ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ
নাহ! কোন অঘটন ঘটেনি। মেহেদীর শেষ ২ বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ১২ রান। তখন ব্যাট হাতে ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান। ৫ম বলে কোন রান আসেনি। শেষ বল থেকে আসে মাত্র ১ রান। ফলে প্রথম ম্যাচ থেকে যেভাবে দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ; ঠিক সেভাবেই দুই ম্যাচ হাতে রেখেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। সিরিজ জিতলো মানে— একেবারে বাঘের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশে বেড়াতে আসা ক্যাঙ্গারুরা। এই সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে কোনো সংস্করণেই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ হারাতে পারল বাংলাদেশ। জিতে ইতিহাসের রেকর্ড বইয়ে নাম লিখালো আফিফ-সোহানরা। অভিনন্দন বাংলাদেশ! অভিনন্দন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ! বাংলাদেশের দেওয়া ১২৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে সফরকারী অজিদের থামতে হয় ১১৭ রানেই। ফলে ১০ রানের জয় নিয়ে বীরের বেশে মাঠ ছাড়ে মোস্তাফিজরা। ইনফর্ম মার্শের সহজ ক্যাচ ছেড়ে চাপে থাকলেও বোলিংয়ে এসে সেই মার্শসহ ফর্মে থাকা দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করে ফেভিলিয়নের পথ দেখান এ তরুণ পেশার। ফলে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন শরীফুল। অন্যদিকে শেষ দিকে এসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে চাপে রাখেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজও।
২৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনাররা। দ্বিতীয় ওভারে ম্যাথু ওয়েড ফিরে গেলে প্রতিবন্ধক হয়ে ছিলেন কেবল মিচেল মার্শ ও বেন ম্যাকডারমট। দুজনে মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৬৩ রান আসে এই জুটিতে। ম্যাকডারমটকে বোল্ড করে এই জুটি ভেঙেছেন সাকিব। অজি এই ব্যাটসম্যান ফেরেন ৩৫ রানে। নতুন নামা ময়সেস হেনরিকস অবশ্য তিন বলই টিকতে পারেন। তাকে শামীমের তালুবন্দি করান শরিফুল।
ততক্ষণে মূল প্রতিবন্ধক মিচেল মার্শকে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠে স্বাগতিকরা। তাতে সফলতাও আসে ১৭.১ ওভারে। তাকে নাঈমের তালুবন্দি করেন শরিফুল। তাতে ৪৭ বলে ৫১ রানে ফিরে যান মার্শ। আদতে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে যায় তখনই। শেষ দিকে অ্যালেক্স ক্যারি (২০) ও ড্যান ক্রিস্টিয়ান মিলে (৭) রানের ব্যবধানই কমান মাত্র। অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে করতে পারে ১১৭ রান। ২৯ রানে দুটি উইকেট নেন শরিফুল। ১৯ রানে একটি নিয়েছেন নাসুম আহমেদ ও ২২ রানে সাকিব আল হাসান।
বোলারদের সম্মিলিত চেষ্টায় ম্যাচ জিতলেও ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি কোনও ইউকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছেন। এছাড়া ক্যাচ মিস করে বোলিংয়ে ফিরেই ব্যাক টু ব্যাক দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন শরিফুল।
মূলত মোস্তাফিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই তার হাতে উঠে মোস্ট ভ্যালুবল প্লেয়ার পুরস্কারটি। অন্যদিকে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার উঠে টাইগার কাপ্তান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর টস হয়। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়ে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ২.১ ওভারে মাত্র ৩ রানে ফেরেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার। জশ হ্যাজলউডের বলে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম। প্রথম দুই ম্যাচে ৩০ ও ৯ রানে আউট হওয়া নাঈম এদিন ফেরেন মাত্র ১ রানে।
নাঈম আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। প্রথম দুই ম্যাচে ২ ও ০ শূন্য রানে আউট হওয়া এ ওপেনার এদিন ফেরেন মাত্র ২ রানে।
ইনিংসের শুরুতে সৌম্য ও নাঈমকে হারিয়ে টালমাতাল বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার সামনে শেষ পর্যন্ত সন্তোষজনক টার্গেট দিয়েছে টাইগাররা।সাকিব-আফিফের পর দলের বিপর্যয়ে ঠেকিয়ে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন কাপ্তান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সিরিজ বাঁচাতে হলে সফররত অজিদের করতে হবে ১২৮ রান।
তবে শেষ তিন বলে হ্যাট্রিক করে ইতিহাস রচনা করলেন অভিষিক্ত অজি পেসার এলিস। তিনি বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ তিন বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজ ও মেহেদী হাসানকে আউট করেন তিনি। প্রথম ২১ বলে কোনও ইউকেট না পেলেও শেষের তিন বলে হ্যাট্রিককারী এ বোলারকে খরচ করতে হয়েছে ৩৪ রান। ফলে ১২৭ রানেই থেমে যায় অস্ট্রেলিয়াকে পরপর দুই ম্যাচে হারিয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশ।
এদিকে ৫২ বলে ক্যারিয়ারে ৫ম ফিফটি পূর্ণ করলেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক হিসেবে এটি তার প্রথম ফিফটি। টি-২০ তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ধীরগতির অর্ধশত হলেও দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে স্লো উইকেটে তার এক পারফরম্যান্স অবশ্য প্রশংসার দাবি রাখে।
সৌম্য-নাঈমের দারুন ব্যাটিং ব্যর্থতায় সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ কিছুক্ষণ তিথু হলেও সাকিবের ২৬ রানের আউটে ছন্দপতন ঘটে। তবে বরাবরের মত আফিফ হোসেন এসে সাহসী ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মিড-অফে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন আফিফ। ডাইভ দিয়ে ধরে উঠার আগেই ছুঁড়ে মেরেছেন অ্যালেক্স ক্যারি, যে থ্রো-তে সরাসরি ভেঙেছে স্টাম্প। ১২তম ওভারের শেষ বলে ৪র্থ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, ১৩ বলে ১৯ রান করেই থামলেন আফিফ।
আফিফের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হন শামীম। তবে সেট হতে না হতেই হ্যাজলউডের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিং-ও করতে পারলেন না। মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি, ৮ বলে ৩ রান করে।
অভিষেক ম্যাচে পরপর তিন বলে রিয়াদ, মোস্তাফিজ ও মেহেদিকে আউট করে হ্যাটটিক করেন অস্ট্রেলিয়ান তরুণ পেসার নাথান এলিস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৭/৯ (নাঈম ১, সৌম্য ২, সাকিব ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৫২, আফিফ ১৯, শামীম ৩, সোহান ১১, মেহেদি ৬, মুস্তাফিজ ০, শরিফুল ০*; টার্নার ১-০-২-০, হেইজেলউড ৪-০-১৬-২, জ্যাম্পা ৪-০-২৪-২, অ্যাগার ৪-০-২৩-০, এলিস ৪-০-৩৪-৩, মার্শ ১-০-১৫-০, ক্রিস্টিয়ান ২-০-৯-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১১৭/৪ (ম্যাকডারমট ৩৫, ওয়েড ১, মার্শ ৫১, হেনরিকেস ২, কেয়ারি ২০, ক্রিস্টিয়ান ৭; মেহেদি ৩-০-২।