মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে ভাঙছে সুনসান নীরবতা


প্রকাশের সময় :১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৬:২৭ : পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

অবশেষে শুনশান নীরাবতা ভাঙছে সুন্দরবনে। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। সুন্দরবনের ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোকে ভ্রমণ উপযোগী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বনরক্ষীরা। পাঁচ মাস পর প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার খবরে উৎফুল্ল সুন্দরবন দর্শনের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষ। যদিও এ পাঁচ মাসে নতুন সাজে সেজেছে বনটি। প্রকৃতি সুযোগ পেয়েছে নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়ার। খবর মিলেছে, মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ না থাকায় বনের শুনশান নীরবতায় কেবল শোনা যাচ্ছে পাখিদের কুহুতান। বিভিন্ন প্রাণীর ঝাঁক দেখা যাচ্ছে। বনের নদ-নদী ও খালের পাড়গুলোতে দেখা মিলছে নানা জলজ জীব। গত ১০ বছরেও যেখানে বাঘের দেখা মেলেনি, সেখানেও দিনে দুপুরে আসছে বাঘ। এ যেন বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।

সুন্দরবন দেখার আগ্রহ রয়েছে দেশ-বিদেশের সব বয়সের মানুষের। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দুই বছরে দর্শনার্থীদের সেই ভ্রমণ সুযোগ অনেকাংশেই কমেছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ। তাই বনে নেই মানুষের পদচারণা। নেই পরিবেশ দূষণকারী নৌযানের বিকট শব্দ ও চলাচল। পাঁচ মাস জনসমাগম না থাকায় গাছপালা, প্রাণ-প্রকৃতি আর পাখির কলকাকলীতে মুখর সুন্দরবন। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে। দীর্ঘ ১০ বছরেও বনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বাঘের দেখা না মিললেও এখন প্রায় দিনে দুপুরে বাঘ দেখা যাচ্ছে সেখানে।

নানা প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও প্রাণীর বিচরণস্থল এই সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দর্শনার্থীরা দেখতে পেতেন হরিণ, বানর, কচ্ছপ ও কুমিরের। অন্যান্য প্রাণী মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের ভেতরের দিকেই বিচরণ করত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে মানুষের পদচারণা ও নৌযানের শব্দ না থাকায় প্রাণীর ঝাঁক চলে আসছে বনের নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। যদিও এমন পরিবেশই বন্যপ্রাণীর প্রজননের উপযোগী।

গতকাল সোমবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আগামীকাল থেকে বনের দ্বার খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বেলায়েত হোসেন বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকে সুন্দরবনে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরিধানসহ নানাবিধি নিষেধ মানতে হবে দর্শনার্থীদের। এসব বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও থাকবে সতর্ক অবস্থায়।

তিনি আরও বলেন, ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ উপলক্ষে বনের ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোকে প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ নানা কাজ করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বন বিভাগের। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ৩ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য মানতে হবে নানা নিয়মকানুন। প্রবেশের সময় মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। প্রত্যেককে মাস্ক পরিধান করে প্রবেশ করতে হবে। নৌযান থেকে মাত্র ২৫ জন করে গ্রুপ-গ্রুপ ভাগ করে বনে প্রবেশ করতে হবে। যারা এ সব শর্ত ভঙ্গ করবেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বন বিভাগ।

করমজল পর্যটন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংগ্রহকারী কর্মচারী মো. লিটন মুন্সী ও মো. সুজন হাওলাদার বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমরা হরিণের খাদ্য অর্থাৎ পাতা সংগ্রহ করি। এখন দেখছি বনের নদী ও খালের পাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ, বানর, শুকর, শজারু, সাপ ও পাখি। আগে এগুলো দেখতাম না। নৌযান ও পর্যটকদের চলাচল না থাকায় এসব প্রাণী এখন কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে।

করমজল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবুল হাসান বলেন, ‘আগে যখন নিয়মিত পর্যটক ও ট্রলার আসত, তখন দুই একটি হরিণ ছাড়া কিছু দেখা যেত না। কিন্তু এখন বিভিন্ন পশুপাখি ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাচ্ছে। বনের ভেতর থেকে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসছে।’

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘দীর্ঘ নীরবতার কারণেই আগে যেসব প্রাণী অহরহ দেখা যেতো না, এখন সেসব প্রাণী ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাচ্ছে। আগে বাঘ বনের গহিনে বিচরণ করলেও এখন তাও দেখা যাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রের কাছাকাছি। মূলত শুনশান নীরবতার কারণেই বনের রূপ বদলে গেছে।’

সুন্দরবনে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে। এসব ভ্রমণকারীর পরিবহণে ব্যবহৃত হয় প্রায় ২৫ হাজার ছোট-বড় নৌযান। করোনার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ ও নৌযান চলাচল না থাকায় বনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।

এদিকে সুন্দরবন উন্মুক্তের খবরে খুশি হয়েছেন ট্যুর অপারেটররা। তারাও নিজেদের নৌযান ধুয়ে, মুছে, ত্রুটি সারিয়ে নিচ্ছেন সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য।

পর্যটন ব্যবসায়ী দ্যা সাউদার্ন ট্যুরস-এর স্বত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। এই খাতে কাজ করা বিপুলসংখ্যক জনশক্তি বেকার অবস্থায় ছিল। মানবেতর জীবনযাপন করেছেন তারা। ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন খুলে দেওয়ার খবরে আমরা খুব খুশি হয়েছি। সরকার ও বন বিভাগের নির্ধারিত বিধিনিষেধ মেনেই ট্যুর অপারেট করার কথা জানান তিনি।

ট্যাগ :