স্টাফ রিপোর্টারঃ
সরকারের সুদ ভর্তুকির আওতায় শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক। একজন গ্রাহকের প্রাপ্য ঋণ একবারের পরিবর্তে এখন তিন বছরে নেওয়া যাবে। অর্থাত্ ২০১৯ সালের চলতি মূলধন ঋণ স্থিতির যে ৩০ শতাংশ তিনি পাবেন, তা তিন বছর ধরে নিতে পারবেন। প্রথম বছরেই অধিকসংখ্যক গ্রাহককে ঋণসুবিধা দেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের নির্দেশনায় আংশিক সংশোধনী এনে গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজেরে আওতায় ঋণ বিতরণ বিষয়ে গত এপ্রিল মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, এ প্যাকেজের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে কোনো গ্রাহক এ প্যাকেজের আওতায় একবারের বেশি সুবিধা নিতে পারবেন না। এই নির্দেশনা সংশোধন করে তিন বছরে সুবিধা নেওয়া যাবে বলে নতুন নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালার আলোকে, শিল্প ও সেবা খাতে একটি প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যে পরিমাণ স্থিতি থাকবে, তার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ সুদ ভর্তুকির আওতায় ঋণ দেওয়া যাবে। আর নতুন গ্রাহকের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা অনুমোদিত হলে তার মধ্যে ৩০ টাকা এই সুবিধার আওতায় দেওয়া যাবে। বাকি ৭০ টাকার বিপরীতে পুরো সুদ গ্রাহক থেকে আদায়যোগ্য হবে।
গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ প্যাকেজ থেকে মোট ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই গত ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক চলতি মূলধন ঋণ বাবদ মঞ্জুরি সীমার ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। নতুন ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রেও চলতি মূলধন ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি এ সুবিধার আওতায় দেওয়া যাবে না। আর সাধারণভাবে এ প্যাকেজের আওতায় গ্রাহকপর্যায়ে প্রতিটি ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ এক বছর। তবে প্রাপ্য ঋণের সমপরিমাণ অর্থ কোনো গ্রাহকের অনুকূলে এক বছরে দেওয়া সম্ভব না হলে বাকি অর্থ আলোচ্য প্যাকেজের অবশিষ্ট মেয়াদের মধ্যে ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে। ব্যাংক থেকে যেভাবেই ঋণ দেওয়া হোক (এককালীন অথবা প্যাকেজের মেয়াদে একাধিক বছরে প্রদত্ত হয়ে থাকলে) একজন গ্রাহকের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্ধারিত সীমার ওপর সুদ ভর্তুকি দেবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, শিল্প ও সেবা খাতের ঋণ প্যাকেজ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ঐ প্রতিষ্ঠানসমূহকে গতিশীল ও পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চলতি মূলধন ঋণসুবিধা দেওয়ার জন্য নতুন করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য সব নির্দেশনা অপরিবর্তি থাকবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে কেউ এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে আগের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না। আবার কোনো ব্যাংকের ঋণখেলাপি বা খেলাপি ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতপশীল করেছেন তারও সুবিধা পাবেন না।
করোনা ভাইরাসে ক্ষতির প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন খাতের জন্য ১ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্রণোদনার বেশির ভাগই সরকারের সুদ ভতুর্কির আওতায় ব্যাংকগুলো ঋণ দেবে। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন ঋণ দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো এই ঋণের বিপরীতে ৯ শতাংশ সুদ পাবে। এই সুদের অর্ধেক তথা সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহক থেকে আদায় করা হবে। আর ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করতে হবে। এর বিপরীতে ১৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন পাবে ব্যাংক।