স্টাফ রিপোর্টারঃ
ইলিশ শিকারের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে
ইলিশের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। মাছ বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করায় এবার দেশে ইলিশ শিকারের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে। চলতি বছর ত্রিশ হাজার কোটি টাকা দামের ছয় লাখ টন ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মাছ বিষয়ক সংস্থাগুলোর গবেষক এবং জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ ছিল। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। মাছ বড় করার জন্য মাছ শিকার বন্ধ রাখার সরকারি এসব সিদ্ধান্তকে ‘বড় সিদ্ধান্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সরকারকে কোটি কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করতে হয়েছে জেলে পরিবারগুলোকে। সাগরে যেতে না পারা জেলেরা নানাভাবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে কয়েক বছর ধরে। এর সুফল মিলতে শুরু করেছে। সাগরে দেখা মিলেছে বড় ইলিশের। অপরদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে দুই মাসের বেশি নৌ চলাচল বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকে নদী দূষণের জন্য দায়ী অনেক কলকারখানা। এসবের সুফল হিসেবে বাজারে দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ ধরা পড়ছে।
২৩ জুলাই রাত থেকে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। প্রথম থেকেই জেলেদের জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। ফিশারিঘাটসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় ঘাটে বড় ইলিশের ছড়াছড়ি। সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে উৎসবের আমেজ চলছে। ওখানকার উপকূলীয় ঘাটগুলোতে প্রচুর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। সাগরপাড় থেকেও ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বড় ইলিশ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে খুশী।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, মৎস্য সেক্টরের অবস্থা পাল্টে গেছে। একেবারে নিভৃতে একটি বড় বিপ্লব হয়েছে। দিনের পর দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ রাখা, জেলে পরিবারগুলোকে সহায়তা দিয়ে জাটকা নিধনে নিরুৎসাহিত করার সুফল মিলছে। বহু বছর পর চট্টগ্রামের মাছের বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, ফিশারিঘাটে পাইকারি বাজারে সাতশ থেকে আটশ টাকার মধ্যে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে এক হাজার টাকা কেজি দরে ১২শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী আজাদীকে বলেন, মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকার অনেক বড় বড় কাজ করেছে। বহু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা রাতে-দিনে নানাভাবে কাজ করেছি। আমাদের কষ্টের সুফল অবশ্যই মিলবে। মাছের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৮৮ টন ইলিশ ধরা পড়ে। চলতি অর্থবছরে ইলিশের পরিমাণ ৬ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতি কেজি মাছের দাম পাঁচশ টাকা হলে চলতি অর্থবছরে শিকার হওয়া ছয় লাখ টন মাছের দাম কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা হবে।
বর্তমানে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। দশ বছর পর এসে গত বছর উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ টনের বেশি। এবার তা ছয় লাখ টনে উন্নীত হলে বাংলাদেশে বিশ্বের ৮৫ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হবে।
মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ রাষ্ট্র উল্লেখ করে মৎস্য অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারা ধরে রাখতে জেলে পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের বড় ভূমিকা রয়েছে। শুধু ইলিশ নয়, অন্যান্য মাছের উৎপাদনও অতীতের রেকর্ড ভাঙবে।
মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামালউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাগর এবং নদীতে মাছের প্রজনন সময়টা নির্ঝঞ্ঝাট করার সরকারের উদ্যোগের কারণে এই অর্জন সম্ভব করছে।