স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে আজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মাহমুদউল্লাহ-সাকিবদের জয় হয় ২৩ রানে।
টি-টোয়েন্টিতে এটি মোটামুটি বড় ব্যবধানের জয়। অথচ বাংলাদেশের পুঁজি ছিল মোটে ১৩১ রানের। স্পিনারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ওই রানই হয়ে যায় যথেষ্টর বেশি।
১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। কার্যকর বোলিং উপহার দেন অন্য দুই স্পিনার মেহেদি হাসান ও সাকিব আল হাসানও।
শেষ দিকে দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া অলআউট ১০৮ রানে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি।
উইকেট স্পিন সহায়ক হলেও ১৩১ রানের পুঁজি ছিল না বড় কিছু। কিন্তু বোলিংয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্নের মতো শুরু এনে দেন স্পিনাররা। প্রথম তিন ওভারেই অস্ট্রেলিয়া হারায় তিন উইকেট!
ইনিংসের প্রথম বলেই অ্যাঙ্গেলে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড অ্যালেক্স কেয়ারি। পরের ওভারে নাসুম আহমেদকে ছক্কা মারার পর উইকেট হারান জশ ফিলিপি। তৃতীয় ওভারে সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্পে বল টেনে আনেন মোইজেস হেনরিকেস।
সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মিচেল মার্শ ও ম্যাথু ওয়েড। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসা মার্শ এখানেও খেলতে থাকেন দারুণ। তবে পাননি যোগ্য কোনো সঙ্গী। ওয়েড কিছুক্ষণ উইকেটে কাটিয়ে আউট হন নাসুমের বলে বাজে এক শটে।
অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাশটন টার্নার পারেননি এই উইকেটে ঝড় তুলতে। দারুণ কিছু শট খেলে মার্শও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির শিকার। দ্রুত রান তুলেতেই হতো। সেই চেষ্টায় আউট হন নাসুমকে আকাশে তুলে (৪৫ বলে ৪৫)। অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনাও শেষ ওখানেই।
লোয়ার অর্ডারে ছোবল দেন দুই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ ও শরিফুল। ইনিংসের শেষ বলে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট নিয়ে শেষটাও দারুণ করে বাংলাদেশ।
ম্যাচের শুরুটাও ছিল রোমাঞ্চকর। প্রথম বলে মিচেল স্টার্কের সুইংয়ে পরাস্ত মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পরের বলেই দুর্দান্ত ফ্লিকে নাঈমের ছক্কা।
পঞ্চম ওভারে স্টার্কের বলে আরেকটি চোখধাঁধানো ফ্লিকে বল গ্যালারিতে পাঠান নাঈম। তবে এই দুই ছক্কার মাঝে রান হয়নি তেমন কিছু। হারাতে হয় সৌম্য সরকারের উইকেট।
উইকেটে অস্বস্তিময় সময় কাটিয়ে জশ হেইজেলউডকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য (৯ বলে ২)।
দুই ছক্কা ও দুই চারের পরও নাঈমের স্ট্রাইক রেট খুব বাড়েনি। ৬ ওভারে রান আসে কেবল ৩৩।
পাওয়ার প্লে শেষে নাঈমের ইনিংসও শেষ বাজে এক শটে। অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে রিভার্স সুইপ খেলে বোল্ড তিনি ২৯ বলে ৩০ করে।
জ্যাম্পার পরের ওভারে টানা দুই বাউন্ডারিতে সাকিব চেষ্টা করেন রানের গতি বাড়ানোর। তবে অস্ট্রেলিয়ানদের কার্যকর বোলিংয়ে ব্যর্থ হয় সাকিব-মাহমুদউল্লাহর চেষ্টা। ৫ রানে জীবন পান মাহমুদউল্লাহ, ২৩ রানে সাকিব। কিন্তু গতি খুঁজে পাননি দুজনের কেউ।
দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা হেইজেলউডকে ছক্কায় উড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেন চিত্র বদলানোর। পরের বলেই নাকল ডেলিভারিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক বিদায় নেন ২০ বলে ২০ করে।
আরেক প্রান্তে সাকিব লম্বা সময় উইকেটে থেকেও ঠিক ছন্দ পাননি। তবে টুকটাক রান আসছিল তার ব্যাটে। হেইজেলউডের স্লোয়ার থামায় তাকেও (৩৩ বলে ৩৬)।
শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার তাড়ায় টাইয়ের স্লোয়ারে ক্যাচ দেন নুরুল হাসান সোহান, স্টার্কের নিখুঁত ইয়র্কারে বোল্ড শামীম হোসেন। বাংলাদেশ ১৩০ ছাড়াতে পারে মূলত আফিফ হোসেনের সৌজন্যে। ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ এই বাঁহাতি, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা হয়ে ওঠে মহামূল্য।
মাঝ বিরতির সমীকরণ যেমনই থাকুক, বাংলাদেশ তা নিজেদের করে নেই ক্রমেই। শেষ পর্যন্ত যখন ধরা দিল জয়, অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার হারানোর উচ্ছ্বাস-উদযাপনেও দেখা গেল না বাঁধনহারা কিছু। শেষের বেশ আগেই যে আসলে ম্যাচ শেষ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩১/৭ (নাঈম ৩০, সৌম্য ২, সাকিব ৩৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, সোহান ৩, আফিফ ২৩, শামীম ৪, মেহেদি ৭*; স্টার্ক ৪-০-৩৩-১, হেইজেলউড ৪-০-২৪-৩, জ্যাম্পা ৪-০-২৮-১, টাই ৪-০-২২-১, অ্যাগার ৪-০-২২-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১০৮ (কেয়ারি ০, ফিলিপি ৯, মার্শ ৪৫, হেনরিকেস ১, ওয়েড ১৩, অ্যাগার ৭, টার্নার ৮, স্টার্ক ১৪, টাই ০, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ২*; মেহেদি ৪-০-২২-১, নাসুম ৪-০-১৯-৪, সাকিব ৪-০-২৪-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৬-২, শরিফুল ৩-০-১৯-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৬-০)।
ফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অভ দা ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।