আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্যালেসে ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জকে দেশটির নতুন রাজা হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিল এক বৈঠকের পর তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণা করে।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটে গত বৃহস্পতিবার তার চিরবিদায়ের মাধ্যমে। আর সেই সাথে দেশটির নতুন রাজার দায়িত্বপ্রাপ্তির পথ খুলে যায় প্রিন্স চার্লসের।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে এলাকার সেইন্ট পল গির্জার পাশে সমাহিত করা হবে রানিকে। সর্বসাধারণের সম্মান জানানোর জন্য সমাহিত করার ৪ দিন আগে থেকেই তার দেহ রাখা হবে ওয়েস্টমিনিস্টার হলে।
মা রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পরপরই ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস তার স্থলাভিষিক্ত হন বৃহস্পতিবার। পরে শনিবার ব্রিটেনের সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিল রানির উত্তরাধিকার ঘোষণা করে। এ সময় ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন রাজতন্ত্রের উত্তারাধিকারী উইলিয়াম। আর তা প্রত্যক্ষ করেন তার স্ত্রী ক্যামিলা এবং ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
বিবিসি বলছে, ব্রিটেনের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক, প্রধানমন্ত্রী, ক্যান্টারবুরির আর্চ বিশপ, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অ্যাকসেশন কাউন্সিল গঠিত। শনিবার এই কাউন্সিলের সদস্যরা রাজার সার্বভৌম সরকারি বাসভবন সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে এক বৈঠকে মিলিত হন। পরে তাদের উপস্থিতিতে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করা হয়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবারই ঐতিহাসিক এই ঘোষণা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
নতুন রাজা সেন্ট জেমসেস প্রাসাদের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিলেন না। তবে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধ্বে রাজাকে পরামর্শদানকারী জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রিভি কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
পরে প্রিভি কাউন্সিলের ক্লার্ক রিচার্ড টিলব্রুক চার্লসকে ‘রাজা, কমনওয়েলথের প্রধান, বিশ্বাসের রক্ষক’ ঘোষণা করেন। তার আগে সৃষ্টিকর্তা রাজাকে রক্ষা করুন বলে ঘোষণা দেন তিনি।
চার্লসের ঘোষণাটি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ, উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট, ওয়েলসের কার্ডিফ এবং অন্যান্য শহরে জনসমক্ষে পাঠ করা হবে।
ব্যক্তিগত ঘোষণায় রাজা চার্লস বলেছেন, আমার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে এবং তার জন্য আমি এখন আমার বাকি জীবন উৎসর্গ করছি। আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নির্দেশনা ও সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করছি।
ঘোষণায় ব্রিটেনের নতুন এই রাজা বলেন, তার মায়ের মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার এই কাজ জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক এক দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমি জানি আপনারা, সমগ্র জাতি এবং আমার মনে হয় আমি সমগ্র বিশ্বকে বলতে পারি, আমরা সবাই যে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তাতে আপনারা আমার প্রতি কতটা গভীরভাবে সহানুভূতিশীল।
‘আমার বোন এবং ভাইদের প্রতি এত মানুষ সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, যা আমার জন্য সবচেয়ে বড় সান্ত্বনার।’
ব্রিটনের নতুন রাজা ঘোষণার ঐতিহাসিক ওই অনুষ্ঠানে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরন, গর্ডন ব্রাউন, টনি ব্লেয়ার এবং জন মেজরসহ প্রিভি কাউন্সিলের অন্তত ২০০ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আর রাজা ঘোষণার অনুষ্ঠান ও অন্যান্য প্রক্রিয়া জনসাধারণকে দেখানোর জন্য রীতি ভেঙে এবারই প্রথম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশও দিয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস।