স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির এলাকায় জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ বন বিভাগ ও অন্যের মালিকানা জমি দখল করে পাহাড়ে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করে লেক সৃষ্টি করেছে। এই লেক সৃষ্টির ফলে পানিপ্রবাহে মারাত্মক বাধার সৃষ্টি হয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবেশ। চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে স্থানীয়দের ফসলি জমি। এমনকি এই লেকে অবৈধ বাঁধ মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।
জানা যায়, জিপিএইচ ইস্পাত লি. শিল্প কারখানার মালিক ও পরিচালনা পরিষদ উক্ত কারখানার নিত্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের জন্য পাহাড়ি ছড়ায় অবৈধভাবে বাঁধ নিমার্ণ করেছে। যার ফলে পাহাড় থেক নেমে আসা পানি উক্ত বাঁধে আটকা পড়ে সেখানকার ভূমিতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। উক্ত অবৈধ বাঁধের প্রভাবে বি.এস ৮৫২ দাগের ৮৮ শতক জায়গা পানির মধ্যে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না । জমিতে জলবদ্ধতার কারনে কৃষি কাজের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। বেআইনীভাবে নিমির্ত বাঁধ দ্বারা আশে-পাশের ভূমি প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জি.পি.এইচ ইস্পাত লিঃ শিল্প কারখানার মালিক পক্ষ এলাকার জনসাধারনের দীর্ঘদিনের সরকারি সীটভূক্ত চলাচলের রাস্তায় স্ক্র্যাপ স্তুপ করে রাস্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করার অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক , পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেল তিনটার দিকে জিপিএইচ কারখানার পূর্ব পাশে পাহাড়ে লেক তৈরী করার কাজ করার সময় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক মোটরের সংস্পর্শে আসলে ঘটনাস্থলেই দুই শ্রমিক নিহত হয়। নিহতরা হলেন কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার পূর্ব উজানটিয়া ইউনিয়নে নুরুচ্ছাপা প্রকাশ নুরুর পুত্র মমতাজ উদ্দিন (২৮) এবং মৃত সিরাজ মিয়ার পুত্র আব্দুর রশিদ মাঝি (২৭)।এবার এই বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজের সাথে জড়িত ছিলেন শ্রমিকদ্বয়। উক্ত জমানো পানি কারখানায় ব্যবহারের জন্য সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে ফ্যাক্টরিতে সঞ্চয় করা হতো। জমিয়ে রাখা ড্যামের পানির বাঁধে মাটির কাজ করার সময় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক মোটরের সংস্পর্শে আসলে ঘটনাস্থলেই দুই শ্রমিক নিহত হয়।
সরেজমিন জানা যায়, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় ব্যবহার করার জন্য পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার পানি জমিয়ে রাখার জন্য অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করে। জমিয়ে রাখা বাঁধের পানি কারখানায় উৎপাদন কাজে ব্যবহার করছে। এ বাঁধ নির্মানের ফলে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র অন্যদিকে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ ভূগর্ভে পানি না যাওয়ায় পানির লেয়ার নিচে চলে যাচ্ছে। এই অবৈধ বাঁধ নির্মাণের জন্য সীতাকুণ্ডের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মাফুজুল হক তিনলক্ষ টাকা জরিমানা করে থাকলেও রহস্যজনক কারনে পরে আর এটি বন্ধ করা যায়নি । তবে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়। অদ্যাবদি সেই কমিটি এই অবৈধ বাঁধের ব্যপারে চোখে পড়ার মত কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
ছড়ায় বাঁধের জটিলতা বিষয়ে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করার ফলে ভূগর্ভে পানি প্রবেশ করতে পারেনা। ফলে ঐ অঞ্চলে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যেতে পারে। জীব বৈচিত্র ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ছড়ায় বাঁধ নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, জিপিএইচ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি তার জায়গা দখল করেছে বলে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এসব ব্যাপারে জানতে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের মিডিয়া শাখার উপদেষ্টা অভিক ওসমানকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।