এম.এইচ মুরাদঃ
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে ডলারের বিরপীতে মুদ্রার মান কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক রেটের চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজেরেও বেশি ডলারের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যবধান আরও বেড়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো তার চেয়ে ৭/৮ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে।
ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক করেছে ৯৪ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আর বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রইম ব্যাংক ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। খোলাবাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার অবশ্য ৯৬ টাকায় নেমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯মে পর্যন্ত) ৫৫০কোটি (৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর। খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত থাকে না। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চারটি তদন্ত দল মাঠে নেমেছে। তারা ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করতে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত সরকারও ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। সবশেষ বৃহস্পতিবারও রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া বড় দরপতন করেছে রুপির। এখন ডলার ভারতীয় রুপির বিনিময় হার হচ্ছে প্রায় ৭৮ রুপি। এক বছর আগে ২০২১ সালের ১৯মে ছিল ৭৩ রুপির কিছু বেশি। এ হিসাবেই ডলারের বিপরীতে রুপির মান কমেছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, পিটিআই ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণায় নিরাপদ বিনিয়োগের শঙ্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উচ্চ সুদের হারের শঙ্কায় বাজারে রুপির এমন দরপতন হয়। রুপির আরও দরপতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান খানিকটা কমেছে। তারপরও বাংলাদেশি মুদ্রার মান পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দ্বিগুণ। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের জন্য ৮৫ টাকা ২০ পয়সা গুনতে হয়েছে। আর প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ১৬৬ দশমিক ৭৭ পাকিস্তানি রুপি।