এম.এইচ মুরাদঃ
মৃত্যুর দূত করোনাভাইরাস রোজার আমেজ কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে চিন্তা-চেতনা, কর্ম পরিকল্পনা, জীবন-জীবিকা ও আশা আকাঙ্খাও। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবু ঈদ বলে কথা। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। নতুন কাপড় পরে ঈদের নামাজ আদায় করার পর কোলাকুলি; এমন আত্মতৃপ্তি আর পাবার নয়। নতুন জামা কাপড় ক্রয় করার মত সুযোগ নাই বললেই চলে। কারণ ব্যবসায়ী সমিতিরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কেট শপিংমল না খোলার পক্ষে। ঈদ আসে বছরে একবার। বিশেষ করে রোজার ঈদে জামা-কাপড়ের চাহিদা থাকে একটু বেশি। হয়তো বা পুরুষদের এবার শৈল্পিক, খাদি বা আড়ং থেকে কিনতে পারছে না পছন্দের পাঞ্জাবিটা। মায়েরা কিনতে পারছে না জামদানী, কাতান ও সিল্কের কাজ কার শাড়ী। মেয়েরা কাপড় কিনে পছন্দ মতে সেলাই করতে পারবে না থ্রি পিচ্। এ যেন নিজের পছন্দের উপর নেমে এসেছে করোনার ছায়া।
তাই মানুষের চাহিদা পূরণ করতে জামা-কাপড়, জুতো, পাঞ্জাবি, শাড়ী, গহনা ইত্যাদি বিক্রি করতে অনলাইনে পসরা সাজিয়ে বসেছে দারাজ,পাঠাও, সহজ, ফুডপান্ডাসহ ফাস্ট ডেলিভারি নামের প্রতিষ্ঠানগুলো। এরা নিজেদের পন্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী দের পন্য ডেলিভারিতে সাহায্য করে।
তথ্যমতে, বাংলাদেশে ই-কমার্স বাড়ছে খুবই দ্রুত। গত তিন বছর ধরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় একশ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে এই খাত। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে সাড়ে ৭শ’র মতো প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। অনলাইনে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো পণ্য সম্পর্ক জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর লেনদেন হয়ে গেলে রাইডাররা পণ্য নিয়ে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট ঠিকানায়।
জিইসি’র বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার মধ্যে মার্কেট না খোলার পক্ষে ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত খুবই উত্তম। তবুও ঈদ বলে কথা, টুকটাক কিছুতো কেনাকাট করতে হবে। এখন অনলাইন শপিংই একমাত্র ভরসা।
দারাজের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ইনজামাম নাভিন বলেন, আমাদের সাথে অন্তত ১হাজার বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাবসা করেন। যার মধ্যে ৭০ ভাগই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমরা তাদের জন্য কমিশন চার্জ করছি না, যাতে তারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারেন।
পাঠাও চট্টগ্রাম জনসংযোগ কর্মকর্তা নাবিলা মাহমুদা বলেন, করোনার পর থেকে আমাদের সেল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।এখন মার্কেট বন্ধ থাকায় ঈদের শপিং এ আমাদের অনেক অর্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনলাইনে তো প্রতারণার অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে ফাস্ট ডেলিভারির ইনচার্জ রেজাউল আলম বলেন, প্রতারণা আছে তবে তা শতকরা হিসেবে অনেক কম৷ আমরা ক্রেতাদের ৭ দিন সময় দিই,যেন কোনো সমস্যা হলে ক্রেতারা পন্যটি পরিবর্তন করতে পারেন। তাছাড়া অন্যান্য ই- কমার্সে প্রতারণা হলে ক্রেতাদের কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার ফোরাম এবং ইক্যাব-এ অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম এর সহকারি পরিচালক মো.হাসানুজ্জামান বলেন, করোনার কারণে অনলাইনে কেনাবেচা অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেকে আবার প্রতারিত হচ্ছে। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো যখন পণ্য কিনবেন দেখেশুনে পণ্য অর্ডার করবেন, তারপরও কেউ প্রতারিত হলে আমদের কাছে অভিযোগ করতে পারবে।