স্টাফ রিপোর্টার:
নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) এবারও ‘উই-জয়ী’ পুরস্কার ও সম্মাননা দিয়েছে। ৬ ও ৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ উই সামিটের সমাপনী দিন (শনিবার) ২০ জন নারীর হাতে এই পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এই পুরস্কার তুলে দেন।
উইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট এবং এবারের উই সামিটের আহ্বায়ক নাসিমা আক্তার নিশার সভাপতিত্বে উই জয়ী অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, সিসিএ এর কন্ট্রোলার এ টি এম জিয়াউল ইসলাম, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার, দারাজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) খন্দকার তাসফিন আলম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি বলেন, নারীরা সমাজের অর্ধেক। এই অর্ধেককে এগিয়ে নিতে না পারলে, তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে না পারলে কোনো দেশই এগিয়ে যেতে পারবে না। নারীরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। তাই তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। নারীদের এগিয়ে নিতে সেইসব সহযোগিতাসহ নানা উদ্যোগে এগিয়ে যাচ্ছে উই।
উইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ‘প্রতিবছরই সামিটের সময় উই-জয়ী পুরস্কার প্রদান করে। এবার দেশের বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা ১০ জন নারীকে জয়ী সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উইয়ের সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ নারী উদ্যোক্তাকে জয়ী পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।’
নিশা জানান, উইয়ের পাঁচজন এবং বাইরের পাঁচজন-এই ১০ জনের সমন্বয়ে জুরি বোর্ড গঠন করে পুরস্কার চূড়ান্ত করা হয়। জয়ী পুরস্কারের জন্য উই সদস্যদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে তথ্য জানাতে হয়। এরপর যাচাই–বাছাই করে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিজয়ী নির্ধারিত হয়ে থাকে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তাদের যে কল্যাণ হয়েছে তা উইয়ের অগ্রণী ভূমিকার মাধ্যমে হয়েছে। আমাদের এখন প্রয়োজন বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের সফলতাকে তুলে ধরে বিশ্বজুড়ে ব্র্যান্ডিং করা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, স্মাট সিটিজেন হতে হলে নারীদের স্মার্ট হতেই হবে। আমাদের নারীদের শক্তিকে যদি সঠিক ব্যবহার করতে না করতে পারি, অর্থনীতিকে কখনোই শক্তিশালী করা সম্ভব নয়, তাই তাদের শক্তিশালী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
সিসিএ এর কন্ট্রোলার এ টি এম জিয়াউল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যে প্ল্যাটফর্মটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো, এখন সেটি দেশের ১০ লাখের অধিক সংখ্যক নারীর একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সাথে উইয়ের অগ্রযাত্রাও অব্যহত রাখার প্রত্যাশা করেন।
দারাজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) খন্দকার তাসফিন আলম বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে নারীদের গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরেন। আগামীতে উইসহ নারীদের নানা উদ্যোগের সাথে থাকার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উই এর পরিচালক ঈমানা হক জ্যোতি। তিনি আয়োজনকে সফল করার পেছনে সকল অংশগ্রহণকারী ও পার্টনারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
জয়ী সম্মাননা পেলেন যাঁরা
অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব শ্রেণিতে এ বছর জয়ী পুরস্কার পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও শিক্ষাবিদ প্রয়াত পান্না কায়সার। সাংবাদিকতায় দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বর্ষসেরা করপোরেট লিডার শ্রেণিতে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী, স্বাস্থ্যসেবায় বর্ষসেরা উদ্ভাবক হিসেবে লাইফস্প্রিংয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও সেক্সুয়াল মেডিসিনের প্রধান ডা. সুষমা রেজা, বর্ষসেরা সামাজিক প্রভাবক শ্রেণিতে বিশ্বব্যাংকের বেসরকার খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস, বর্ষসেরা ই-কমার্স পথিকৃৎ হিসেবে বিক্রয় ডটকমের সিইও ঈশিতা শারমীন, বর্ষসেরা এফ–কমার্স শ্রেণিতে স্টিডফাস্ট ক্যুরিয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান জয়ীরিয়া মোস্তারি, বর্ষসেরা শিক্ষা প্রভাবক শ্রেণিতে টেন মিনিট স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মুনজেরিন শহিদ, বর্ষসেরা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শ্রেণিতে মঞ্চকর্মী, অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক হৃদি হক এবং বর্ষসেরা সামাজিক প্রভাবক শ্রেণিতে জয়ী পুরস্কার পেয়েছেন উইমেনস ওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা ফারনাজ আলম।
জয়ী পুরস্কার পেলেন যাঁরা
উইয়ের উদ্যোক্তা সদস্যদের মধ্যে ১০ জন এবার জয়ী পুরস্কার পেয়েছেন। বিজয়ীরা হলেন ফ্যাব্রিকার্টের আকসা হৈম (বর্ষসেরা উদ্যোক্তা), নুকি শপ বিডির জান্নাতুল ফেরদৌস (বর্ষসেরা স্থানীয় পণ্য), ত্রিরত্নের শাহিদা মনোয়ার (বর্ষসেরা অনুপ্রেরণা), ই-হাটবাজারের রাওয়াওদা তানজিদা (স্পিরিট অব দ্য ইয়ার), কাব্যকন্যার নাশিদ আন্দালিব (বর্ষসেরা উদীয়মান তারকা), রূপবানের শিমুল বিল্লাহ খান মজলিশ (বর্ষসেরা উদ্ভাবন), ফারহানাস ড্রিমের ফারহানা আক্তার (বর্ষসেরা সামাজিক উদ্যোক্তা), ওয়াজেদাস কালেকশনের পারভিন বেগম (বর্ষসেরা রপ্তানিকারক), স্বপ্নচূড়ার ইশরাত জাহান (বর্ষসেরা প্রচারণা) এবং কুকমাসালার ফেরদৌস আক্তার (বর্ষসেরা ব্যবসা)।
উই সামিটের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে জয়ী পুরস্কার ও সম্মাননা বিজয়ী প্রত্যেককে সম্মাননা স্মারক (ক্রেস্ট), উত্তরীয়, সনদ এবং উপহার প্রদান করা হয়।
এর আগে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় এমপাওয়ারিং উইমেন থ্রে ডিজিটাল এন্টাপ্রেনিউরশিপ শীর্ষক কর্মশালা। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মনির হাসান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক রাজশাহী প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এ এম ফজলুল হক এবং ডিজিটাল এন্ট্রপ্রেনরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সোয়াতি শারমিন।
হঠাৎ করে উদ্যোক্তাদের ফেসবুক পেইজ হারিয়ে যাওয়া বিষয়ে বক্তব্য দেন। মনির হাসান বলেন, ফেসবুক পেইজ নিয়ে এখন উদ্যোক্তাদের সতর্ক থাকতে হবে।