নিউজ-ডেস্ক :
এশিয়ার একটি দেশ
দক্ষিণ কোরিয়া। যেখানে কোনো প্রাকৃতিক
সম্পদ নেই, সমতল ভূমির পরিনাণ ৩০ শতাংশ। এটি এমন
দেশ যার ৭০ শতাংশ পাহাড়ে ঘেরা। ১৯৫৩ সালের
যুদ্ধের পর এই দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৪
ডলার, যেটি ১৯৬০ সালে গিয়ে ঠেকে ৭৯ ডলারে।
যুদ্ধের পর বিলীন হওয়া দেশটি মাত্র ৬৬ বছরেই
বিশ্বের ১১ তম অর্থনীতির জায়ান্ট রাষ্ট্র। বর্তমান
বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর এই দেশ প্রযুক্তি ও
শিক্ষা সিস্টেমে বিশ্বের প্রথম স্থান, রপ্তানীকারক
দেশের তালিকায় বিশ্বের ৫ম স্থান, চিকিৎসাসহ সকল
ক্ষেত্রেই বিশ্বের প্রথম সারির দেশ এই
কোরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই গরীব দেশ কী করে
স্বল্প সময়ে উন্নয়ন দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব
করেছে তা অবাক বিস্ময়। অর্থনীতি এবং
রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন দেশটিকে
পৃথিবীজুড়ে একটি মডেল দেশ হিসেবে পরিচয়
এনে দিয়েছে। আজ লিখবো কোরিয়ার বর্ণময়
উত্থানের ম্যাজিক বিশ্বগল্প।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে দুই কোরিয়ার যুদ্ধের পর
দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বিশ্বের অন্যতম হতদরিদ্র
দেশ। সেসময়কার তথ্য মতে, পৃথিবীর দরিদ্রতম
দেশ কংগো ও চাঁদের চেয়েও অর্থনৈতিকভাবে
খারাপ অবস্থানে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। আমরা
অনেকেই জানি, সেই যুদ্ধে নিহত হয়েছে হাজার
হাজার কোরিয়ান নাগরিক। খাবারের অভাবে তারা ধর্ণা
দিয়েছিল জাতিসংঘ, নানা দাতা সংস্থা ও শক্তিধর রাষ্ট্রের
কাছে। জাতিসংঘ হেলিকপ্টারে বিলি করেছে খাবার,
কোরিয়ানরা ছুটেছিল খাবারের পেছনে।
এখন দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের ১১তম এবং এশিয়ার
চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই সময়ে
কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর
সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা। গবেষণায়ও তারা ঈর্ষণীয়
সফলতা অর্জন করেছে। শিপিং নির্মাণেও বিশ্বে
নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইন্টারনেটের গতিতে কোরিয়া
টপলেভেলে। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি টপ
টেনে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। পাঁচ
কোটি মানুষের দশ কোটি হাত বদলে দিয়েছে
কোরিয়াকে। বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্যকে।
একটা বিষয়ে পৃথিবীতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে
তারা সেটা হলো গবেষণা ও গবেষণায় বরাদ্দ।
অর্থনীতিতে শক্তিধর এই দেশটা তার জিডিপির প্রায়
পাঁচ ভাগ অর্থ গবেষণায় ব্যয় করছে। সিউলের
পরে আছে তেল আবিব। গবেষণার মূল কয়েক
খাতে তাদের বিনিয়োগ। তারা চিকিৎসা, কেমিক্যালের
উপর ব্যাপক গবেষণা করছে। তাদের টার্গেট,
আগামী দুই এক দশক পর উদ্ভাবন-আবিষ্কারে,
সৃষ্টিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হওয়া।
জায়ান্ট এই দেশটির টার্গেট সুদূরপ্রসারী,
বিস্তীর্ণ ও প্রসারিত। এই দেশের সরকার
মেধাবীদের পেছনে অর্থব্যয়ের ফলে, গত
তিন দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণার মান পৃথিবীর
সেরা দেশগুলোকে ছুঁয়েছে। কোরিয়ার
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জগৎসেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায়
উঠে এসেছে লাগাতার কয়েক বছর ধরে।
বিশ্বের টপ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতি বছর
৭ হতে ৮টি টপে রয়েছে। তেল আবিবের পর
কোরিয়ায় হাজারে ১৫ জন গবেষক। আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যমের মতে, গবেষণায় কোরিয়া এখন
উচ্চস্থানে। গবেষণায় বেপরোয়া,
অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য কোরিয়াকে এখন
অনেক দেশ অনুসরণ করছে। তাদের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মডেল হিসেবে নিয়েছে।
গবেষণা একটা জাতির বেড়ে উঠার খুঁটি। শুধু খুঁটি নয়,
অতল শেকড়। এই শেকড়, এই সংস্কৃতি কোরিয়ানরা
গড়ে তুলেছে, নানা পলিসির মাধ্যমে। কোরিয়ার
এখন অন্যতম অস্ত্র গবেষণা, বেড়ে উঠার বুলেট
হল তরুণ প্রজন্মের মেধা। গবেষণার প্রশ্নে,
মেধার প্রশ্নে কোনো ছাড় তারা দেন না।
গবেষণায় কোনো কম্প্রোমাইজনেই। এই
দেশের তরুণ-তরুণীরা আত্মোন্নয়নে কী
পরিমাণ ব্যস্ত, তা ভাবা যায় না। ২০১৮ সালে বিশ্ব প্যাটার্ন
তালিকায় স্যামসাং, এলজিসহ প্রায় ১২টি কোম্পানী এ
বিশ্বের নামী ব্রান্ড কোম্পানিকে টপকিয়ে
প্রথমসারিতে। গবেষণার কল্যাণে কোরিয়া আজ
নেতৃত্বদানের প্রথম সারিতে আসীন হয়েছে।
১৯৫৩ সাল থেকে হিসাব করলে ৬৬ বছরে রূপকথার
গল্পের মত জাতির উন্নতির পিলার গড়েছে এভাবেই।
রোবটিক গতিতে, দ্রুত সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া
উন্নত হওয়ার গল্প এটাই। এখন তাবৎ পৃথিবীর জন্য তারা
অনন্য মডেল। বিশ্বসেরা গবেষক ও
গণমাধ্যমগুলো গবেষণায় কোরিয়াকে এই বিশ্বের
নব মডেল হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
কোরিয়া যুদ্ধের পর কোরিয়ার সরকার জনগণকে
টেকনিক্যাল শিক্ষা দিয়ে কর্মমুখী করেছে,
পরবর্তীতে গবেষণায় আর উৎপাদনে মেধা
বিনিয়োগ করে বিশ্বদরবারে প্রযুক্তির চালকের
ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এককথায়, উন্নতির ড্রাইভিং ফোর্স হলো
শিক্ষা, প্রযুক্তিগত বিদ্যা ও গবেষণা।