ইতিহাস ডেস্ক:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। এই ঘটনাটি হলোকাস্ট নামে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছে। এই হলোকাস্ট এ ৬০ লাখেরও বেশী ইহুদিদের উপর নির্মম ও হৃদয়বিদারক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। সেই হত্যাযজ্ঞ এতটাই বর্বরোচিত ছিল যে, থেকে অবুঝ শিশু ও নারী, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ রোগীরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের মূল হোতা কে ছিলেন জানেন? এডলফ হিটলার! তিনি তখন জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে জার্মানির সভ্য সমাজ থেকে ইহুদিদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইন পাশ করা হয়। তখনকার সময়ে যারা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন তাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে বন্দি করে রাখা হতো এবং তাদেরকে দিয়ে কাজের লোকের মতো বিভিন্ন ধরনের কাজ করানো হতো। তাদেরকে তেমন ভালো কোন খাবার দেওয়ার দেওয়া হতো না। তাদের সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করা হতো। বন্দীদের মধ্যে অনেকেই না খেয়ে থাকতে থাকতে অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে করতে একসময় রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যেত।
হিটলার কেন ইহুদিদের পছন্দ করতেন না
পুর্ব ইউরোপের কিছু অংশ তখন জার্মানির নাৎসি বাহিনী দখল করতে শুরু করেছে। ঐ এলাকায় তখন তাদের বিরুদ্ধে যারা কথা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করত নাৎসী বাহিনী। সেই এলাকায় রোমানি এবং ইহুদি যারা সংখ্যালঘু ছিলেন তাদেরকে প্রথমে গেটো নামক একটি বস্তিতে আটকে রাখা হতো। এই গেটো বস্থিতে যারা বসবাস করতেন তারা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করতেন। এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই করুন। এই বস্তিতে যারা বসবাস করতেন তাদেরকে স্বল্পতার কারণে খুবই গাদাগাদি করে থাকতে হত। যাদেরকে এই বস্তিতে আটকে রাখা হতো তারা একসময় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়তো।
এক সময় বন্দীদেরকে শত শত মাইল দূরের বন্দিশিবির গুলোতে নিয়ে যাওয়া হতো মালবাহী ট্র্রেনে করে।মালবাহী ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যেতেন। ভাবতে পারা যায়এসব? কি নির্মম ছিল, কি বর্বরোচিত ছিল সেই হত্যাযজ্ঞ। সেই হত্যাযজ্ঞে আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ ইহুদী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রাণ দিতে হয়েছিল সেই নাৎসী বাহিনীর হাতে। ৫০ লক্ষ ইহুদি ছাড়াও হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে প্রান দিতে হয়েছিল অবোধ শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ, সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, সাম্যবাদী, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মত আদর্শের লোক সহ ভিন্ন ভাষাভাষীদের।
কেন হিটলার ইহুদিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছি। কেনই বা তিনি ইহুদিদের ঘৃণা করতেন? এই প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ইতিহাসবিদগণ এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোন সঠিক সমাধান পাওয়া যায়নি। সেই পৃথিবীর সৃষ্টির পর থেকেই ধর্ম নিয়ে যুদ্, রাজনৈতিক ব্যক্তিগত দাঙ্গা নিয়ে রয়েছে হাজারো ইতিহাস। আমরা আজ সেদিকে যাব না। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব কিসের জন্য, নিজের স্বার্থে নাকি জার্মানিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, নাকি অন্য কি এমন কারণ ছিল যার কারণে হিটলার এই ধরনের জঘন্য, নির্মম, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল!
হিটলার ছোটবেলা থেকেই অনেক বেশি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিল ভালো একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার।হিটলার তখন ভিয়েনাতে বসবাস করতেন। হিটলার ভিয়েনার একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আর্ট কলেজ থেকে তাকে বারবার বের হতে হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদিদ স্টুডেন্টদের কারনে। তাছাড়া সেই কলেজের রেকটরও ইহুদি ছিলেন। হয়তোবা তখন থেকেই ইহুদিদের প্রতি হিটলারের এক প্রকার বিতৃঞ্চার জন্ম নিয়েছিল।
ডঃ যে রিকার এর লেখা “How world war one lead to the Holocust নামক বই থেকে জানা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিদের পরাজয়ের মুল কারণ হিসেবে একমাত্র ইহুদিদের দায়ী করেছেন হিটলার। হিটলার বিশ্বাস করতেন ইহুদিরা জার্মানির কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। হিটলারের ভাষায় ইহুদীরাই জার্মানি থেকে রাজতন্ত্র ধ্বংস করেছে। এই ইহুদীদের কারনেই সমস্ত জার্মানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। তবে ডঃ রিকার একটু ভিন্নমত পোষন করে বলেছেন, ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ক্ষোভ ছিল হিটলারের মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই। হিটলার মনে করতেন ইহুদী ডাক্তারের অবহেলার কারনেই হিটলারে মা ক্লারার মৃত্যুহয়েছিল। হিটলার তার মায়ের মৃত্যু খুব সহজেউ। মেনে নিতে পারেননি তার পর থেকেই হয়তো হিটলার মনে করতেন। কারন হিটলার জার্মানের জনগণ ও তার মাকে খুবই ভালো বাসতেন। ডঃ রিকার এই যুক্তিগুলো দাড় করিয়েছেন হিটলারের সমস্ত বক্তৃতা গুলো বিশ্লেষণ করে।
তবে ব্রিটিশের একটি পত্রিকা ডঃ রিকারের লেখা বইয়ের সমালোচনা করেছেন, তারা বলেন, এই বইয়ে হিটলারকে মহৎ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও হিটলারকে এখনও জার্মানির জনগণ হিরোই মনে করে। ইহুদিদের হত্যা করার পেছনে হয়তো জার্মানিদেরও সমর্থন ছি। তা না হলে এতগুলো লোক একা হত্যা করতে পারতো না হিটলার।
হাজারো প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, তাহলে কি অবস্থা হতো আজ যদি এডলফ হিটলার বেঁচে থাকতো। বর্তমানে সারাবিশ্বে রাজত্ব করছে ইহুদীরা। পৃথিবীর মধ্যে ক্ষমতাসীন যে বড় বড় পদ গুলো রয়েছে, সেউ পদগুলো এখন ইহুদীরাই দখল করে রেখেছে। শাসন করছে সমস্ত পৃথিবী কে। তাছাড়া সমস্ত বিশ্বের ইহুদিরা এখন একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মতো সংঘবদ্ধ। কি হতো আজ? হিটলার যদি এই অবস্থা দেখতেন। আজ ইতিহাস পর্যালোচনা করে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, নির্বিচারে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করে হিটলার কোন অর্থবহ কাজ করেননি।