স্টাফ রিপোর্টার:
আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম এখন কমছে। এরই মধ্যে বাজারে খাদ্যশস্যটির দাম নেমে এসেছে প্রায় দেড় বছরের সর্বনিম্নে। যদিও এ পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারছে না বাংলাদেশ। সরকারি পর্যায়ে আমদানি কিছুটা বাড়লেও বিপাকে ব্যক্তি খাতের আমদানিকারকরা। ডলার ও তারল্য সংকটে তাদের গম আমদানির এলসি খুলতে অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সরবরাহ ব্যবস্থায় চাপ থেকে যাওয়ায় এখনো দেশের বাজারে গম কেনাবেচা হচ্ছে আগের দামেই।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) এখন প্রতি বুশেল (১ বুশেল=৬০ পাউন্ড; ১ টন=৩৬ দশমিক ৭৪ বুশেল) বিক্রি হচ্ছে ৭ ডলার ১০ সেন্টে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যশস্যটির দাম কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। শীর্ষ রফতানিকারক দেশ রাশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির সরবরাহ এবার রেকর্ড ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আরেক শীর্ষ রফতানিকারক ইউক্রেনও এখন পণ্যটির রফতানি সম্প্রসারণের প্রয়াস চালাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায়ও এবার গমের উৎপাদন হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে এবার আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যটির সরবরাহ চাপ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পণ্যটির দামও এখন বেশ নিম্নমুখী।
যদিও দেশের বাজারে এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে দেশে গমের কেজিপ্রতি দাম এখনকার তুলনায় অন্তত ১০-১৫ টাকা কম হওয়ার কথা। কিন্তু আমদানি কমায় পণ্যটির সরবরাহ নিয়ে বাজারে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরেও দেশে গমের আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার টনেরও বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পেরোলেও এ সময়ের মধ্যে মোট আমদানির পরিমাণ আগের অর্থবছরের অর্ধেকেও দাঁড়ায়নি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯০৭ টন গম আমদানি হয়েছে।
দেশের আমদানীকৃত গমের বেশির ভাগই এখন আনা হচ্ছে ভারত থেকে। দেশটিতেও এখন গমের দাম নিম্নমুখী বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট বাজারগুলোর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মান্ডিতে (বড় আড়ত) প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) গমের গড় মূল্য এখন ২ হাজার ৩৯০ রুপি (সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ হাজার ৩০ টাকা)। আসানসোলের মান্ডিতে গমের গড় মূল্য প্রতি কুইন্টাল ২ হাজার ৭৫০ রুপি (৩ হাজার ৪৮৭ টাকার সমান)। সে অনুযায়ী দেশটির বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি গমের গড় মূল্য পড়ছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩০-৩৫ টাকার সমান।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, এখানে এখন ভালোমানের গম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে মাঝারি গ্রেডের গম বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ১ হাজার ৯২০ থেকে ১ হাজার ৯৪০ টাকায়। এ অনুযায়ী খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মাঝারি মানের গমেরই কেজিপ্রতি মূল্য পড়ছে কমপক্ষে ৫১ টাকা।