ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ
ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণের টুইট, ‘সুশীল কুমারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। হরিয়ানা মহাসড়কের এই চালক জ্বলন্ত গাড়ি থেকে ঋষভ পন্তকে বের করে তাঁকে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। আপনার এই নিঃস্বার্থ সেবার কাছে আমরা ঋণী হয়ে গেলাম।’
ঋষভ পন্ত ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন শুক্রবার সকালে। গাড়ি চালিয়ে উত্তরাখণ্ডের বাড়িতে যাচ্ছিলেন ভারতের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। পথে সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি কয়েকবার ওলট-পালট খায়, একপর্যায়ে আগুন ধরে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পন্তকে স্থানীয় রুরকি সিভিল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন দেরাদুনে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন পন্ত। চিকিৎসকদের সূত্রে ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেরে উঠতে ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
পন্তের গাড়ি দুর্ঘটনার পর তাঁকে গাড়ি থেকে বের করেন বাসচালক সুশীল কুমার এবং তাঁর সহকারী পরমজীত। হরিয়ানা সড়ক বিভাগ এ দুজনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে। সূত্র মারফত ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাজ্য সরকারও তাঁদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে হরিয়ানা সড়ক বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কুলদ্বীপ জাংরা ফোনে বলেছেন, ‘পানিপথে ফেরার পর আমরা তাদের প্রশংসাপত্র ও শিল্ড দিয়েছি।’
হরিদ্বার থেকে ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে পানিপথের উদ্দেশে বাস নিয়ে যাত্রা করেন সুশীল কুমার ও পরমজীত। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সড়ক বিভাজনে পন্তের গাড়ি ধাক্কা খেয়ে উল্টে যাওয়ার পর তাঁরা বাস থামিয়ে সাহায্যের জন্য ছুটে যান। পন্তকে বের করার পর গাড়িতে আগুনের বিস্ফোরণ ঘটে।
হরিয়ানা সড়ক বিভাগের চালক সুশীল কুমার ক্রিকেটপ্রেমী নন এবং পন্তকেও তিনি চিনতেন না। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি বলেছেন সুশীল, ‘আমরা হরিদ্বার থেকে ফিরছিলাম এবং তিনি দিল্লি থেকে আসছিলেন। আমরা তাঁর উল্টো পথে ছিলাম। মাঝে সড়ক বিভাজক। আমরা গুরুকুল নরশানে বাস থামাই। সেখানে গাড়ির গতি এমনিতেই কমাতে হয়। ঘণ্টায় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে বাস চালাচ্ছিলাম। তারপর দেখি দূরে একটি গাড়ি বেপরোয়াভাবে এদিকে-সেদিকে চলছে। বুঝতে পারছিলাম, গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়বে। প্রায় ১০ সেকেন্ড পরই গাড়িটি সড়ক বিভাজকে ধাক্কা মারে। তিন-চার বার ওলট-পালট হয়ে গাড়িটি আমাদের পথে এসে পড়ে। বাস থামিয়ে দেখি গাড়িতে আগুন ধরে গেছে।’
বাসের সহকারী পরমজীত যোগ করেন, ‘ভোর ৫টা ১৪ থেকে ৫টা ১৫ মিনিটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আমরা তাঁকে টেনে বের করি, ভেবেছিলাম মারা গেছে। এরপর সড়ক বিভাজকের ওপর শুইয়ে দিই। তারপর চালককে বলি গাড়িতে আর কেউ আছে কি না তা দেখতে। ততক্ষণে বাস থেকেও কিছু যাত্রী নেমে এসেছিল। ঠিক তখনই গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আমরা কিছুটা দূরে সরে যাই। একটু সময় পর তিনি জ্ঞান ফিরে পান এবং বলেন গাড়িতে আর কেউ নেই। আমরা তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের ক্রিকেটার।’
সুশীল জানিয়েছেন, ক্রিকেটের প্রতি তাঁর কোনো টান নেই, কিন্তু জীবন বাঁচাতে পেরে তিনি আনন্দিত, ‘তিনি যে-ই হোন না কেন, আমরা ঠিক এটাই করতাম। তিনি পানি খেতে চাইলে কিছুটা দিতে পেরেছি। এটা তো আমাদের কর্তব্য। অন্য কেউ থাকলেও এটাই করত। এ জন্য প্রশংসা বা স্বীকৃতির দরকার নেই। মানবিক দায়িত্ব পালন করেছি। জানতাম না তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এত বড় তারকা। ভেবেছিলাম, সাধারণ কেউ।’