আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জরুরি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য বেনি গ্যান্টজ। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করলেন তিনি।
এমনকি নেতানিয়াহু গাজায় ইসরায়েলকে ‘সত্যিকারের বিজয় অর্জনে বাধা দিচ্ছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন গ্যান্টজ। সোমবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ জরুরি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন। এতে করে গাজায় সংঘাত-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিভেদ আরও গভীর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রোববার তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় বেনি গ্যান্টজ তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। এসময় গ্যান্টজ বলেন, অত্যন্ত ‘বিষণ্ণতার’ সাথে তিনি এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, নেতানিয়াহু আমাদেরকে সত্যিকারের বিজয় অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছেন, আর এটিই চলমান বেদনাদায়ক সংকটের মূল কারণ।’
এসময় নেতানিয়াহুকে তিনি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণেরও আহ্বান জানান। মূলত কেউ কেউ বেনি গ্যান্টজকে ইসরায়েলে ক্ষমতার জন্য নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।
নেতানিয়াহু অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন: ‘বেনি, এখন ছেড়ে যাওয়ার সময় নয়, এখন বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময়।’
এদিকে বেনি গ্যান্টজের সিদ্ধান্তকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক’ বলে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ।
বিবিসি বলছে, পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় জায়গা দাবি করেছেন। মূলত বেন-গভির ইসরায়েলের ডানপন্থি জোটের অংশ যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিলে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকার ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে।
এর আগে গাজার জন্য কোনো যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করা না হলে গত মাসে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বেনি গ্যান্টজ। আর এই পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য ৮ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি।
অবশ্য যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলি নেতাদের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। মূলত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। আর সেই হামলার পরদিনই ইসরায়েলে গঠিত হয় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
এছাড়া গ্যান্টজের পদত্যাগের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে যখন গত মাসেই যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। গাজায় বেসামরিক ও সামরিক শাসন নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই, এমন ঘোষণা নেতানিয়াহুকে জনসমক্ষে দেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গ্যালান্ট আরও বলেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করে চলেছেন, কিন্তু (নেতানিয়াহুর কাছ থেকে) কোনও সাড়া পাননি।
মূলত গাজায় যুদ্ধ এগিয়ে চলার পাশাপাশি এই ধরনের মন্তব্য ও বিবৃতি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরছে।
এতে করে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় ও সরকারে ভাঙন আরও চওড়া হওয়ার সুরও বাড়ছে।
নেতানিয়াহু এর আগে অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস যতদিন এই ভূখণ্ডে থাকবে ততদিন গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাদের হাতে থাকবে তা নিয়ে আলোচনা কেবল ‘অর্থহীন’।