খুলনা প্রতিনিধি:
সুন্দরবনে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস ধরে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এই আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় তৎপরতা বেড়েছে অসাদু ব্যবসায়ীদের। গাছ কেটে উজাড় করছে বন। বিষপ্রয়োগে মারা হচ্ছে হাজার হাজার টন মাছ। ফের বেড়েছে হরিণ শিকার। বিক্রি করা হচ্ছে খুব গোপনে। অভিযোগ রয়েছে, সব ঘাট ম্যানেজ করেই চলছে এসব কর্মকাণ্ড। নৌকাপ্রতি নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। বেশি ভয়ানক ‘স্পিডবোটের বড় অফিসার’রা। পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে এসব অপতৎপরতা কমে আসবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, পর্যটকদের অভাবেই অসাদু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এই অপতৎপরতা বন্ধে পর্যটকদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার গত ১৯ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটকদের সমাবেশকে নিষিদ্ধ করে। প্রথম কয়েকদিন তেমন প্রকট না থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অসাদু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা।
এক অভিযোগে জানা যায়, পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের নীল কমল, পাথকষ্টা, গেওয়াখালীর অংশ, নোটাবেকি, মান্দার বাড়ি, পুষ্পকাটিসহ বনের বেশ কিছু এলাকায় চলছে অসাধু জেলেদের মাছ ধরা। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বিষপ্রয়োগেও ধরছেন মাছ। জড়িত রয়েছেন শিসখালী ও বালি নদীর আশপাশের এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
এ ছাড়া নোটাবেকি, পুষ্পকাটি অভয়ারণ্যের নান্দী ও জলঘাটাবন এলাকার নদী-খালে মৎস্য ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই। পাল্লা দিয়ে মাছ ধরায় ব্যস্ত তারা। তবে অসৎ পন্থায় মাছ ধরতে গিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে চলতে হয়, বলে জানিয়েছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, গহীন সুন্দরবনের ‘অভয়ারণ্য এলাকা’য় মাছ ধরেন তারা। পরে নৌকায় করে বাজারে পৌঁছান। এ সময় ঘাটেঘাটে বনরক্ষীদের ম্যানেজ করে চলতে হয় তাদের। নৌকাপ্রতি দিতে হয় এক হাজার টাকা। তারা আরও জানান, বড় অফিসারদের স্পিডবোটের সামনে পড়লে আর রেহাই পাওয়া যায় না।
এদিকে যেসব গাছ কাটা নিষেধ, সেগুলোও কেটে উজাড় করা হচ্ছে বলে আরেক অভিযোগে জানা যায়। হত্যা করা হচ্ছে হরিণসহ বন্যপ্রাণী। এসব গাছ আর পশু পাচার করা হচ্ছে খুব গোপনে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে ‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোশিয়েশন অব সুন্দরবন (টিওএএস)-এর যুগ্ম সম্পাদক মাযহারুল কচি বলেন, ‘সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢোকা বন্ধ থাকায় একদিকে ট্যুরসংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে অপরাধীরা উজাড় করে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। শিকার করছে হরিণ। সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দিলে এখানে অপরাধ অনেক কমে যাবে। বনরক্ষার স্বার্থেই পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দেওয়া উচিত।’
একই দাবি জনিয়েছেন ফেমাস ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্ণধার তানজির এইচ রুবেল বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দিলে কোনো ক্ষতি হবে না। বরং লাভই হবে। সুন্দরবনের অপরাধও বন্ধ হবে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু সালেহ বলেন, ‘অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ। বনবিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম নিয়মিত টহল করছে।’ অভয়ারণ্যের নদী-খালে মাছ শিকার করা অসাধু জেলেদের পাকড়াও করতে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পর্যটকদের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনউদ্দিন বলেন, ‘সুন্দরবনের পরিবেশের স্বার্থে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুন্দরবনে আবার কবে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না।’ তবে আগামী মাসে এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও উল্লেখ করেন এই বন কর্মকর্তা।