প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য অবদান রাখছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। বিশ্বমানের হাসপাতালটিতে দেশের নামি-দামি চিকিৎসকের পাশাপাশি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
স্বল্প খরচে অপারেশন ও ক্যান্সারের চিকিৎসাসহ জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসা সেবার কারণে হাসপাতালটি ইতোমধ্যে এশিয়া মহাদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।
সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও কলেজের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা এ কলেজটি এমবিবিএস কোর্স করছে।
জানা যায়, শাহান শাহে তরিকত-বুজর্গ পীর খাজা বাবা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) জীবিত থাকাকালীন তার অনুসারীদের নিয়ে (বর্তমান হাসপাতাল এলাকা) যমুনা পাড়ে ঘুরতে আসেন। সেখানে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের।
সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য ১৯৯৬ সালে বিটিএমসির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান ও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের এমডি প্রয়াত ডা. এম এম আমজাদ হোসেন খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) নির্ধারিত এনায়েতপুর সৌদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের এক পল্লীতে ৯০ একর জায়গার উপর খাজা ইউনুস আলী (রঃ) নাম অনুসারেই একটি হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রায় ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালের ১৭ মে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সৌদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের ৩শ বিঘা জমির উপর নির্মিত এ হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
অনন্য স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি করা হয় ৬১টি ভবন। এর মধ্যে রয়েছে ৫শ বেডের হাসপাতাল ভবন, সুবিশাল ইনডোর ভবন, মেডিকেল কলেজ, ইউনিভার্সিটি, নার্সিং ইন্সটিটিউিট, ক্যান্সার ইন্সটিটিউিট, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা হোস্টেল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস ভবন, সুবিশাল আবাসিক হোটেল ও আধুনিক মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা।
শুরু থেকেই এখানে ক্যান্সারসহ ১৭টি ইউনিটে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে গত ২০০৬ সালে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য লিনিয়ার এক্সিলেরেটর (লিনাক) মেশিন আনা হয়। ওই মেশিনটি গত ২০০৭ সালে চালুর মাধ্যমে বিশ্বমানের ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম চালু হয়। চালুর পর থেকেই সেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয়।
এখানে ক্যান্সার রোগের জন্য কেওয়াইএএমসিএইচ বিভাগে ক্যান্সারের চিকিৎসা ছাড়াও রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার ও থেরাপি সার্জারি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ, কার্ডিওলজি বিভাগ, ইউরোলজি বিভাগ, গাইনি ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ, শিশু বিভাগ, চর্ম ও যৌন বিভাগ, অর্থোপেডিকস বিভাগ, গ্যাস্ট্রো অ্যান্টারোলজি বিভাগ, এক্সোইনোলোজি বিভাগ, নাক কান গলা বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, নিউরো সার্জারি বিভাগ ও দন্ত বিভাগ।
১৭টি বিভাগেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসা প্রদান করছেন দেশি-বিদেশি শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেডিয়েশন অনকোলজি (ক্যান্সার) বিভাগে বিশ্বমানের প্রযুক্তির দ্বারা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি ও ব্রে-থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কেমোথেরাপির জন্য এখানে রয়েছে বিশ্বমানের সিরিঞ্জ পাম্প, মেডিসিন ও ইনজেকশনের ব্যবস্থা। রেডিও থেরাপিতে কনভেনশনাল থ্রিডিসিআরটি, আইজিআরটি, আইএমআরটি, এসআরএস, এসআরটিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিতে এখানে ব্রেকি থেরাপি দেয়া হচ্ছে। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে ক্যান্সার রোগীদের ব্রেকি থেরাপির জন্য সময় লাগে ১৫/২০ ঘণ্টা, সেখানে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাত্র ৩ মিনিটে এই থেরাপি প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসা পেতে সময় অনেক কম লাগলেও অর্থ লাগছে অনেক বেশি। তারপরেও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা দেশে না থাকায় তাদের বাধ্য হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সবদিক থেকে এ হাসপাতালটি উন্নত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হলেও অনেক রোগীদের মতে, এ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় এতটাই বেশি যে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য তা বহন করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
আরো জানা যায়, খাজা ইউনুস আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় সহস্রাধিক নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছে। হাসপাতালটিতে শতকরা ১০ ভাগ গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। একইভাবে মেডিকেল কলেজে শতকরা ৫ ভাগ দরিদ্র কোঠা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এখানে এমবিবিএস কোর্স ছাড়াও উচ্চতর ডিগ্রি এমফিল ও এমডিএম কোর্স চালু করা হয়েছে।
ভারত-নেপাল ও বাংলাদেশের ৫শ ছাত্র-ছাত্রী এখানে লেখাপড়া করছে। খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এন.এম. হায়দার হোসেন। তবে হাসপাতাল-কলেজ এরিয়া সম্পূর্ন সুরক্ষিত থাকায় সাধারণের প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। এমনকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াও তথ্য সরবরাহেও কঠোরতা অবলম্বন করা হয়।
খাজা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম.এ রাব্বি জানান, মেডিকেল কলেজে উচ্চতর ডিগ্রিসহ আরো কয়েকটি কোর্স চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালটি আরো আধুনিকায়নে কাজ চলছে। গরিব রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ইউনাভার্সিটিতে বর্তমান ১৫টি কোর্স চালু রয়েছে। আরো কোর্স চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।