে পণ্য সামগ্রী কিনে প্রতিদিন গাড়িতে করে চট্টগ্রাম নগরির বিভিন্ন স্হানে অসহায় ও হতদরিদ্রদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছেন। যুবকটির এ যেন এক অন্যরকম প্রেম।
এসবের পর তিনি আবার মানবসেবায় যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। সেই সাথে বিশিষ্ট সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ কতৃক পরিচালিত সেচ্ছাসেবী সংগঠন “করোনায় তারুন্য” চট্টগ্রামের ত্রাণ কর্মী হিসেবে মাঠে আছেন। জ্যোতিময় ধর শুধু চট্টগ্রামেই কাজ করছেন তা কিন্তু নয়। ঢাকাতে আরেক আলোচিত সেচ্ছাসেবী নাফিসা খানের মাধ্যমেও অনেক পরিবারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের এই সন্তান। মানবসেবী নাফিসা খান তার ফেইজবুক পেইজে জ্যোতির্ময় ধরকে তার পথপ্রদর্শক মন করেন বলেও আখ্যা দিয়েছেন। তাকে দেখলে উচ্চতার দাঁড়িপাল্লাকে পরাজিত করা অপার মানবতার এক অনুপম দৃশ্য দু’চোখ ভরে অবলোকন করা যায়। অতুলনীয় মানবতার স্বাক্ষর রেখে এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর।
অবিবাহিত তড়িৎ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর জার্মান ইন্সিটিউট অফ অলটারনেটিভ এনার্জিরতে রিসার্চ অফিসার হিসেবে কর্মরত এবং বর্তমানে জার্মান ইন্সিটিউট অফ অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে দেশ ও দশের জন্য কিছু একটা করবেন। সেই থেকে মানব সেবায় তার এগিয়ে চলা। ১৯৯২ সালে স্কুল জীবন থেকে যুব রেডক্রিসেন্টের সাথে জড়িত। তারপর রাশিয়াতে পড়াশুনা করার সময় রাশিয়ান রেডক্রস এবং জার্মানিতে জার্মান রেডক্রসের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশে এসেও আবার করোনাকালের শুরু থেকে রেডক্রিসেন্টের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তিনি ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় ২০০০ জন কর্মহীন, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং অসহায় পরিবারের উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।
জ্যোতির্ময় ধর এ বিষয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজী রেখে নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারে তাহলে আমরা কেন অল্প কিছু দিনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারবো না। আমরা মুক্তিযোদ্ধ দেখেনি, তবে অদৃশ্য করোনা যুদ্ধ দেখছি। তাই এই যুদ্ধের একজন কর্মী হয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। তিনি আরো বলেন, অসহায়রা উপহার পাওয়ার পর তাদের চোখ-মুখ থেকে যে প্রষ্ফুটিত হাঁসির প্রতিফলন ঘটে তখন করোনাকালের সব দুঃখ ক্লান্তি ভুলে যায়। এ যেন অপ্রাপ্তির মধ্যে বিশাল প্রাপ্তি। আমরা সবাই যদি এসব বিপদগ্রস্ত প্রাণের ডাকে সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ায় তাহলে এই যুদ্ধে আমারাই জয়ী হবো।
উল্লেখ্য, প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রণজিৎ কুমার ধর ও চট্টগ্রাম আর্ট কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর রীতা দত্তের একমাত্র পুত্র এবং দৈনিক আজাদীর প্রয়াত বার্তা সম্পাদক সাধন ধরের দৌহিত্র। মানবিক এই তরুণ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর হোক সকলের সকলের অনুপ্রেরণার উৎস।